বৃহস্পতিবার, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ইং ২৬শে মাঘ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

আল্লাহর কাছে ইমানদাররা সবচেয়ে মর্যাদাবান

মাওলানা কাসেম শরীফ : পবিত্র কুরআনে মাহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, (এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে আমি মানুষের মধ্য থেকে কোনো একজনের কাছে এই মর্মে ওহি পাঠিয়েছি যে) তুমি মানুষকে সতর্ক করো এবং মুমিনদের সুসংবাদ দাও যে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা! কাফিররা বলে‘এ তো এক সুস্পষ্ট জাদুকর! (সুরা ইউনুস, আয়াত : ২)

এই আয়াতের প্রথম অংশে বলা হয়েছিল, মানুষের মধ্য থেকে কেউ নবী হওয়া বিস্ময়কর নয়। এটিই যুক্তিসংগত যে, মানুষের নবী বা পথপ্রদর্শক মানুষ হবেন, যাতে তাঁর অতীত-বর্তমান দেখে তাঁর সম্পর্কে মানুষ নিশ্চিত থাকতে পারে। তাঁর সঙ্গে লোকেরা নিঃসংকোচে ভাব বিনিময় করতে পারে। আয়াতের এই অংশে বলা হয়েছে, দুটি বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে মহানবী (সা.)-কে পাঠানো হয়েছে। দুটি বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে তাঁর কাছে ওহি পাঠানো হয়েছেÑএক. মহানবী (সা.) অবিশ্বাসী ও পাপাচারীদের সতর্ক করেন। পরকালের আজাবের ব্যাপারে তাদের ভীতি প্রদর্শন করেন। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘(কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে) যাতে তুমি সতর্ক করতে পারো এমন জাতিকে, যাদের পিতৃপুরুষদের সতর্ক করা হয়নি। ফলে তারা উদাসীন।’ (সুরা ইয়াসিন : ৬)

দুই. তিনি মুমিনদের আল্লাহর কাছে সুউচ্চ মর্যাদার সুসংবাদ দেন। সুউচ্চ মর্যাদা বোঝাতে এখানে ‘কদামা সিদকিন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হলোÑ‘সত্য পদ’। এতে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে ইমানদারের সুউচ্চ মর্যাদা পাওয়া সত্য ও সুনিশ্চিত। এ সম্মান চিরকাল থাকবে। এ সম্মান পৃথিবীর পদমর্যাদার মতো নয় যে তা পাওয়া না পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়। আবার পদমর্যাদা লাভ হলেও তা চিরকাল থাকে না। অনেক সময় মৃত্যুর আগেই ব্যক্তির পদ-পদবি ধুলোয় মিশে যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে তা মৃত্যু অবধি স্থায়ী হলেও মৃত্যুর পর সেটি অবশিষ্ট থাকে না। কিন্তু ইমানদারের যে সম্মান, তা আল্লাহর কাছে চির অটুট থাকে। পরকালে সে এর সুফল পাবে।
মূল কথা হলো, মহানবী (সা.)-এর কাছে এই মর্মে ওহি পাঠানো হয়েছে যে তিনি মানুষকে সতর্ক করবেন ও মুমিনদের সত্যের প্রতিদানের সুসংবাদ দেবেন। বিষয়টি অন্য আয়াতে এভাবে এসেছে : ‘(এই কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে) আল্লাহর কঠিন শাস্তি সম্পর্কে (মানুষকে) সতর্ক করার জন্য এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদের এই সুসংবাদ দেওয়ার জন্য যে তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান।’ (সুরা কাহ্ফ, আয়াত : ২)

আলোচ্য আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘কাফিররা বলেÑএ তো একজন জাদুকর।’ তারা মহানবী (সা.)-কে জাদুকর বলার কারণ হলো তিনি যা বলেন তার সমকক্ষ কোনো কিছু এরা রচনা করতে অক্ষম। এর পরও তারা যদি সঠিকভাবে চিন্তাভাবনা করত, তাহলে উপলব্ধি করতে পারত যে সত্যিই তিনি একজন নবী। তাঁর কাছে ওহি আসে। কেননা তাঁর উচ্চারিত কথামালা এতই উঁচুমানের, যার সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না। জাদুর জন্য পার্থিব বিভিন্ন উপকরণের প্রয়োজন হয়। অথচ মহানবী (সা.) এমন কোনো উপকরণ ব্যবহার করেননি। আর জাদুমন্ত্রে প্রাকৃতিক জগৎসংক্রান্ত বক্তব্য থাকে না। মানবজীবন ও তার কর্মকা- নিয়ে কোনো আলোচনা থাকে না। আদেশ-নিষেধ ও আইন-কানুন থাকে না। সমাজ পরিবর্তনের নির্দেশনা থাকে না। অথচ মহানবী (সা.)-এর কাছে আগত ওহির মধ্যে এসব আলোচনা সন্নিবেশিত রয়েছে। তাঁর বক্তৃতায় মানুষের কল্যাণ ছাড়া অন্য কোনো উপাদান নেই। জাগতিক কোনো স্বার্থের গন্ধ নেই। জাদুকরের জাদুতে মানুষ সাময়িক বিস্মিত হয় বটে, কিন্তু ব্যক্তির জীবন বদলে যাওয়ার বার্তা সেখানে থাকে না। কিন্তু মহানবী (সা.)-এর কথা ও তাঁর কর্মকা-ের প্রভাবে মানুষের জীবন সুন্দর ও সুসজ্জিত হয়ে ওঠে। সূত্র : কালের কন্ঠ