g বৈঠক করলেন সোনিয়া-মমতা : রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে জোর তৎপরতা | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বৃহস্পতিবার, ৫ই অক্টোবর, ২০১৭ ইং ২০শে আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বৈঠক করলেন সোনিয়া-মমতা : রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে জোর তৎপরতা

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ১৬, ২০১৭
news-image

---

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এমন এক ব্যক্তি যিনি হবেন মুক্তমনা, দেশের গণতন্ত্র ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সর্বোপরি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে প্রধান্য দেবেন। এমন রাষ্ট্রপতির খোঁজে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জি। মঙ্গলবার বিকালে দিল্লির ১০ জনপথে সোনিয়ার বাসভবনেই ভারতের এই প্রধান দুই বিরোধী দলের নেত্রীরা একান্তে বৈঠক করেন।

আগামী জুলাইয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। মে মাসের শেষর দিকে স্থির হবে নির্বাচনের দিনক্ষণ। তাই এক মাস আগে থাকতেই রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে বিরোধী শিবির থেকে সহমতের ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও জনতা দল ইউনাইটেড প্রধান নীতিশ কুমার, সিপিআইএম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই নেতা ডি.রাজা, এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব, সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবসহ কয়েকটি বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সেরে ফেলেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। বাদ ছিলেন বিরোধী শিবিরে মমতা’র মতো গুরুত্বপূর্ণ নেত্রীর মতামত। তাই এবার বিষয়টি নিয়ে মমতার পরামর্শ নেন সোনিয়া। এদিন সোনিয়ার বাসভবনে বৈঠক শুরু হয় বিকাল ৫টার দিকে, বৈঠক চলে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে। বৈঠকের মাঝে এসে যোগ দেন রাহুল গান্ধীও।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে মমতা বলেন, ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। আমরা দুই জনের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে মত বিনিময় করেছি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পাশাপাশি অন্য বিষয় নিয়েও আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে’।

যদিও রাষ্ট্রপতি পদে কারও নাম নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি। মমতা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদে কারও নাম নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে আমরা চাই যেই হোন না কেন তিনি হবেন সর্বসম্মত এবং যেটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। বিষয়টি নিয়ে আগামী সপ্তাহে ফের বৈঠক হতে পারে। এবং অন্য দলের সঙ্গেও আলোচনা হবে’। যদিও বৈঠকের গোটা বিষয়টি বাইরে প্রকাশ করে দেওয়াটাও ঠিক নয় বলেও সাংবাদিকদের মনে করিয়ে দেন মমতা।
নাম না করে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘দেশ জুড়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দেখানো হচ্ছে। রাজনৈতিক লড়াই রাজনেতিক ভাবেই হওয়া উচিত। কিন্তু সিবিআই-ইডি দেখিয়ে ভয় দেখোনো হচ্ছে। কাউকে পছন্ধ না হলেইে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে, জেলে ঢোকানো হচ্ছে, কখনও জঙ্গি তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এধরনের লড়াই কখনও শোভা পায় না’।

