বৃহস্পতিবার, ৬ই জুলাই, ২০১৭ ইং ২২শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

হারানোর পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ১৮, ২০১৭

---
রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে নওগাঁ জেলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলায় এখনো কিছু মৃৎশিল্পীরা তাদের এই পূর্বপুরুষদের পেশাটি ধরে রেখেছেন। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। এক সময় এই শিল্পের কদর থাকলেও বর্তমানে তা হারিয়ে গেছে প্রযুক্তির উন্নতির কারণে।
নওগাঁ জেলার ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী দাঁড়িয়ে থাকা ভবানীপুর পালপাড়া যেন শিল্পীর তুলিতে আকাঁ একটি স্বর্ণালী ছবি। আত্রাই উপজেলার রাইপুর, মিরাপুর, সাহেবগঞ্জ, বহলা, পাঁচুপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য কুটিরের নয়নাভিরাম মৃৎশিল্পীদের বাসস্থান।
রাণীনগর উপজেলার খট্টেশ্বর রাণীনগর, আতাইকুলা, হরিশপুর, গহেলাপুরসহ প্রভৃতি গ্রাম মৃিশল্পের প্রাণকেন্দ্র ছিল। এসব গ্রামের ন্যূনতম ছয় হাজার মৃৎশিল্পী কাজ করত। তারা সুনিপুণভাবে হাঁড়ি, পাতিল, বাসন-কোসন, ঢাকনা, চারাকলকে, পেয়ালা, পানি রাখার সড়িসহ প্রভৃতি তৈরি করতো।
এক সময় এই দুই অঞ্চলের গ্রামগুলো মৃৎশিল্পের জন্য খুবই বিখ্যাত ছিল। এই এলাকাগুলো তৈরি মৃৎশিল্পের মনকাড়া পণ্যগুলো চালান হতো দেশের বিভিন্ন স্থানে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন নতুন শিল্প সামগ্রীর প্রসারের কারণে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুকূল বাজারের অভাবে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো জেলার এই দুই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নিয়োজিত মৃিশল্পীদের অধিকাংশ পাল সম্প্রদায়ের। প্রাচীনকাল থেকে ধর্মীয় এবং আর্থ-সামাজিক কারণে মৃৎশিল্পে শ্রেণিভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা মৃৎশিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে।
বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সাথে নিচ্ছেন না। তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর। কিন্তু উপজেলার গ্রামগুলোতেও এখন আর মাটির হাড়ি-পাতিল তেমনটা চোখে পড়ে না। সে কারণে অনেক পুরোনো শিল্পীরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মাটির জিনিসপত্র তার পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবন যাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও মৃৎশিল্পীরা এখনও স্বপ্ন দেখেন। কোন একদিন আবারও কদর বাড়বে তাদের মাটির পণ্যের।
এ ব্যাপারে উপজেলার ভবানীপুর পালপাড়া গ্রামের ধিরেন পাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ করতে হয় তাদের। এছাড়াও জ্তালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উত্পাদন ও বিক্রির সঙ্গে মিল না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
খট্টেশ্বর গ্রামের মিনা পাল বলেন, আমার স্বামী দিনমজুরের কাজ করতে পারে না। তাই লাভ কম হলেও বাপ-দাদার এই পেশাটি আজও ধরে রেখেছি। এখন আমাদের পরিশ্রমেরই দাম পাওয়া যায় না।

এ জাতীয় আরও খবর