বুধবার, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ইং ৯ই ফাল্গুন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

অজান্তেই ৯ উপায়ে ধ্বংস করছেন নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

স্বাস্থ্য ডেস্ক : আপনি হয়তো ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় এই প্রবাদটি শুনেছেন, ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’, তাই না? কিন্তু আমরা এই প্রবাদটির মর্ম ততক্ষণ পর্যন্ত বুঝতে পারি না যতক্ষণ না আমরা অসুস্থ হই! উদারহণত, এমন কিছু লোক আছে যারা অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনেই অভ্যস্থ। এরা অস্বাস্থ্যকর ডায়েট করেন, শরীরচর্চা করেন না এবং ধুমপানের মতো ক্ষতিকর কাজ করেন। এবং স্বাস্থ্যের প্রতি কোনো মনোযোগই দেন না। তবে যখন তারা তাদের জীবন যাপনের ধরনের কারণে কোনো রোগে আক্রান্ত হন তখন তারা তাদের স্বাস্থ্যের মূল্য বোঝেন এবং তাদের অস্বাস্থ্যকর কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অনুতাপ করেন।

সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, সুস্বাস্থ্য ছাড়া আমরা আমাদের জীবনটাকে পুরোপুরি উপভোগ করতে পারব না। এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই যা কিছু সম্ভব তার সবকিছুই করতে হবে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আমাদের দেহকে রোগসৃষ্টিকারী এজেন্টদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে। যেসব এজেন্ট পরিবেশ-প্রকৃতি থেকে আমাদের দেহে প্রবেশ করে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যদি যথেষ্ট শক্তিশালী হয় তাহলে বিপজ্জনক এবং প্রাণের জন্য হুমকি হতে পারে এমন সব রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীর চর্চা এসব আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী রাখে। তেমনি এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো আপনার অজান্তেই আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। আসুন জেনেও নেওয়া যাক কোন অভ্যাসগুলো অজান্তেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করছে।

১. মদপান
নিয়মিত মদপান করলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। অ্যালকোহলে থাকা টক্সিন বা বিষ শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করতে থাকে।

২. অতিরিক্ত ভ্রমণ
আজকাল যেন দুনিয়াটা ঘুরে দেখা একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে। আর যে যত বেশি স্থান দেখতে পারবে ততই যেন খ্যাতি। কিন্তু আপনি যদি প্রায়ই ভ্রমণ করেন বা আপনার যদি এমন কোনো চাকরি থাকে যার জন্য আপনাকে প্রচুর ভ্রমণ করতে হয় তাহলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে। কারণ নতুন নতুন প্রাকৃতিক পরিবেশ, জলবায়ু, পানি এবং খাদ্য এবং বিশ্রামহীনতার কারণে আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর চাপ পড়ে।

৩. দেহের অতিরিক্ত ওজন
দেহের ওজন বেড়ে গেলে উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। দেহে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলেও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। দেহে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়ার ফলে হরমোনগত ভারসাম্য নষ্ট হয়। আর তার ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।

৪. দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ
অতিরিক্ত ওজনের মতোই দীর্ঘমেয়াদের স্ট্রেস বা মানসিক চাপে আক্রান্ত হলেও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। স্ট্রেসের ফলে দেহে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোল এর মাত্রা বেড়ে যায়। কর্টিসোল এর মাত্রা বেড়ে গেলে তা রোগ-বালাই সৃষ্টিকারী উপাদানের বিরুদ্ধে দেহের লড়াই করার সক্ষমতা নষ্ট করে।

৫. নিঃসঙ্গতা
এমন অনেকে আছেন যারা তাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় ঘরে একাকি কাটিয়ে দিতে পছন্দ করেন। এতে মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা কমে যায়। কেননা একাকি থাকার ফলে নিঃসঙ্গতার বোধ এবং অবসাদ বেড়ে যায়। মস্তিষ্কে ডোপামিন এর মতো উপকারী হরমোন নিঃসরনের হার কমে গেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।

৬. আবেগ দমন করা
আপনি যদি এমন কেউ হন যিনি রাগ, দুঃখ, উত্তেজনা প্রকাশ না করে অবদমন করেন তাহলে আপনি আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছেন। কারণ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, আবেগ দমন করলে দেহে কর্টিসোল এর মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। সুতরাং আবেগগুলোকে দমন না করে বরং নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রকাশ করুন।

৭. অপুষ্টি
রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস জরুরি। আপনি যদি এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস মেনে না চলেন যাতে সব ধরনের জরুরি পুষ্টি উপাদানগুলো থাকে, যেমন, ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ, স্বাস্থ্যকর চর্বি, আঁশ, ইত্যাদি তাহলে আপনার শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিবে বা আপনি অপুষ্টিতে আক্রান্ত হবেন। এতে আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়বে। সুতরাং সুস্থ্য থাকতে চাইলে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

৮. অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার
অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ হলো ক্ষতিকর জীবাণুদের হত্যা করা। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক রক্তের শ্বেতকণিকাগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়।

৯. পানিশুন্যতা
আপনি যদি প্রতিদিন অন্তত দুই লিটার পানি না পান করেন তাহলেই আপনার দেহে পানিশুন্যতা দেখা দিবে। যার ফলে নানা রোগ-বালাই আক্রমণ করবে। পানিশুন্যতা আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও দুর্বল করে দিবে। কেননা পানির অভাবে রক্তের শ্বেতকণিকাগুলো শুকিয়ে যায়।

এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমানো, অনলাইনে অতিরিক্ত সময় কাটানো এবং চারপাশে অতিরিক্ত আওয়াজ প্রভৃতিও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তোলে।

Print Friendly, PDF & Email