মঙ্গলবার, ৩০শে জানুয়ারি, ২০১৮ ইং ১৭ই মাঘ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

‘অর্ধেক দামে’ ঝিলমিল-পূর্বাচলে ৮৯ হাজার ফ্ল্যাট বেচবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে জমি সংকটের কারণে আর কাউকে জমি বরাদ্দ দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। তিনি জানান, দুই আবাসিক প্রকল্প পূর্বাচলে ৭৫ হাজার এবং ঝিলমিলে ১৪ হাজার ফ্ল্যাট বানিয়ে তা বিক্রি করা হবে। আর বাজার মূল্যের চেয়ে সরকার অর্ধেক বা তার চেয়ে কম দামে ফ্ল্যাট বেচে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

উত্তরায় এরই মধ্যে ছয় হাজার ৬৩৮টি অ্যাপার্টমেন্ট বানিয়ে বিক্রি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। পূর্বাচলে ১৪২ তলা আইকন টাওয়ার নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রবিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান মন্ত্রী।

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা শহরে যেখানে সরকারি জমি আছে, সেগুলো আর কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হবে না। সবগুলোতে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বহুতল ভবন নির্মাণ করে অ্যাপার্টমেন্ট বরাদ্দ দেওয়া হবে।’

‘আমরা পরিধি বাড়াতে চাই না। উন্নত বিশ্বের মতো আমরা উপরের দিকে যেতে চাই।’

আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারের এই পরিকল্পনায় কেবল উচ্চ বা উচ্চ মধ্যবিত্তরা অন্তর্ভুক্ত না বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ঢাকায় বস্তিবাসীদের জন্যও ৫০০টি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করা হবে। সেখানে ১০ হাজার ফ্ল্যাট হবে। ৫০ হাজার বস্তিবাসীর আবাসন তৈরি করা হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মন্ত্রীকে ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউ এর সভাপতি সাইফল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ প্রমুখ। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মন্ত্রী।

অর্ধেক দামে ফ্ল্যাট দিচ্ছে সরকার

ফ্ল্যাট নির্মাণ করে তা বিক্রির মাধ্যমে ফ্ল্যাটের দাম সহনীয় রাখার উদ্যোগের কথাও জানান মন্ত্রী। বলেন, এরই মধ্যে এই উদ্যোগের সুফল মিলেছে।’

‘গত পাঁচ বছরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অনেকগুলো প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছে। আরও অনেক নতুন প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে। এখন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা আমাদের কাছ থেকে কমমূল্যে অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে পারছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ফ্ল্যাটের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য মোহাম্মদপুর-লালমাটিয়া এলাকায় সরকারি জমিতে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করছি। সেখানে বেসরকারি পর্যায়ে প্রতি স্কয়ার ফিটে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়। আমরা দিচ্ছি নয় হাজার টাকায়। গুলশান-বনানীতে বেসরকারি কোম্পানি নেয় ২৫ হাজার টাকা। আমরা ১০ থেকে ১১ হাজার টাকায় দেবো। এতে ফ্ল্যাটের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।’

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আর্থিক সক্ষমতা অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, এখন অর্থায়নের জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। ফলে প্রকল্পগুলো আগের মতো দীর্ঘসূত্রতায় পড়বে না।

অপরিকল্পিত নগরায়নের কুফল ঢাকায়

ঢাকা কীভাবে বেড়ে উঠবে সে বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা ছিল না বলে অতীতের ‘টাউন প্ল্যানারদের’ দোষারোপ করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘ঢাকা শহর অপরিকল্পিত একটি নগরী। এখানে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, স্যুয়ারেজের কোনো কিছুই ঠিক নেই।’

‘গুলশান, বনানী, ধানমন্ডিসহ কোনো আবাসিক এলাকাই পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়নি। এজন্য অতীতে যারা টাউন প্ল্যানার ছিলেন, তারা দায়ী। তারা তেজগাঁওকে শিল্প এলাকা বানিয়েছেন। অথচ তেজগাঁও এখন শহরের মধ্যখানে।’

বর্তমান সরকার এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পূর্বাচলকে সে রকম বানাব না। পূর্বাচল হবে সত্যিকারের একটি স্মার্ট সিটি। সবকিছু হবে পরিকল্পিত।’

মোশাররফ বলেন, ‘ঢাকা শহরের চার দিকে অসংখ্য নদী-নালা থাকলেও সব দখল হয়ে গেছে। ৫৬টি খাল দখল করা হয়েছে। বালু নদীর পানিতে দুর্গন্ধ। তুরাগ নদীর কোনো চিহ্ন নেই। এই অবস্থা পাল্টাতে হবে।’

ঢাকার নদী দখল রোধের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিনিয়ত ঢাকার নদীর জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তাতে ভূমিদস্যূদের রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। নদীর জমি দখল বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।’

উপজেলা পর্যায়েও পরিকল্পিত নগরায়ন হবে

আধুনিক নগরের সুবিধা বড় শহরগুলোর পাশাপাশি উপজেলা শহরেও নিয়ে যেতে যান গণপূর্ত মন্ত্রী। তিনি বেলন, ‘নাগরিক সুবিধা পেতেই সকলে ঢাকামুখী হচ্ছেন। ঢাকায় মাইগ্রেশন বন্ধে আমরা উপজেলা পর্যায়ে নাগরিক সুবিধা দিতে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছি।’

‘সেসব স্থানে নাগরিক সকল সুবিধাসহ নতুন নতুন শিল্প গড়ে তোলা হবে। ঢাকাবাসীর আবাসন সংকট দূরীকরণেও রাজধানীর উপযোগী জায়গাগুলোতে নতুন নতুন আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে।’

আগামী ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৩০ হাজার একর জমি নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করা হবে বলেও মিট দ্য রিপোর্টার্সে জানান গণপূর্ত মন্ত্রী। বলেনম ‘সেখানে এরই মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি জমি নিয়েছে। সবগুলো অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন হলে দেশের দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’

সারাদেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্যও বিভিন্ন জেলায় জমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানানো হয় মিট দ্য রিপোর্টার্সে।

মন্ত্রী ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বহুমুখী সমবায় সমিতির কেনা জমিতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বহুতল ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন। সেগুনবাগিচায় ডিআরইউর জমি বরাদ্দের বিষয়েও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।