বৃহস্পতিবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০১৮ ইং ১৩ই বৈশাখ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হায়দরাবাদের হার

স্পোর্টস ডেস্ক : উইলিয়ামসন আর ইউসুফ পাঠানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এক সময় মনে হয়েছিল হায়দরাবাদ সহজ জয় পেতে যাচ্ছে। মাত্র ৩১ বলে অর্ধশত রানে জুটির পর ম্যাচ হায়দরাবাদের দিকে কিছুটা হেলে পড়ে।

এর আগে দুই ওভারে (১৫ ও ১৬ তম) ৩৬ রান আদায় করেছিলেন এ দুই মারকুটে ব্যাটসম্যান। শেষ তিন ওভারে ৪৭ রান করা এ দুই ব্যাটসম্যানের ওপর প্রত্যাশার চাপ বেড়ে যায় সাকিবদের।

১৭তম ওভারের শেষ বলে উইলিয়ামসন বিদায় নিলে হায়দরাবাদ শিবিরে হারের শংকা জেগে উঠে। কিন্তু ইউসুফ পাঠানের ঝড়ো ব্যাট সমর্থকদের আশাবাদী করে তুলে।

ইউসুফ পাঠানের বিদায়ের পর ম্যাচ পুরোপুরি হেলে পড়ে চেন্নাইয়ের দিকে। তবে উইকেটে এসে আফগান স্পিনারের তাণ্ডবে পুরো স্টেডিয়ামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শেষ ওভারে হায়দরাবাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৯ রান।

প্রথম তিন বলে ৩ রান নেন ঋদ্ধিমান সাহা। শেষ ৩ বলে প্রয়োজন ১৬ রান। তখন ক্রিজে ছিলেন রশিদ খান। চতুর্থ বলে ব্রাভোকে ছক্কা মেরে আবারও ম্যাচে উত্তেজনার পারদ ঢালেন। পঞ্চম বলে আবারও বাউন্ডারি।

শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৬ রান। কিন্তু মাত্র এক রান নিতে সমর্থ হন আফগান এ খেলোয়াড়। মাত্র ৪ বলে ১৭ রান করে অপরাজিত থাকেন রশিদ খান। দল হারে ৪ রানে।

মাঝে কিছু সময় তাকে সঙ্গ দেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের বিদায়ের পর উইলিয়ামসনকে সঙ্গ দেন ইউসুফ পাঠান। পঞ্চম উইকেটের একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে জয়ের ঠিক কাছাকাছি নিয়ে যেতে থাকেন উইলিয়ামসন-পাঠান।

জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে হায়দরাবাদের প্রয়োজন ছিল ৪২ রান। ১৮তম ওভারের ৯ রান খরচ করে উইলিয়ামসনের উইকেট তুলে নেন ডুয়াই ব্রাভোকে। ওভারের শেষ বলটি স্লোয়ার দেন ব্রাভো।

বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে রবিন্দ্র জাদেজার হাতে ধরা পরেন হায়দরাবাদের অধিনায়ক। সাজঘরে ফেরার আগে ৫১ বলে ৫ চার ও সমান ছক্কায় ৮৪ রান করেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক উইলিয়ামসন।

১৮৩ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর তাড়া করতে নেমে ২২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে যায় হায়দরাবাদ। তৃতীয় উইকেটে কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি গড়ে দলকে চাপমুক্ত করেন সাকিব আল হাসান।

উইলিয়ামসন-সাকিবের মধ্যকার জুটিকে আর লম্বা হতে দেননি করন শর্মা। তার গুগলির শিকারে পরিনত হওয়ার আগে ১৯ বলে ২ বাউন্ডারি ও একটি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ২৪ রান করে ফেরেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব।

এর আগে রাইডুর ৩৭ বলে ৭৯ ঝড়ো ইনিংস ও সুরেশ রায়নার অনবদ্য অর্ধশতের ওপর ভর করে তিন উইকেটে ১৮২ রান সংগ্রহ করে চেন্নাই সুপার কিংস। সাকিব আল হাসানদের সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে এ চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায় ধোনী বাহিনী।

রোববার হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধি ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে চেন্নাই সুপার কিংস। বল হাতে কোনো কারিশমা দেখাতে পারেননি বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। চার ওভারে ৩২ রান খরচ করেও উইকেটের দেখা পাননি তিনি।

শুধু সাকিবই নয়, রোববার আইপিএলের ২০তম ম্যাচে হায়দরাবাদের কোনো বোলারই তেমন সফলতা পাননি। তবে প্রথম দিকে সাকিবদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণেই ছিল।

প্রথম ১০ ওভারে দুই উইকেটে সংগ্রহ ছিল মাত্র ৫৪ রান। দলের এমন বাজে অবস্থা থেকে দলকে টেনে নিয়ে যান রায়না ও রাইডু।

শেষদিকে আফগান স্পিনার রশিদ খান, সাকিব ও ভুবেনেশ্বর কুমারদের রীতিমতো তুলোধুনে করে চেন্নাইকে ১৮২ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে দেন রাইডু-রায়নারা।

ইনিংসের শুরুর দিকে ৩২ রানে দুই ওপেনার শেন ওয়াটসন এবং ডু প্লেসিসের উইকেট তুলে নিয়ে চেন্নাইকে এক ঘরে করে রাখেন ভুবেনেশ্বর ও রশিদ খান।

ভুবেনেশ্বর কুমারের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন শেন ওয়াটসন। ১১ রান করে রশিদ খানের লেগ স্পিনে কাবু চলীত আইপিএলে প্রথম খেলতে নামা ফাফ ডু প্লেসিস।

উইকেটে তুলে নেয়ার এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারায় একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যান রায়না-রাইডু। তৃতীয় উকেটে ৫৭ বলে ১১২ রানের জুটি গড়ে দলকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ার পথে নিয়ে যান তারা।

রান আউটের ফাঁদে পরার আগে ৩৭ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৯ রান করে ফেরেন রাইডু। তার বিদায়ের পরও ব্যাটিং তাণ্ডব অব্যাহত রাখেন রায়না। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে ৪৩ বলে ৫৪ রান করে অপরাজিত থাকেন চেন্নাইয়ের এ তারকা ক্রিকেটার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

চেন্নাই: ২০ ওভারে ১৮২/৩ রান (রাইডু ৭৯, রায়না ৫৪, ধোনি ২৫)।

হায়দরাবাদ: ২০ ওভারে ১৭৮/৬ রান (উইলিয়ামসন ৮৪, পাঠান ৪৫, সাকিব ২৪, রশিদ খান ১৭)।

ফল: চেন্নাই ৪ রানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: আম্বাতি রাইডু (চেন্নাই সুপার কিংস)।

Print Friendly, PDF & Email