বৃহস্পতিবার, ১৩ই জুলাই, ২০১৭ ইং ২৯শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

শহরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আল আমিন : তিতাসের পাড়ে ছিলো আস্তানা

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭

---

আমিরজাদা চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আল আমিনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শহরের আরেক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আনিসুল ইসলাম খোকনসহ ৯ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা হয়েছে। মাদক ব্যবসা নিয়ে দ্বন্ধে আল আমিনকে ওই মাদক ব্যবসায়ীরা হত্যা করে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে পুলিশ বাদী এ মামলার এজাহারে। অন্যদিকে নিহত আল আমিনের পরিবার হত্যার জন্যে পুলিশকে দায়ী করে আরেকটি মামলা করেছে। পুলিশের তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শীর্ষ যে কজন মাদক ব্যবসায়ীর নামে রয়েছে তার মধ্যে আল আমিন (২৮) ছিলো অন্যতম। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে পৌরশহরের মেড্ডাস্থ সরকারি শিশুপরিবার সংলগ্ন একটি খোলা জায়গা থেকে আল আমিনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মাদক ব্যবসায়ীদের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে আল আমিন নিহত হন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ আল আমিনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের কান্দিপাড়া এলাকার জিল্লু মিয়ার ছেলে আল আমিন ছিলো শহরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের একজন। মাদক ব্যবসায় প্রতিদিন বিকাশে ৫/৬ লাখ টাকা লেনদেন করতো আল আমিন ,ড়ি সংলগ্ন তিতাস নদীর তীরেই ছিল তার মাদক আস্তানা। শুধু এ জেলাতেই নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহযোগীদের মাধ্যমে মাদক সরবরাহ করতো সে। আল আমিনের নির্বিঘেœ মাদক ব্যবসায় মদদ ছিলো এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালীর। মূলত সেইসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়াতেই নির্বিঘেœ মাদক ব্যবসা করে আসছিলো সে। এর ফলে এলাকায় অনেকটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে সে। আল আমিনের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় সে কারাভোগও করেছে। কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও মাদক ব্যবসায় লিপ্ত হয় আল আমিন। আল আমিনের মাদক ব্যবসার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে ইতোপূর্বে কান্দিপাড়া এলাকার শত শত উত্তেজিত জনতা তার বাড়ি ও মাদকের আস্তানা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল আমিনের কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, আল আমিন একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার কারণে কান্দিপাড়া এলাকার অনেক যুবক আজ বিপথগামী। সে যেভাবেই মরুক না কেনো, তার মৃত্যুর পর এখন এলাকার মানুষের মাঝে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। সূত্র জানা যায়, আল আমিন প্রতিদিন পৌরশহরের টি.এ. রোডের কয়েকটি টেলিকমের দোকান থেকে বিকাশের মাধ্যমে মাদক ব্যবসার কয়েক লাখ টাকা লেনদেন করতো। আল আমিন নিহত হওয়ার পর তার স্ত্রী তানজিনা বেগম হাসপাতালে সাংবাদিকদের কাছে তার স্বামী এক সময় মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলো বলে স্বীকার করেন। পরবর্তীতে মাদক ব্যবসা ছেড়ে সুপথে ফিরে এসেছিলো বলেও দাবী করে তানজিনা।
সদর মডেল থানা পুলিশ জানায়, গত ৭ই ফেব্রুয়ারি ভোররাতে শহরের মেড্ডা এলাকায় সরকারি শিশু পরিবারের সামনে মাদক ব্যবসায়ীদের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাদক ব্যবসায়ী আল আমিনকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আল আমিনকে মৃত ঘোষণা করে। এছাড়া পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় পাইপাগন, দুই রাউন্ড কার্তুজ ও পাঁচটি ছোরা উদ্ধার করে। এ দিকে, আল আমিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার মা নেছা বেগম বাদী হয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৬ জনকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজহারে বলা হয়, পুলিশ ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বাড়ি থেকে আল আমিনকে ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে। অন্যদিকে সদর মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নারায়ণ চন্দ্র দাস বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় মাদক ব্যবসায়ীদের বন্দুকযুদ্ধে আল আমিনের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এতে শহরের আরেক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আনিসুল ইসলাম খোকনসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আল আমিনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অস্ত্র মামলাটির বাদীও এসআই নারায়ণ চন্দ্র দাস।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঈনুর রহমান বলেন, আল আমিন শহরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের একজন ছিলেন। পুলিশ আল আমিনকে ধরার জন্য অভিযানে গেলেই তিনি নদী পার হয়ে পালিয়ে যেতেন। মাঝে কিছুদিন বন্ধ রাখার পর তিনি আবারও তার মাদক ব্যবসা শুরু করেছিলেন। মাদক ব্যবসার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়েই প্রতিপক্ষের সঙ্গে গোলাগুলিতে আল আমিন নিহত হন বলে জানান ওসি।

 

এ জাতীয় আরও খবর