g বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের প্রতি স্বজনদের শ্রদ্ধা | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

রবিবার, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ৯ই আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের প্রতি স্বজনদের শ্রদ্ধা

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭

---

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘আট বছর কেটে গেল। কেউ আমাদের উত্তর দেয়নি, কেন এই হত্যাকাণ্ড? একটি মানুষ তো আর এমনি এমনি শহীদ হয় না। এর পেছনে একটা কারণ থাকে।’ পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে নিহত বাবা মেজর মিজানুর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানিয়ে এ কথাই বলছিল তাহসীন রহমান। ১৭ বছর বয়সী এই কিশোরের সঙ্গে ছিল ১১ বছর বয়সী ছোট ভাই ফারদিন রহমান।

রাজধানীর বনানীতে সামরিক কবরস্থানে বাবা মিজানুর রহমানের স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তাহসীন রহমান বলেন, ‘তখন আমার বয়স ছিল নয় বছর। ঘটনার দিন বাবার সঙ্গে সকালে নাশতা করেছিলাম। তারপর যে চলে গেলেন আর দেখা পাইনি।’ বাবা মারা যাওয়ার নয় মাস আগে তাদের মা রেবেকা ফারহানা ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাহসীন এখন টাঙ্গাইলে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করছে। আর ছোট ভাই ফারদিন গুলশানে নানা অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে থাকে।

তাহসীন ও ফারদিনের মতো ​বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনা পরিবারের সদস্যরা বনানীর সামরিক কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানান। আজ শনিবার বিডিআর বিদ্রোহের আট বছর।

শ্রদ্ধা জানাতে আসেন নিহত লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়ার ছোট ভাই জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে এ ঘটনার সমাধান চাই। শহীদদের পরিবারের কান্না জাতিকে যেন আর দেখতে না হয়।’ নেপথ্যের ও ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি।

বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বৃহস্পতিবার স্বজনদের মোনাজাত। ছবি: সাজিদ হোসেনবিডিআর বিদ্রোহে নিহত কর্নেল কুদরত-ই-এলাহীর বাবা হাবিবু​র রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই। কারণ, মানুষের বিচারে হয়তো প্রকৃত অপরাধীর বিচার নাও হতে পারে। যে দোষী, সে হয়তো বের হয়ে যায়।’

আট বছর বয়সী সাদাকাত সাবরি বিন মোমিন এসেছিল মা সোনিয়া আক্তারের সঙ্গে। বাবার মৃত্যুর ১১ দিন পর তার জন্ম হয়। মা বলেন, ‘একটা তো বিচার হচ্ছে। দ্রুত রায় কার্যকর চাই।’ জানালেন, ছেলে সব সময় বাবাকে খুঁজে বেড়ায়। জন্মের আগে জানতেন না সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে। স্বামী আগে থেকেই কয়েকটি নাম ঠিক করে রেখেছিলেন। ছেলের জন্মের পর সেখান থেকে নাম নিয়ে নাম রাখা হয়েছে।

বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের প্রতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও তিন বাহিনীর প্রধানসহ অন্যদের শ্রদ্ধা। ছবি: সাজিদ হোসেননিহত মেজর ইদ্রিস ইকবালের বড় ভাই মেজর ইউসুফ ইকবাল বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে বিচার সম্পন্ন হলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন।

বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সরোয়ার হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন ​বীরবিক্রম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মো. শফিউল হক, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, স্বরাষ্ট্রসচিব কামাল আহমেদ, বিজিবির মহাপরিচালক আবু​ল হোসেন প্রমুখ শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান শ্রদ্ধা জানান।

বিডিআর বিদ্রোহের আট বছর হলো আজ বৃহস্পতিবার। বনানীর সামরিক কবরস্থানে নিহতদের প্রতি স্বজনদের শ্রদ্ধা। ছবি: সাজিদ হোসেন০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ঘটেছিল নারকীয় হত্যাকাণ্ড। সেদিন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান।
বিডিআর বিদ্রোহের পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছিল। দুটি কমিটিই বলেছিল, তারা এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি। এ দুটি কমিটি এ ঘটনার তদন্ত ও ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটতে পারে সে ব্যাপারে বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল। কিন্তু দুই কমিটির অনেক সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাহিনীর নিজস্ব আইনের পাশাপাশি ফৌজদারি আইনে দুটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর উচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি এখন শেষ পর্যায়ে আছে। তবে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা মামলাটির বিচার এখনো শেষ হয়নি, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়েই রয়ে গেছে। প্রথম আলো

এ জাতীয় আরও খবর