বৃহস্পতিবার, ২২শে জুন, ২০১৭ ইং ৮ই আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় মিষ্টির ঐতিহ্য ধ্বংসের দিকে, নিন্ম মানের ছানা ও বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর রঙ দিয়ে তৈরী হচ্ছে মিষ্টি

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭

---

তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় মিষ্টি ঐতিহ্য রয়েছে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে। আর সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে সারা দেশব্যাপী। এখানকার খাঁটি দুধের তৈরী মিষ্টি সব শ্রেনীর ভোক্তাদের কাছে সমাদৃত। কিন্তু কয়েক বছর যাবৎত কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজার থেকে পাইকারদের কাছ থেকে নিন্ম মানের ছানা কিনে তৈরী করছে বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি। সম্প্রতি সরজমিনে মহাদেব পট্রি ও সিনেমা হল রোডে ঘুরে দেখা যায়, নামী-দামী কিছু দোকান অন্যদের মত তারাও বাজার থেকে নিন্ম মানের ছানা কিনে দোকানের ফ্রিজে ভরে রেখেছে। দোকানে উপস্থিত ক্রেতাদের আকৃষ্ঠ করতে তাদের দোকানের গ্যাসের চুলায় ২০/৩০ কেজি গরুর দুধ জাল দিচ্ছে। ক্রেতারা যেন মনে করেন তাদের সামনে চুলায় থাকা দুধ দিয়ে উৎকৃষ্ট মানের ছানা তৈরী করা হয়। কিন্তু পর্দার আরালে অন্য কারসাজি। প্রত্যেক বড় দোকান গুলোতে প্রতিদিন প্রায় পাচঁ থেকে সাতঁশ কেজি মিষ্টি গড়ে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি তৈরী প্রধান উপকরণই হচ্ছে ছানা। আর সে ছানাতো অর্ধেকও তাদের গড়ে গরুর খাটিঁ দুধ থেকে তৈরী হচ্ছেনা তাদের দোকানের বাকি ছানা গুলো আসছে কোথায় থেকে এরকম প্রশ্ন অনেক ক্রেতার মনে ? বাজারে থাকা নিন্ম মানের গুড়ো দুধ কিনে গ্রামের বাড়িতে কৌশলে পাইকার তাদের তৈরী করছে ছানা আর সে ছানাই শহরের নামী-দামি দোকানগুলো সহ অনেক ছোট খাটো মিষ্টি দোকান এনে বিক্রি করছে দেদারসে। আর নিন্ম মানের ছানার দিয়ে তৈরী হচ্ছে সুস্বাদু বিভিন্ন লোভনীয় আকৃতির মিষ্টি। যা জনস্বাস্থের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিকেজি মিষ্টি ১৫০টাকা থেকে শুরু সর্ব্বোচ্চ ছানামুখি ৫৫০টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। মানের কোনরকম বালাই ছাড়া চলছে মিষ্টি দোকানগুলো। আবার মিষ্টির সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নিন্ম মানের পাউডার গুড়োঁ দুধ দেওয়া হচ্ছে মিষ্টির উপরে ছিটিয়ে। যা সম্পূর্ণ অস্বাস্হ্যকর। এতে এখানকার মিষ্টির যে ঐহিত্য রয়েছে তা ম্লান হতে চলেছে। এছাড়া বাজারে দাম নিয়েও অরাজকতার অভিাযোগ করেছেন সাধারন ক্রেতারা। কথা হয় মিষ্টি ক্রেতা জাহাঙ্গীর মিয়া, মজিবুর ভূইয়া, ও রোকসানা বেগমের সাথে তারা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মিষ্টি একসময় সারা দেশে খ্যাতি ছিল। আমরা কোথাও বেড়াতে গেলে আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৈরী মিষ্টি নিয়ে যেতাম। কিন্তু এখন আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মিষ্টির ঐতিহ্য পুরোটাই ধংসের পথে। নিন্ম মানের পাউডার দুধ দিয়ে ছানা তৈরী করা হচ্ছে আর সে ছানা দিয়ে তৈরী হচ্ছে মিষ্টি।

যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাড়িঁয়েছে। তারপর যে রকম পারছে দাম রাখছে। এক দোকানে যে মিষ্টি ১৫০টাকা বিক্রি হচ্ছে তা আবার অন্য দোকানে ১৮০টাকা বিক্রি হচ্ছে, ২০০টাকার মিষ্টি বেকারি জাতীয় দোকানগুলো বিক্রি হচ্ছে ২৮০/৩০০টাকায় কেজি তে। যে যেভাবে পারছে দাম রাখছে। দেখবালের নেই কেউ। তাদের দাবী ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামত মূল্যে মিষ্টি বিক্রি করছে। মানা হচ্ছেনা মূল্য তালিকা । ক্রেতাদের অভিযোগ কিছু কিছু দোকানে বাহির থেকে সরবরাহ করা ময়দা মিশ্রিত নিম্নমানের ছানা দিয়ে তৈরী হচ্ছে মিষ্টি। এছাড়া দইয়ের ওজন নিয়েও অভিযোগ রয়েছে তাদের। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক দোকানদার বলছেন, আমরা কাস্টমারকে ঠকাতে চাইনা । প্রতিযোগীতার মার্কেটে টিকে থাকতে কখনো কখনো নির্ধারিত মূল্যেও চেয়ে বেশি দামে মিষ্টি বিক্রি করতে হয়। এ ব্যাপারে রেঁস্তোরা মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক শাহ আলম জানান, মূল্য তালিকার বাইরে কেউ মিষ্টি বিক্রি করলে তার দায় রেস্তোরা মালিক সমিতি গ্রহণ করবেনা। তাছাড়া নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মিষ্টির ঐতিহ্য সারা দেশেই। তার গুণগতমান বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সাথেই কথা বলছি। কোথাও কোন অনিয়ম থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা করতে হবে। এছাড়াও ভোক্তারা দাবী জানান, মান এবং দামের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে হুমকির মুখে পড়বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মিষ্টির ঐতিহ্য।

 

এ জাতীয় আরও খবর