সোমবার, ১০ই জুলাই, ২০১৭ ইং ২৬শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

গতি পাচ্ছে না পিপিপি

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ৩১, ২০১৪

---

বিপুল জনগোষ্ঠীর এ দেশে সীমিত সম্পদ নিয়েই সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয়। সরকারের একার পক্ষে অনেক ব্যয়ভার বহনই কঠিন। পাঁচ বছর আগে সরকার তাই চেয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, সড়ক ও রেলপথ, বন্দর এবং বড় বড় সেতু নির্মাণে সরকারের সঙ্গে এগিয়ে আসুক বেসরকারি খাতও।

অর্থাৎ, বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে। পিপিপি হচ্ছে এমন এক দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারি ব্যবস্থা, যেখানে জনগণকে সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করে থাকে। এতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের চুক্তি হয় বা সেবা তৈরির জন্য বেসরকারি খাতকে সরকার নিবন্ধন দিয়ে থাকে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, অবকাঠামো উন্নয়নে বিশ্বের পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর ১০টির মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। কয়েক বছর আগে বিশ্ব প্রতিযোগিতা সক্ষমতা জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। তাঁর মতে, কাজে লাগাতে পারলে অবকাঠামো উন্নয়নের মোক্ষম অস্ত্র হতে পারে পিপিপি।

কিন্তু, বেসরকারি খাতকে কোনোমতেই আকৃষ্ট করতে পারছে না সরকারের এই পরিকল্পনা। পাঁচ বছরে (২০০৯-২০১৩) পিপিপি-সংক্রান্ত আইনও করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে পিপিপির জন্য প্রতিবছর বাজেটে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকছে। কিন্তু, তা খরচ আর হচ্ছে না।

২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে পাঁচ বছরের মধ্যে এক লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা পিপিপি উদ্যোগ থেকে পাওয়া যাবে বলে আশার কথা শুনিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পাঁচ বছর শেষ। অর্থমন্ত্রীর সেই আশা আর পূরণ হয়নি।

পিপিপি প্রকল্পের জন্য কারিগরি সহায়তার বন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছে। ২০১২ সালে গঠন করা হয়েছে ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফাইন্যান্সিং (ভিজিএফ) নামক একটি তহবিল। বাণিজ্যিকভাবে আপাতত অলাভজনক কিন্তু উন্নয়ন ও জনসেবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ—পিপিপির এমন প্রকল্পকে সহায়তা দেওয়ার জন্য করা হয় ৩০০ কোটি টাকার এই তহবিল। এখান থেকেও কোনো অর্থ খরচ হয়নি।

আওয়ামী লীগের আগের দফার প্রথমবার, অর্থাৎ ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে পিপিপিকে ‘নব উদ্যোগ বিনিয়োগ প্রয়াস’ নামে উপস্থাপন করে আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখেন অর্থমন্ত্রী। এর পর থেকে প্রতিবছর তিন হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। কিন্তু খরচের খাতা শূন্য। কারণ, বেসরকারি খাত এগিয়ে আসছে না।

এগিয়ে না আসার কারণ হিসেবে উদ্যোক্তারা প্রধানত দায়ী করছেন পিপিপি আইন না থাকার বিষয়টিকে। সরকারের দিক থেকে অবশ্য একে অজুহাত হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘পিপিপির মাধ্যমেই রাজধানীতে মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক হয়েছে। আইন ছাড়াই এটি হয়েছে। উদ্যোক্তারা চান দ্রুত মুনাফা। এটা একটা সমস্যা।’

ঢাকার বনানীতে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে উড়ালসড়ক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড। কোম্পানিটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মহিউদ্দিন মোনেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিপিপির ব্যাপারে বেসরকারি খাত এখনো ততটা আকৃষ্ট নয়। কারণ, সরকার এখনো পিপিপি আইনই করতে পারেনি।’ আইন না থাকলে উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থার অভাব থাকে বলে তিনি মনে করেন।

