শুক্রবার, ২৩শে জুন, ২০১৭ ইং ৯ই আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বাঞ্ছারামপুরে মানবতার কল্যাণে মাহবুবুর রহমান মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড নার্সিং ইন্সটিটিউট এক অনন্য নিদর্শন

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ২৩, ২০১৭
news-image

---

ফয়সল আহমেদ খান , রুপস্দী ,বাঞ্ছারামপুর : সেবাকে পুঁজি করে ব্যবসা নয়। প্রকৃত ভাবে মানবতার কল্যানে নিয়োজিত থাকতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলাধীন হাওরাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম রুপস্দীতে ২০০৬ সালের ১৮ জুলাই মানবতার কল্যাণে মরহুম মাহবুবুর রহমানের ৫ ছেলে ৩ মেয়ে সমন্ধয় করে ৪র্থ ছেলে আতিকুর রহমানের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় মাহবুবুর রহমান মেমোরিয়াল হাসপাতাল।যা পরবতীর্তে ২০১৫ সালে পূর্ণাঙ্গ নার্সিং ইন্সটিটিউিট হিসেবে আত্বপ্রকাশ করে।বিশ্বমানের আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত দেশের সর্ববৃহৎ এই অলাভজনক হাসপাতাল এমন অজোপাড়া গাঁয়ে প্রতিষ্ঠিত করে পৃথিবীতে ইতিহাস তৈরী করেছেন এর প্রতিষ্ঠাতা মাহবুবুর রহমানের সন্তান আতিকুর রহমান। এরই কল্যানে বর্তমানে এই এলাকা রুপস্দী তথা পুরো বাঞ্ছারামপুর উপজেলা এখন উন্নত আধুনিক নগরের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে চলছে।আর প্রচুর অর্থ খরচ করে বিদেশ মুখী না হয়ে জটিল-কঠিন রোগের চিকিৎসা ও অপারেশন স্বল্প খরচে হওয়ার কারনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা,ইউনিয়ন,গ্রাম সহ সমগ্র বাংলাদেশে এর সুনাম ছড়িছে পড়েছে। পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য মানবিক দিক বিবেচনা করে রাখা হয়েছে বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা। তাই সকল শ্রেনীর মানুষই আধুনিক এ চিকিৎসা সেবার আওতাভূক্ত।
গত ১৯ মে দিনভর সরেজমিনে ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,‘অসুখ-বিসুখে বিনা চিকিৎসায় যাতে মানুষ মারা না যায়, সে জন্যে এখানে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এই হাসপাতালটি। আর তারই সে ঘোষনা বাস্তবায়নের জন্য মো,মজিবুর রহমান (সাবেক উপসচীব),সফিকুর রহমান (বিএসটিআই এর পরিচালক),মৃত মফিজুর রহমান,বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান,মুস্তাফিজুর রহমান ।

তিতাস নদীর অববাহিকায় বালিয়াদহ বিলের ভিতর নিজস্ব ১ একর জায়গার হাসপাতালটি নির্মান করেন। তাদের মরহুম কৃষিবিদ (তিনি ২য় শ্রেনীর কর্মকর্তা ছিলেন) পিতার নাম অনুসারেই একটি হাসপাতাল করার। তার পরের বছরেই (২০০৬) বালিয়াদহ বিলে ১২-১৫ ফুট গভীর জায়গা ভরাট করে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৬ সাল নাগাদ মাহবুবুর রহমান মেমোরিয়াল হাসপাতালটির নির্মান কাজ শেষ হয়। অনন্য স্থাপত্য শৈলীতে তৈরী করা হয় চিকিৎসা শােেস্ত্রর প্রায় সব কটি মূল স্থম্ভ তিনি স্পর্শ করেছেন।
এর মধ্যে ২ টি ৬৫ বেডের এ হাসপাতাল ভবন, সুবিশাল ইনডোর ভবন, নার্সিং ইন্সটিটিউিট, ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা হোষ্টেল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস ভবন,সুপ্রসিদ্ধ লাইব্রেরী, সুবিশাল বাগানসহ অন্যান্য স্থাপনা।

বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে মাহবুবুর রহমান মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড নার্সিং ইন্সটিটিউট-এ চলছে বিভিন্ন প্রকার রোগের চিকিৎসা। মানব সৃষ্ট বিভিন্ন জটিল রোগের জন্য এ পর্যন্ত বিশ্বের সর্বশেষ উদ্ভাবিত সকল আধুনিক মেশিন,যন্ত্রপাতি,প্রযুক্তি ও ডায়াবেটিক রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা বিভিন্ন প্রকার থেরাপী দেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন রোগে আক্্রান্ত ব্যাক্তিরা বিশ্বের যে কোন উন্নত দেশে চিকিৎসাসেবা নিতে বিদেশে শুধুমাত্র থাকা খাওয়ার জন্য যে ব্যায় বহন করতে হয় সেই ব্যায়ে তারা দেশের ভেতর আরেক দেশ,-বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রুপস্দী গ্রামের মাহবুবুর রহমান মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড নার্সিং ইন্সটিটিউট সার্বিক ব্যায় করতে পারেন।

