শনিবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ইং ৯ই পৌষ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সঙ্গীতের তীর্থভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া

AmaderBrahmanbaria.COM
ডিসেম্বর ১, ২০১৭
news-image

---

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সূত্রে দুনিয়াজোড়া পরিচিতির গৌরব মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে রয়েছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ স্থান মেঘনা কন্যা তিতাস বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্প, সংগীত ও সংস্কৃতির তীর্থক্ষেত্র রূপে উপমহাদেশব্যাপী সুপরিচিত। সংগীতের ক্ষেত্রে সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বব্যাপী পরিচিতির গৌরব অর্জন করেছে।

গানের দেশ, গুণীর দেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া। অসংখ্য গুণী ও জ্ঞানীজনের অবদানের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপমহাদেশে ও বিশ্বব্যাপী পরিচিত। রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গৌরবময় ইতিহাস। মোঘলসম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ভাটি বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রেও রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গৌরবময় ভূমিকা।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :বিশ্ব বিশ্রুত সংগীত সাধক উপমহাদেশের গর্ব সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দন খাঁর পূণ্যভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিল্প, সাহিত্য, সংগীত এবং সংস্কৃতির পীঠস্থান রূপে সুপরিচিত। আজকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া তার পূর্ণরূপ লাভ করে বৃটিশ রাজত্বকালে। মুসলিম, রাজত্বের অধীনে চলে আসে পাঠান সুলতান শের শাহের রাজত্বকালে। ১৭৬৫ সালে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি বাঙালার দেওয়ানী লাভ করে। ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি রাজস্ব আদায় এবং প্রশাসনিক সুবিধার জন্য পরগনার পরিবর্তে জেলা ও মহকুমা সৃষ্টি করে। ১৭৯০ সালে ত্রিপুরা জেলার সৃষ্টি হয়। ১৮৬০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার সৃষ্টি হয়। ত্রিপুরা জেলা কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর এই তিনটি মহকুমার ভাগ করা হয়। সরাইল দাউদপুর, বিজলা ও হরিপুর পরগনাকে ময়মনসিংহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার সাথে যুক্ত করা হয় এবং নূরনগর ও বরাদাখাদ বা বরদাখাল পরগনাকেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নাছিরনগর, সরাইল, কসবা, বাঞ্ছারামপুর ও সরাইল থানায় বিভক্ত করা হয়। ১৮৬৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৮ সালে পাকআমলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা শতবর্ষ উদযাপন করা হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হয়। জেলার পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। দক্ষিণে কুমিল্লা জেলা, পশ্চিমে নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং উত্তরে সিলেটের হবিগঞ্জ জেলা।

নামকরণ :ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামকরণের সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। এ ব্যাপারে একাধিক মত প্রচলিত।

বাঙ্গলাদেশে সেনবংশের রাজত্ব্যকালে কোন অভিজাত ব্রাহ্মণ পরিবার ছিল না। এতে পূজা অনুষ্ঠানে বেশ অসুবিধা সৃষ্টি হত। রাজা লক্ষণ সেন আদিশুর কান্যকুঞ্জ থেকে কয়েকটি ব্রাহ্মণ পরিবার এনেছিলেন। সেই সব ব্রাহ্মণ পরিবারের বংশধরদের এক পরিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌলভীপাড়া নামকস্থানে বসতি স্থাপন করে। এই প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণবাড়ী থেকে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া নামের উত্পত্তি। জনশ্রুতি, উল্লিখিত বাড়ির দক্ষিণ পাশে প্রবাহিত খালের দক্ষিণ পাড়ে দিল্লি থেকে আগত মুসলিম দরবেশ ও ধর্মপ্রচারক আস্তানা স্থাপন করেন। এই দরবেশের নাম শাহ সুফি হযরত কাজী মাহমুদ শাহ। এই সাধক কর্তৃক উক্ত ব্রাহ্মণপরিবার এখান থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। কথিত আছে যে উক্ত দরবেশ “ব্রাহ্মণবেড়িয়ে যাও” বলে হুকুম করেছিলেন এবং তার সেই উক্তি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের উত্পত্তি। সাধকের নামানুসারে স্থানটির নাম কাজীপাড়া হয়েছে। এখানে তার মাজার রয়েছে, যা কাজী খন্দকারের মাজার নামে পরিচিত।

ঐতিহ্য :উপমহাদেশের সংগীত ও সংস্কৃতির পীঠস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এখানে বহু যুগের লোককাহিনীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে লোকায়ত ঐতিহ্য। আছে ধ্রুপদী সংগীতের নিজস্ব ঘরানা। সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ফকির আফতাব উদ্দিন খাঁ, মহর্ষি আন্দস্বামী, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, মনমোহন দত্ত, ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু। বহু সংগীত তারকা মিলেছেন এখানে। ছান্দসিক কবি আবদুল কাদির, প্রবোধচন্দ্র সেন, অদ্বৈত মল্লববর্মণ, কবি আল মাহমুদ, বাংলা ভাষার মূল স্রোতধারায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেন এক অমিয় প্রাণসত্তা। বাংলার বার ভূঁইয়া শ্রেষ্ট ঈসা খাঁর লালন ভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। নবাব সৈয়দ সামসুল হুদা, ব্যারিস্টার আব্দুর রসুল, বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত, ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, অলি আহাদ, আব্দুল কুদ্দুস মাখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান।

ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান :আরফাইলের মসজিদ (সরাইল), উলচাপাড়া মসজিদ (সদর), কালভৈরব মন্দির (সদর), বাসুদেব মন্দির (সরাইল), ঐতিহাসিক হাতিরপুল (সরাইল), খরমপুরের শাহ সূফী কেল্লা শহীদের মাজার (আখাউড়া), কৈলাঘর দুর্গ (কসবা), কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ (কসবা), বীরশ্রেষ্ট মোস্তফা কামালের কবর (আখাউড়া), সৌধ হিরন্ময়,শহীদ মিনার, তোয়ায়েল আজম মনুমেন্ট, শহীদ স্মৃতিসৌধ, ভাদুঘর মসজিদ (সদর), সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু (ভৈরব-আশুগঞ্জ সেতু), আর্কাইব মিউজিয়াম (সদর)।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান :’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল। এখান থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সাথে রেল ও সড়ক যোগাযোগ। মুক্তি বাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপর দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন এলাকায় শত্রুবাহিনীর উপর আক্রমণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস এখানে সংঘটিত হয়েছে সম্মুখযুদ্ধ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঁচ সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

সংবাদপত্রের শহর :ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর পরিণত হয়েছে সংবাদপত্রের শহরে। দৈনিক, সাপ্তাহিক ও অর্ধ-সাপ্তাহিক মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১২টি দৈনিক পত্রিকা বেরুচ্ছে এখান থেকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে কয়জন সাংবাদিক দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেনঃ সরাইল উপজেলার উচালিয়াপাড়া গ্রামের আহমেদুর রহমান (ভীমরুল) তিনি ‘দৈনিক ইত্তেফাকের’ সহকারী সম্পাদক ছিলেন। নবীনগর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের আহমেদ হুমায়ুন, তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদক ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌড়াইলের সৈয়দ আব্দুল কাহ্হার, দৈনিক বাংলার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পৈরতলার খানবাড়ীর সামিউল আহমেদ খান ফটিক, তিনি সাপ্তাহিক রোববারের সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তারা সবাই প্রয়াত। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিভিন্ন পদে কর্মরত রয়েছেন। দৈনিক ইত্তেফাকের উপদেষ্টা সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার উচালিয়াপাড়া গ্রামে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদের বাড়ি নাছিরনগর উপজেলার নাছিরপুর গ্রামে।

ভাষা আন্দোলনে অবদান : ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইংরেজ রাজত্বকাল থেকেই অত্যন্ত রাজনৈতিক সচেতন জনপদ রূপে পরিচিত নাম। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫২ সাল থেকেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন প্রশ্নে রাজধানী ঢাকা উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠে। তার ঢেউ এসে লাগে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ এবং হাইস্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন সময় ধর্মঘট পালন করে। মিছিলে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই এ স্লোগান মুখরিত করে তুলে।

আয়তন ও জনসংখ্যা :আয়তন ঃ ১৯২৭.১১ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা ঃ প্রায় ৩০ লক্ষ, মোট ভোটার ঃ ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৭৮ জন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনী আসন ৬টি, ইউনিয়ন ঃ ১০০টি, পৌরসভাঃ ৪টি, উপজেলাঃ ৯টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ঃ ১৮৭টি, নিম্ন মাধ্যমিকঃ ২৫টি, কামিল মাদ্রসাঃ ৩টি, ফাজিল মাদ্রাসাঃ ৮টি, আলিম মাদ্রাসাঃ ২১টি, দাখিল মাদ্রাসাঃ ৫১টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ৬৯০টি, রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ২৮৬টি, কমিউনিটি বিদ্যালয় ঃ৭৮টি, কিন্ডার গার্টেন ৮৭টি, আবাদি জমি ১৫০৭৬৩ হেক্টর, খাদ্য গোদাম ১০টি, ডিগ্রী কলেজ ১৯টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ১৮টি। শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পনি, আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র, আশুগঞ্জ সার কারখানা, বিসিক শিল্পনগরী, নৌযান নির্মাণশিল্প, পাদুকা শিল্প।

এ জাতীয় আরও খবর

  • বলিউডের দশ বিতর্কিত ঘটনাবলিউডের দশ বিতর্কিত ঘটনা
  • হঠাৎ ডাক পেলেন জুবায়ের-সজীবহঠাৎ ডাক পেলেন জুবায়ের-সজীব
  • ‘মোদী ও অমিত শাহের মাথা কাটলেই পুরস্কার’‘মোদী ও অমিত শাহের মাথা কাটলেই পুরস্কার’
  • সারাদেশে বজ্রপাতে নিহত ৩১সারাদেশে বজ্রপাতে নিহত ৩১
  • আশুগঞ্জে চালের মিলে বয়লার বিস্ফোরণে নারীর মৃত্যু আশুগঞ্জে চালের মিলে বয়লার বিস্ফোরণে নারীর মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি’র মিছিল থেকে ৪ নেতাকর্মী গ্রেফতারব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি’র মিছিল থেকে ৪ নেতাকর্মী গ্রেফতার
  • ইলিশের মজুত আছে, ক্রেতা নেইইলিশের মজুত আছে, ক্রেতা নেই
  • দুর্দান্ত জয়ের পর পাকিস্তানের জরিমানাদুর্দান্ত জয়ের পর পাকিস্তানের জরিমানা
  • সরাইল নোঁয়াগাও ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে মানব বন্ধনসরাইল নোঁয়াগাও ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে মানব বন্ধন
  • খালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির বৈঠকখালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির বৈঠক
  • কুয়েতে প্রথম রোজা পালনকুয়েতে প্রথম রোজা পালন
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধআখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