পিপিপির খসড়া আইনে বেসরকারি খাতের অধিকারকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্য আইনে যা-ই থাকুক না কেন, পিপিপি আইনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এতে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের পিপিপি ইউনিট সূত্র জানায়, পিপিপি আইনের ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা (ভেটিং) শেষ। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটি এখন মন্ত্রিসভার বৈঠকে যাবে। তার পর যাবে সংসদে।

তবে এই আইনের জন্য কোনো কিছু আটকে থাকার কথা নয় বলে মনে করেন অর্থসচিব ফজলে কবির। তিনি জানান, বিদ্যমান পিপিপি নীতিমালা ও কৌশল, ২০১০; পিপিপি কারিগরি সহায়তা অর্থায়ন নীতিমালা, ২০১২ (পিপিপিটিএএফ) এবং পিপিপিটিএএফ কর্মসূচি, ২০১২-এর আওতায়ও পিপিপি উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব।

কীভাবে কাজ হয়: নির্মাণ, মালিকানা, পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওওটি); নির্মাণ, পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওটি) এবং নির্মাণ, মালিকানা ও পরিচালনা (বিওও)—পিপিপির এ তিনটি পদ্ধতি প্রচলিত।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে আছে ‘পিপিপি কার্যালয়’। প্রকল্প বাছাই থেকে শেষ হওয়ার পর তদারকি পর্যন্ত করার দায়িত্ব এ কার্যালয়ের। পিপিপির জন্য এ কার্যালয় রেল, বন্দর, সড়ক ও জনপথ, বিদ্যুৎ, বন্দর, শিল্প, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি খাতকে নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে সেতু, নৌপরিবহন, স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ, সড়ক, আবাসন, মৎস্য খাতের ৩৪টি প্রকল্পের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। অর্থমন্ত্রী এ কমিটির সভাপতি। বাজেট বক্তব্যে চলতি অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী ৪৪টি প্রকল্পের কথা জানিয়েছিলেন।

পিপিপি কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আফসর এইচ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক উত্তমকুমার কর্মকার গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবকাঠামো উন্নয়নে পিপিপির বিকল্প নেই। আসলে পদ্ধতিটা নতুন বলে সময় লাগছে।’

পিপিপির উদ্যোগ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি হয় এবং এ থেকে আয়ও আসে দেরিতে—এ কথা উল্লেখ করে উত্তমকুমার বলেন, ‘পিপিপির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সংস্কৃতিটা শুরু হয়ে গেলে সাফল্য শুধু সময়ের ব্যাপার।’

অর্থ বিভাগের শীর্ষপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পও পিপিপি। কিন্তু বিদ্যুৎ যেহেতু সরকার কিনছে, তাই উদ্যোক্তারা এ খাতে বিনিয়োগে বেশি উৎসাহী।’

পিপিপি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ৫০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার হবে এর দৈর্ঘ্য। প্রকল্পটি বর্তমানে কাজ শুরুর অপেক্ষায়৷

এদিকে, মংলা বন্দরে দুটি জেটি নির্মাণ, জাতীয় কিডনি ডিজিজ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউট এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে দুটি হেমোডায়ালিসিস কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব মূল্যায়নের কাজ চলছে।

কালিয়াকৈরে উচ্চ তথ্যপ্রযুক্তি (হাইটেক) পার্ক ও ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দরপত্র মূল্যায়নের কাজ শুরু হয়েছে।

সমাজের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য ‘অবসর’ নামে একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তৈরি এবং শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি স্বয়ংক্রীয় নজরদারি ব্যবস্থা চালুর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে ১১টি প্রকল্প প্রস্তাবের।

 এগিয়ে না আসার কারণ হিসেবে উদ্যোক্তারা প্রধানত দায়ী করছেন পিপিপি আইন না থাকার বিষয়টিকে। সরকারের দিক থেকে অবশ্য একে অজুহাত হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

 ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে পিপিপিকে ‘নব উদ্যোগ বিনিয়োগ প্রয়াস’ নামে উপস্থাপন করে আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখেন অর্থমন্ত্রী। এর পর থেকে প্রতিবছর তিন হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। কিন্তু খরচের খাতা শূন্য

এ জাতীয় আরও খবর