সোমবার, ১২ই জুন, ২০১৭ ইং ২৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বনানীতে ছাত্রী ধর্ষণ: প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ১৮, ২০১৭
news-image

---

নিজস্ব প্রতিবেদক : বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণকাণ্ডের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। মামলার চার আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে এবং গ্রেপ্তার পঞ্চম আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, বুধবার রাতে মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারের পর এ মামলার আসামি নাঈম আশরাফ বা হাসান মোহাম্মদ হালিমকে ঢাকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মনিরুল বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এই ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফের গত ১১ মে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার চার দিনের মাথায় ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় অপর দুই আসামি সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী এবং গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনকে। ওই চারজন রিমান্ডে অভিযোগ অনেকটাই স্বীকার করেছে জানিয়ে মনিরুল বলেন, তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

গত ৬ মে বনানী থানায় দায়ের করা এ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন সাফাত ও নাঈম। বাকি তিনজন তাদের সহযোগিতা করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, নারী নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের যে সংজ্ঞা দেওয়া সে অনুযায়ী অভিযোগের সমর্থনে প্রাথমিক কিছু তথ্য তারা জিজ্ঞাসাবাদে পেয়েছেন।

তবে চার আসামির রিমান্ড এখনও শেষ না হওয়ায় এবং পঞ্চম আসামি মাত্র ধরা পড়ায় ঘটনার খুঁটিনাটি নিয়ে এখনই সংবাদমাধ্যমের সামনে বিস্তারিত বলা সমীচীন হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, প্রধান অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ কেবল শুরু হয়েছে। সেখানে যৌন সংসর্গের কথা আমরা জানতে পেরেছি। কী পরিস্থিতিতে কী হয়েছিল জিজ্ঞাসবাদ শেষেই আমরা তা নিশ্চিত করতে পারব।

এ মামলার আসামিদের মধ্যে সাদমান রেগনাম গ্রুপ ও পিকাসো রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে। আর যে হোটেলে ঘটনা, সেই রেইনট্রির মালিক আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বি এইচ হারুনের সন্তানরা।

ধর্ষণের ঘটনা গত ২৮ মার্চ ঘটলেও প্রভাবশালী আসামিদের হুমকির কারণে মামলা করতে এক মাসের বেশি সময় দেরি করার কথা বাদী নিজেই এজাহারে বলেছেন। পুলিশ সেই মামলা নিতে গড়িমসি করেছিল বলে অভিযোগ ওঠায় পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে।

সেই প্রসঙ্গ টেনে অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে বলেন, আইনের কাছে প্রভাবশালী বলে কিছু নেই। অপরাধী অপরাধীই। ওই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতারণার অনেক অভিযোগ নাঈমের নামে
ধর্ষণ মামলার চার আসামি গ্রেপ্তার হলেও মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে চান্দেরবাজার এলাকায় দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়র বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন নাঈম আশরাফ। বুধবার রাতে সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের হালিম নাম করে ঢাকায় নাঈম আশরাফ নামে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন বলে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর প্রকাশ পায়।

গত ৬ মে মামলার পর গণমাধ্যমে নাঈমের ছবি দেখে তাকে হালিম বলে শনাক্ত করেন সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের গাইন্দাইল গ্রামের বাসিন্দারা। হালিম ওই গ্রামের ফেরিওয়ালা আমজাদ হোসেনের ছেলে। এলাকায় প্রতারক হিসেবে তার পরিচয় ছিল।

গ্রামবাসী জানায়, হালিম প্রভাবশালী বিভিন্ন জনকে তার বাবা পরিচয় দিয়ে নানা সুবিধা আদায় এমনকি বিয়েও করেছিল দুই বার।

ঢাকায় এসে নাঈম আশরাফ নাম নিয়ে ‘ই-মেকার্স’ নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান খুলে ২০১৪ সালে ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী অরিজিৎ সিংয়ের কনসার্টের আয়োজন করেন তিনি।

২০১৬ সালে ঢাকায় ভারতের আরেক শিল্পী নেহা কাক্কারকে নিয়ে ‘নেহা কাক্কার লাইভ ইন কনসার্ট’ অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেন নাঈম বা হালিম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাঈম বিভিন্ন জনের সঙ্গে নিজের সেলফি দিতেন, যা সুবিধা নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হত বলে এখন মনে করছেন ওই ছবিতে থাকা ব্যক্তিরা।

নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে হালিম এলাকায় পোস্টার-ব্যানারও লাগাতেন; যদিও সংগঠনে তার কোনো পদ ছিল না বলে জানান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাজীপুরের নেতারা।

আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাতের সঙ্গে নাঈমের নিবিড় ঘনিষ্ঠতার কথা সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারাহ মাহবুব পিয়াসাও জানিয়েছেন।

সাফাত সব সময় নাঈমের কথায় চলতেন বলে পিয়াসার ভাষ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাঈমের নিজের পাতায় সাফাতের বাড়িতে পারিবারিক আবহে ছবিতে তাকেও দেখা যায়।

অভিযোগকারী তরুণীদের দাবি, সে দিন রেইনট্রি হোটেলে নাঈম ও সাফাত ধর্ষণের পাশাপাশি তাদের নির্যাতনও করেন। পা ধরে নিস্তার চাইলেও তারা ছাড়া পাননি।