g উপকূলে বাণিজ্যিক কাঁকড়া চাষ বাড়ছে | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বুধবার, ১৮ই অক্টোবর, ২০১৭ ইং ৩রা কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

উপকূলে বাণিজ্যিক কাঁকড়া চাষ বাড়ছে

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭

---

নিজস্ব প্রতিবেদক : চিংড়িচাষে ফসলহানি, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আর আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতনে সর্বস্বান্ত উপকূলীয় চিংড়ি চাষীরা এখন লোনাপানিতে কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন। দেশের বাজারে তেমন চাহিদা না থাকলেও বিদেশে ক্রমশ বাংলাদেশি কাঁকড়ার চাহিদা বাড়ছে। চাষীরা বলছেন, কাঁকড়া চাষে ভাইরাস আক্তান্ত হওয়ার ভয় নেই। নেই বিনিয়োগের ঝুঁকি। প্রক্রিয়াকরণে জটিলতা বা দ্রুত পচনেরও ভয় নেই। চিংড়ির মত পোনা কিনতে হয় না কাঁকড়ার।

জানা গেছে, প্রাকৃতিকভাবেই লোনা পানিতে কাঁকড়া জন্মায়। কাঁকড়ার চাষ ও ফ্যাটেনিং-এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কাঁকড়া ফ্যাটেনিংকেই চাষ নামে অভিহিত করা হয়।

কাঁকড়া সাধারণত মাংসাশী খাবার শামুক, ঝিনুক, চিংড়ি ও অন্যান্য কাঁকড়া এবং মাছ খেতে পছন্দ করে। এ অঞ্চলে শামুক-ঝিনুকের অপর্যাপ্ত প্রাপ্যতা এবং ট্রাশফিশ সহজলভ্য না হওয়ায় চাষীরা ফ্যাটেনিংয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত কাঁকড়ার খাবার হিসেবে তেলাপিয়া মাছ ব্যবহার করেন।

দেশে দুই ধরনের কাঁকড়া পাওয়া যায়। একটি লোনাপানির, অন্যটি মিঠাপানির। মিঠাপানির কাঁকড়া তুলনামূলক কম। লোনাপানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ যত বেশি থাকবে, কাঁকড়ার উপাদানও তত বেশি হবে। দক্ষিণাঞ্চলের নদীনালা, খালবিল, বিস্তৃত চিংড়িঘের ও সুন্দরবনে লোনাপানির কাঁকড়া মেলে। এদের গড় আয়ু এক থেকে দেড় বছর।

চিংড়িঘেরে বড় হওয়া কাঁকড়ার ৯০ শতাংশই ধরা পড়ে। প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়া কাঁকড়ার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আহরণ করা সম্ভব হয়। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ জেলে প্রাকৃতিক উৎসগুলো থেকে কাঁকড়া ধরে জীবনযাপন করছেন। শুধু সুন্দরবন এলাকাতেই ৫০ থেকে ৬০ হাজার জেলে এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এ এলাকায় এখন ব্যক্তিউদ্যোগে কয়েকহাজার কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে।

খুলনার পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, ডুমুরিয়া, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, আশাশুনি, বাগেরহাটের রামপাল ও মংলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছোট ছোট পুকুরে কাঁকড়া মোটাতাজা করা হচ্ছে। আবার কোথাও বড় বড় ঘেরে চিংড়ির কাঁকড়া ছেড়ে বড় করা হচ্ছে। উন্মুক্ত জলাশয়ে খাঁচায় আটকে রেখেও চাষ করা হচ্ছে কাঁকড়া।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সরোজ কান্তি মিস্ত্রী বলেন, কাঁকড়া মোটাতাজা করে চাষীরা দ্রুত লাভবান হচ্ছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষের জন্য সরকারিভাবে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ এবং নানা উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।

কয়রা উপজেলার কাঁকড়া চাষী নিশীত রঞ্জন মিস্ত্রী বলেন, কাঁকড়া দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার উম্মোচন করেছে। উপকূলবর্তী এলাকার লাখো চাষীপরিবার সচ্ছলতার মুখ দেখছে কাঁকড়া চাষে। তিনি এ খাতে চাষীদের সহজ শর্তে প্রয়োজনীয় কৃষিঋণ এবং সরকারিভাবে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের দাবি জানান।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, সর্বপ্রথম ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে মাত্র ২৩ হাজার টাকা মূল্যের কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রপ্তনি করা হয় দুই হাজার ৯৭৩ টন। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ৪১৬ টনে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে আট হাজার ৫২০ টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০ হাজার এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে ১০ হাজার ৫শ’ টন ছাড়িয়েছে।

কাঁকড়া রপ্তানির বড় অংশ যায় চীনে। এছাড়া মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, জাপান, সিংগাপুর, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মিয়ানমার এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ মিলিয়ে মোট ২৪টি দেশে এই কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে।

কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁকড়া রপ্তানিতে প্রতি বছর গড়ে আয় হচ্ছে প্রায় ৪শ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। বিগত ২১ বছর ধরে কাঁকড়া রপ্তানি হলেও এটি এখনও দেশের অপ্রচলিত পণ্যের তালিকায় রয়েছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় কাঁকড়া রপ্তানি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এদিকে কাঁকড়া আহরণ পরিবেশের ক্ষতি করে- এ যুক্তিতে সরকার ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে কাঁকড়া আহরণ ও রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এতে বিদেশে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাঁকড়ার বাজার বেদখল হয়ে যায়। পরে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সরকার রপ্তানির অনুমতি দিলেও সাগর বা উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আহরণের ক্ষেত্রে সময়সীমা বেঁধে দেয়া। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি- এই তিন মাস বিদেশে কাঁকড়ার চাহিদা বেশি থাকে বলে এ সময়কে আহরণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা চান বিধিনিষেধমুক্ত পরিবেশ।

দিগরাজ কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান শেখ ও চালনা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম গাজী প্রজনন মৌসুমে কোন কাঁকড়া নদী থেকে সংগ্রহ করা হয় না বলে দাবি করে বলেন, এ মৌসুমে ঘেরের সংরক্ষিত কাঁকড়া বাজারজাত করা হয়।

তারা বলেন, কোস্টগার্ড পুলিশসহ প্রশাসনের অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা না জেনেই পথিমধ্যে পরিবহন আটকে দেয়। এতে হয়রানির শিকার হতে হয় কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের। এ কারণে বর্তমানে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ব্যবসায়ীরা কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ রেখেছে।

এ জাতীয় আরও খবর