রাষ্ট্রপতি পদে ইতিমধ্যেই বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাজ্যপাল গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী, লোকসভার সাবেক স্পীকার মীরা কুমারসহ একাধিক নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিরোধীদের মধ্যে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী গতকালই প্রণব মুখার্জিকেই ফের রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রণবের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে মমতারও। প্রণবে আপত্তি নেই সীতারাম ইয়েচুরিরও। যদিও প্রণব মুখার্জি জানিয়ে দিয়েছেন তিনি একটি শিবিরের প্রার্থী হতে চান না। সব দলের পক্ষ থেকে যদি সর্বসম্মতিক্রমে তাঁর নাম রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রস্তাব করা হয়, তবেই তিনি বিষয়টিতে রাজি হবেন। তবে শেষ পর্যন্ত সর্বসম্মতিক্রমে প্রণব মুর্খাজি বা অন্য কেউ নির্বাচিত না হলে গোপাল কৃষ্ণকেই বিরোধীদের প্রার্থী করা হতে পারে।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে বিজেপি তাদের নিজেদের পথ মসৃণ করে রেখেছে বলেই খবর। ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বেশ কয়েকটি নাম নিজেদের তালিকায় রেখেছে বিজেপি। যার মধ্যে অন্যতম ঝাড়খন্ডের রাজ্যপাল আদিবাসী নেত্রী দ্রৌপদী মুর্ম, লোকসভার বর্তমান স্পীকার সুমিত্রা মহাজন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তবে বিরোধীদের তুলনায় কিছুটা ধীর গতিতে চলছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি দেখতে চাইছে বিরোধী দলগুলি কাকে প্রার্থী করতে চায়। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন নরেন্দ্র মোদি। বিজেপি চাইছে এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি করা হোক যিনি সব দিক থেকেই যোগ্য। তাঁকে নিয়ে বিরোধী দলও সমালোচনা করার সুযোগ পাবে না।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য দেশটির মোট ৪১২০ জন বিধায়ক এবং ৭৭৬ জন সাংসদ মিলিয়ে ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোট সংখ্যা হল ১০,৯৮,৮৮২। যেখানে জয়ের জন্য দরকার ৫,৪৯,৪৪২ (অর্ধেক +এক)। সূত্রে খবর ৪১০ জন সাংসদ (রাজ্যসভা ও লোকসভা) এবং ১৬৯১ জন বিধায়ক নিয়ে কেন্দ্রের শাসকদলের কাছে নিজস্ব ভোট রয়েছে ৫,৩২,০১৯ টি। জিততে দরকার আরও ১৭,৪২৩ টি ভোট। এক্ষেত্রে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি, এআইএডিএমকে, ওয়াই.এস.আর কংগ্রেস’এর মতো দলগুলির সমর্থন পেয়ে গেলেই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের প্রার্থী জয়ী হয়ে যাবেন। ইতিমধ্যেই প্রতিটি দলই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ’কে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে। এই অবস্থায় বিরোধীদের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৈরি করাই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

তবে খাতায় কলমে ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন’র হলেও আদতে বিজেপি বিরোধী জোটকে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার লক্ষ্যেই সোনিয়া-মমতার মধ্যে কথা হয়েছে বলে খবর। এদিনের বৈঠক শেষে মমতা নিজেও সেকথা জানিয়ে দেন। মমতা বলেন, ‘সোনিয়া গান্ধী হলেন বিরোধী দলের নেত্রী। আর দুইটি রাজনৈতিক দল যখন মিলিত হয় তখন সেখানে রাজনৈতিক আলোচনাও হয়’।

সূত্রে খবর ২০১৪ সালে লোকসভার নির্বাচনে বিজেপির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার পর অতি সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশসহ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস, আপসহ বিরোধীদের বিপর্যস্ত করে যেভাবে মোদি ঝড় বয়েছে তাতে যথেষ্টই শঙ্কিত বিরোধীরা। তাই দেশে গেরুয়া ঝড় সামাল দিতে বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে একজোট হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতেই অসুস্থ শরীরেও ময়দানে নেমেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। সোনিয়া জানেন এই ধরনের বিরোধী জোটে তৃণমূল নেত্রীর মতো নিরলস, আপোসহীন বিরোধী নেত্রীর গুরুত্ব কতখানি, যিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কট্টর সমালোচক। গত চার বছর ধরেই অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে কংগ্রেস, আর এই অবস্থা থেকে বেরোতে হলে কংগ্রেসের একার শক্তিতে সেটা সম্ভব নয়। অ-বিজেপি জোট গঠন করে কংগ্রেসকে বিজেপির মুখোমুখি হতে হবে, আর সেখানে মমতার সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

দিল্লিতে সোনিয়ার পাশাপাশি আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গেও দেখা করার কথা রয়েছে মমতার। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে দিল্লির বুকেই একটি ঐক্যবদ্ধ বিরোধী মঞ্চ তৈরির প্রয়াস চালাচ্ছেন মমতা। তৃণমূল সূত্রের খবর, আগামী ২০১৯ সালে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে মোদি বিরোধী জোটের রণকৌশলও নাকি ঠিক করে ফেলেছেন মমতা। তবে দিল্লিতে এসে সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করায় যথেষ্ট অস্তিত্বে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস। কারণ সেখানে কংগ্রেসের প্রধান বিরোধী দল মমতার তৃণমূল। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নির্বাচনে জোট করেছে কংগ্রেস-বামেরা। মমতার সঙ্গে সোনিয়ার সাক্ষাৎ নিয়ে সুর চড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। এদিন বিকেলে তিনি পরিষ্কার করে দেন ‘যতদিন রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি রয়েছি ততদিন কংগ্রেস-তৃণমূল জোট মানবো না। বাংলায় কংগ্রেস কর্মীদের খুন করছে আর দিল্লিতে ঐক্যের খুন দেখাচ্ছে। এসব চলতে পারে না।’ বিডি-প্রতিদিন

এ জাতীয় আরও খবর