এখানে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা ছাড়াও রয়েছে কার্ডিওভাসকুলার ও সার্জারী বিভাগ,মেডিসিন বিভাগ,জেনারেল সার্জারী বিভাগ,কার্ডিওলজি বিভাগ,ইউরোলজি বিভাগ,গাইনী ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগ,শিশু বিভাগ,চর্ম ও যৌন বিভাগ,অর্থোপেডিকস্ বিভাগ,গ্যাষ্ট্রো এ্যান্টারোলজি বিভাগ,এন্ড্রোকাইনোলোজি বিভাগ,নাক কান গলা বিভাগ,চক্ষু বিভাগ, নিউরো সার্জারী বিভাগ ও দন্তবিভাগ।
এই বিভাগগুলো বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে সার্বক্ষনিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে।চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন অসংখ্য দেশের নামী দামী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
থ্রিডিসিআরটি,আইজিআরটি,আইএমআরটি,এসআরএস,এসআরটিসহ সর্ব ধরনের বিশ্বমানের প্রযুক্তিযুক্ত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে।

হসপিটালটি দেশের চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেশে ও দেশের বাইরে সুনাম অর্জনের সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি দেশের ক্যান্সারে আক্রান্তরোগীদের বিশ্বমানের সেবাদানের জন্য অত্যন্ত ভালো একটি সংবাদ বয়ে এনেছে।

আতিকুর রহমান বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক।তবে এমনি এমনি তিনি এই অবস্থানে আসেননি।তাতে প্রচুর শ্রম ও মেধা-মনন দিয়ে জীবনটা শুরু করেছিলেন বাঞ্ছারামপুর উপজেলার গর্ব ও মরহুম মাহবুবুর রহমান ও তার রতœগর্ভা মরহুম স্ত্রী আতিকুর রহমানকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে।নইলে,হয়তো বাঞ্ছারামপুরের ৪ লাখ মানুষ আজ এমন নাম মাত্রমূল্যে আধুনিক চিকিৎসা সেবা পেতো না। আতিকুর রহমানে সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনি জীবন সংগ্রাম শুরু করেছিলেন ব্যবসায় মাত্র ৫৬ হাজার টাকা পুজি লগ্নি করে।
শুরুতে এই টাকায় লোহালক্করের কারবার।পাশপাশি চালাচ্ছিলেন পড়াশুনা।নারায়নগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে ১৯৮৪
সালে গ্রেজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেন।পরবর্তীতে ঐ ৫৬ হাজার টাকার লভ্যাংশ দাড়ায় প্রায় ২২ লাখ টাকায়।১৯৯১ সালে ব্যাংক লোন ও ঐ পুজি দিয়ে শুরু করেন গার্মেন্টস ও হাইটেক ষ্টীল এন্ড রি-রোলিং লিমিটেড নামে রড তৈরীর কারখানা।ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়তে থাকে।তাকে অনুপ্রেরনা দেন স্ত্রী ও ৩ মেয়ে।নারায়নগঞ্জ ও রুপগঞ্জ নিজস্ব জায়গায় ফ্যাক্টরী এখন (২০১৭) শতকোটি টাকার সম্পদে পরিনত হয়েছে।কিন্তু,নিজের মনের ললাটে মানবসেবার ধারনা থেকে কখনো পিছু হননি।মরহুম পিতার নামে ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার স্থানীয় সংসদ ও উন্নয়নের রুপকারখ্যাত ক্যাপ্টেন তাজের সহযোগিতায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করে গড়ে তোলেন আজকের মাহবুবুর রহমান হাসপাতাল ও নার্সিং ইন্সটিটিউট।সেখানে কেবল চিকিৎসা সেবাই নয়,তৈরী হচ্ছে দক্ষ মানবশক্তি।গ্রেজুয়েট ও ডিপ্লোমা নার্স।দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেকার শিক্ষার্থীরা নিয়মমেনে ভর্তি হয়ে ২/৩/৪ বছরের নার্সিং কোর্স করে নিজেকে মানবসেবায় কাজে লাগাচ্ছেন।আতিকুর রহমান এই হাসপাতাল স্থাপন করে মানবতার চরম নিদর্শন রাখায় এ যাবত বিভিন্ন সংস্থা থেকে সন্মাননা ও পুরস্কৃত হয়েছেন।সর্বশেষ সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্যা. এবি তাজুল ইসলাম তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সাদা মনের মানুষ’ হিসেবে ভূষিত করেন।

এ জাতীয় আরও খবর