বুধবার, ২৮শে জুন, ২০১৭ ইং ১৪ই আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

পাট থেকে সুতা তৈরির পথে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭

---

পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের পর এবার বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পাটের আশকে সুতায় পরিনত করার পথ আবিস্কার করেছেন। জিনবিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের হাত ধরে গড়ে ওঠা বিজ্ঞানীদের দলটি যদি আরো সফলতা পান তাহলে পাট থেকে সুতা তৈরী করা সম্ভব হবে। গত ৩১ জানুয়ারি তাঁদের এই আবিষ্কার প্রকাশ করেছে বিশ্বের শীর্ষ বিজ্ঞান জার্নাল নেচার প্ল্যান্ট।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর দেওয়া ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের তিনটি গবেষণার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া এবং গবেষণাটি নেচার প্ল্যান্ট জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী ২০১০ সালে তোষা পাট, ২০১২ সালে ছত্রাক এবং ২০১৩ সালে দেশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মাকসুদুল আলম মারা যাওয়ার পর ওই গবেষণার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মনজুরুল আলমের নেতৃত্বে গবেষণার পরবর্তী ধাপ শুরু হওয়ার পর এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মনজুরুল আলম জানিয়েছেন, ‘আরও সূক্ষ্ম পাটের আঁশ হবে এমন জাত উদ্ভাবনের পথে আমরা বেশ কিছু দূর এগিয়েছি। এ ধরনের জাত উদ্ভাবনের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
নেচার প্ল্যান্ট জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে লেখক পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি মাকসুদুল আলমের নামও রাখা হয়েছে। জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এই গবেষণার মাধ্যমে তোষা ও দেশি পাটের জিনগত বৈশিষ্ট্য ও মিল-অমিল বের করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ওই দুই পাটের কোনো কোনো জিনগত বৈশিষ্ট্য বদলালে তা তৈরি পোশাকশিল্পে ব্যবহৃত কাপড়ের সুতার মতো সূক্ষ্ম হবে বলে জানা গেছে।
নেচার প্ল্যান্ট জার্নালে ছয় পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপ ও ৩৮ পৃষ্ঠার বিস্তারিত তথ্য-উপাত্তসহ ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্বে মোট ১০০ প্রজাতির পাটজাতীয় প্রাকৃতিক তন্তুর বৃক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক আঁশের ৮০ শতাংশ আসে পাট থেকে। বিশ্বে উৎপাদিত পাটের আর্থিক মূল্য ২৩০ কোটি ডলার।
পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পাট ও তুলার আশের মধ্যে মূল পার্থক্য তৈরি করে লিগনিন নামে একধরনের রাসায়নিক। পাটের আঁশে এটি বেশি থাকায় তা তুলার আঁশের চেয়ে মোটা হয়ে থাকে। ফলে পাটের আঁশের তৈরি সুতা দৈনিক ব্যবহার্য পোশাক বা তৈরি পোশাকের কাপড় তৈরিতে ব্যবহার করা হয় না। পাটের জিনগত বৈশিষ্ট্যের গঠন ও বুনন সম্পর্কে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের ওই নতুন গবেষণায় বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে এখন জিনগত বৈশিষ্ট্যে কোন ধরনের পরিবর্তন আনলে পাটের আঁশ তুলার মতো সূক্ষ্ম হবে, তা জানা গেছে।
এ ব্যাপারে গমের শত্রু জীবাণুর জীবনরহস্য উন্মোচনকারী বিজ্ঞানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও বিশ্বের তৈরি পোশাকের উপযোগী পাটের আঁশ তৈরি করার বিজ্ঞানটি এখন বাংলাদেশের দখলে। ফলে পরবর্তী ধাপ হিসেবে ওই ধরনের নতুন জাত উদ্ভাবন এখন অনেক সহজ হয়ে গেল। ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যেতে পারলে কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের কৃষকদের ওই বিজ্ঞানীরা নতুন জাত উপহার দিতে পারবেন বলে তাঁরা আশা করছেন।
সংসদে মতিয়া চৌধুরী
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, পাটের তিনটি জেনোমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবি আই এই স্বীকৃতি দিয়েছে। গতকাল সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবসম্পর্কিত আলোচনায় কৃষিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, পাটের গবেষণায় উৎসাহিত করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে পাটে এসেছে যুগান্তকারী সাফল্য। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (এনসিবি আই) থেকে তিনটির জেনোমের কোড নম্বর পাওয়া গেছে। এই গবেষণার ফলাফল গত ৩০ জানুয়ারি বিশ্বখ্যাত জার্নাল নেচার প্ল্যান্ট-এ প্রকাশিত হয়েছে। মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

তথ্যসূত্র : প্রথম আলো