মঙ্গলবার, ২০শে জুন, ২০১৭ ইং ৬ই আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

গরমে স্বস্তি দিলেও রাস্তার শরবতই অসুখের মূল কারণ

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ২৩, ২০১৭

---

রাজধানীসহ সারাদেশে চলছে গ্রীষ্মের দাবদাহ। তীব্র তাপপ্রবাহে কর্মজীবীদের স্বস্তি নেই। চলার পথে রাস্তাঘাটে হাঁপিয়ে ওঠা নগরবাসী গলা ভেজাতে পান করছেন বরফ মিশ্রিত বিভিন্ন শরবত। সাময়িক স্বস্তি মিললেও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের মূল কারণ এ শরবত।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগের অন্যতম কারণ জীবানুযুক্ত পানি। বিশেষ করে বরফ মিশ্রিত শরবত এ জন্য বিশেষ দায়ী। স্বস্তি পেতে কর্মজীবী মানুষ নিজেই ডেকে আনছেন বিভিন্ন রোগ। পানি ও বরফ কোথাকার, কী উপায়ে এসব তৈরি হচ্ছে, শরবত তৈরির পরিবেশ কেমন- কোনো কিছুতে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। ফলে এসব পানীয় পানে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন নগরবাসী।

তীব্র গরমে পিপাসিত মানুষের প্রাণ খোঁজে একটু প্রশান্তির। এ জন্য ঠান্ডা পানির কোনো বিকল্প নেই। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে ‘সুস্বাদু’ নানা রকমের ঠান্ডা শরবত বিক্রির ব্যবসা করছেন এক শ্রেণির মানুষ। মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ফুটপাতের এসব শরবত পানে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব শরবতে যে বরফ ব্যবহার হয় তা মাছ টাটকা রাখার জন্য তৈরি। মাছের জন্য তৈরি বরফে ফরমালিন দেয়া হয়। রাজধানীর পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, শেখেরটেক, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে তৈরি হচ্ছে এসব বরফ। এছাড়া বরফ তৈরির পানি সংগ্রহের ক্ষেত্রেও রয়েছে অবহেলা। কম টাকায় পেয়ে শরবত ব্যবসায়ীরা এসব বরফ সংগ্রহ করে ব্যবসা করছেন। অনেক ক্ষেত্রে চিনির পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে স্যাকারিন।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে অনুমতিপ্রাপ্ত প্রায় ৫০০ বরফ তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার বরফ বিভিন্ন মাছের আড়তের পাশাপাশি বিভিন্ন ফাস্টফুডের দোকানেও সরবরাহ করা হয়। এছাড়া যে কেউ এসব বরফ কিনতে পারেন। আর এ সুযোগে ফুটপাতের শরবত ও আখের রস বিক্রেতারা এসব বরফ সংগ্রহ করছেন।

কল্যাণপুরের লেবুর শরবত বিক্রেতা পরম আলী বলেন, মোহাম্মদপুরের আইসক্রিম ফ্যাক্টরি থেকে বরফ সংগ্রহ করা। ভালো মনে করেই কিনে এনেছি। গরমে শরবতের চাহিদা অনেক বেশি। বিক্রিও হচ্ছে বেশ।

রাজধানীর কলেজগেট এলাকার আখের রস বিক্রেতা সাইদুর রহমান বলেন, শরবত খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয় বলে শুনেছি। কিন্তু আমার বিক্রি করা আখের রস খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়েছে- এমন অভিযোগ এখনও পাইনি। অন্য কিছু খেয়েও তো হতে পারে। নিজের আখের রসে মিশ্রিত বরফ পরিষ্কার বলেও দাবি করেন তিনি।

জানা গেছে, রাজধানীর ফুটপাতে ছোট-বড় এমন সাড়ে তিন হাজার শরবত বিক্রির ভ্রাম্যমাণ ভ্যান রয়েছে। নগরজুড়ে খোলা আকাশের নিচে এসব ভ্যানগাড়ির ওপরে পানির ফিল্টার, চিনি, লেবু নিয়ে বানানো শরবতে পথচারীদের তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন তারা।

রাজধানীর কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজগেট, ফার্মগেট ও কারওয়ানবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্রই দেদারছে বিক্রি হচ্ছে বরফ মিশ্রিত শরবত। কোথাও আখের রস, কোথাও বা লেবুর শরবত। ডিজেল চালিত মেশিনে পিষে আখের রস বের করা হচ্ছে। মশা-মাছি ও রাস্তার ধুলা মিশে একাকার বরফের ঠান্ডা পানির এসব শরবত পানে ক্রেতারাও কম যাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের ডায়রিয়াল ডিজিজ ইউনিট প্রধান ডা. আজহারুল ইসলাম খান জানান, ফুটপাতের কোনো পানীয়ই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এগুলো পানে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ যেমন- ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস ও ক্রিমি হতে পারে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা আরও বহু ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

তিনি আরও জানান, বরফ মিশ্রিত এসব শরবত খেয়ে কিডনি বিকল, হেপাটাইটিস বি-ভাইরাস, লিভারের জটিলতা, পাকস্থলীতে প্রদাহ, খাদ্যনালিতে সমস্যা, পেপটিক আলসারসহ মারাত্মক জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে কারণে রাস্তার বরফ মিশ্রিত পানি না পান করাই মঙ্গলজনক।

এ জাতীয় আরও খবর