আগুনে পুড়ে গেছে এসএসসি পরীক্ষার ৭৭ জনের প্রবেশপত্র : ২০ হাজার শিক্ষার্থীদের সনদপত্র

জানুয়ারি ২৮, ২০১৭

গাইবান্ধা সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চরাঞ্চলের কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া গণউন্নয়ন একাডেমি নামে একটি এনজিওর মাধ্যমিক বিদ্যালয় আগুনে পুড়ে গেছে।

এতে অফিস কক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন ও লাইব্রেরিসহ ১০টি ক্লাস রুম, আসবাবপত্র, শিক্ষা সরঞ্জাম, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার ৭৭ জনের প্রবেশপত্র এবং ২০ হাজার এসএসসি ও জেএসসি পাস শিক্ষার্থীদের সনদপত্রসহ সব আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে।

আগুনের খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে। বিশেষ করে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিদ্যালয়ে আগুন লাগে। মুহূর্তে আগুন পুরো স্কুল ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। ফলে সব পুড়ে যায়।

এ সময় ওই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি পাস করা কয়েকশ’ শিক্ষার্থীর সনদ, বিভিন্ন শিক্ষা সরঞ্জাম ও আসবাব ভস্মীভূত হয়।

এ বিষয়ে গণউন্নয়ন একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চরের শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়ানোর লক্ষে ২০০৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ৫৭৩ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে।

গত ১২ বছরের এই বিদ্যালয় থেকে পাস করা প্রায় ২০ হাজার এসএসসি ও জেএসসি পাস শিক্ষার্থীর সনদপত্র রাখা ছিল অফিস কক্ষের আলমারিতে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার ৭৭ জন পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আলমারিতে রাখা ছিল। সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনের খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে। বিশেষ করে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি স্থানীয় কিছু লোকজন স্কুলের কার্যক্রমে বাধা দিয়ে আসছিল। এছাড়া এলাকায় কিছু ব্যক্তি আরও একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছিল।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামসুল আজম, গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌস জাহান, গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মেহেদী হাসানসহ অন্যরা।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, আগুনে বিদ্যালয়ে রক্ষিত কয়েকশ’ শিক্ষার্থীর এসএসসি ও জেএসসি পাসের সনদও পুড়ে গেছে। যে দুজন এসএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র পুড়েছে, তারা হলো সোহেল রানা ও শাওন ইসলাম।

দুজনই গতকাল বিদ্যালয়ে এসেছিল। তারা জানায়, কয়েক দিন আগে প্রবেশপত্র বিতরণ করা হয়। সেদিন তারা স্কুলে আসতে না পারায় প্রবেশপত্র তুলতে পারেনি। প্রবেশপত্র পুড়ে যাওয়ায় আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া পরীক্ষা নিয়ে তারা চিন্তায় পড়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামসুল আজম জানান, শনিবার থেকেই যাতে এই বিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য নতুন করে প্রবেশপত্র ইস্যুর ব্যবস্থা করা হবে।

গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, বিদ্যালয়টির চারদিকে বসতি। ঘটনাটি রহস্যজনক। নাশকতাও হতে পারে। ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।