বুধবার, ৯ই মে, ২০১৮ ইং ২৬শে বৈশাখ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

ড. কারজাবির ‘ফিকহুজ জিহাদ’

ড. ইউসুফ আল কারজাবির শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলোর একটি হচ্ছে ‘ফিকহুজ জিহাদ’ বা ‘জিহাদের বিধান’। এটি এখনো ইংরেজি বা বাংলায় অনূদিত হয়নি। তবে বইয়ের সারসংক্ষেপ ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। এ গ্রন্থের ওপর আরেকজন বড় ইসলামি চিন্তাবিদ তিউনিসিয়ার ড. রশীদ আল ঘানুসি ২০০৯ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন। এটিও ইন্টারনেটে পাওয়া যায় (Shoncharon.com দেখুন)। এ প্রবন্ধ থেকেই সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো তুলে ধরছি।
ড. কারজাবি জিহাদ সম্পর্কে গবেষণা করতে যে পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন তা ন্মিরূপ:

১. কুরআন ও সম্পূর্ণভাবে নির্ভুল সুন্নাহর ওপর নির্ভর করা। দুর্বল কোনো প্রমাণ গ্রহণ না করা। ২. ইসলামের ব্যাপক ফিকাহ সাহিত্যের সাহায্য গ্রহণ করা, কোনো বিশেষ মাজহাবের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করা। তারপর সবচেয়ে উপযুক্ত মত গ্রহণ করা। ৩. ইসলামের সাথে অন্যান্য ধর্মের এবং আইনব্যবস্থার তুলনামূলক অধ্যয়ন। ৪. দাওয়া, শিক্ষাদান, রিসার্চ, ফতোয়া, সংস্কার ও পুনর্জাগরণের ক্ষেত্র ‘ওয়াসতিয়া’ বা মধ্যপন্থা গ্রহণ করা। আজকের সমস্যার সমাধানে ইজতিহাদকে ব্যবহার করা; যেমন, আগের সে যুগের ফকিহরা তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে করেছিলেন।

জিহাদের বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে কারজাবি বলেন, জিহাদ ও কিতাল (যুদ্ধ)-এর মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। মক্কাতেই জিহাদের আয়াত নাজিল হয়েছিল; কিন্তু তখন কিতাল ছিল না। তখন জিহাদ ছিল দাওয়াহর। ড. কারজাবি ইমাম ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র ইবনুল কাইয়িমের উল্লেখ করে বলেন, কিতাল ছাড়াও জিহাদের ১৩টি পর্যায় রয়েছে। জিহাদ বিল নাফসের চারটি পর্যায়, শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদের দু’টি পর্যায়, মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের চারটি পর্যায় এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে জিহাদের তিনটি পর্যায় (হাত, মুখ ও অন্তর দ্বারা) রয়েছে।

ড. ইউসুফ আল কারজাবি আধুনিককালে পার্টি, পার্লামেন্ট, মতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে অত্যাচার বন্ধ করার প্রচেষ্টাকেও জিহাদ বলছেন। তিনি নানা পদ্ধতিতে সাংস্কৃতিক জিহাদের কথাও বলেছেন (যেমন ইসলামি সেন্টার প্রতিষ্ঠা)। জিহাদের ল্য সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ইসলাম আত্মরক্ষামূলক জিহাদের কথা বলেছে যদিও পূর্বে আক্রমণাত্মক জিহাদের পওর অনেকে বলেছেন। তিনি মনে করেন, আমাদের আগের ফকিহরা যে আক্রমণাত্মক জিহাদের কথা বলেছেন, তার ভিত্তি কুরআন বা সুন্নাহ নয়, বরং তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থা। তখন সব রাষ্ট্র পরস্পর সঙ্ঘাতে লিপ্ত ছিল এবং কোনো সর্বস্বীকৃত আন্তর্জাতিক আইন ছিল না।

কারজাবি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ১. সূরা তাওবায় মুশরিকদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে, তা সাধারণ আদেশ ছিল না। সেটা ছিল আরব মুশরিকদের একটি দলের বিরুদ্ধে। ২. সামরিক জিহাদ সালাত ও সিয়ামের মতো সবার ওপর ব্যক্তিগত ফরজ নয়। ব্যক্তিগতভাবে জিহাদের বিষয়কে সূরা বাকারা, সূরা আনফাল, সূরা মুমিনুন, সূরা রাদ, সূরা লুকমান, সূরা ফুরকান বা সূরা জারিয়াতে মুত্তাকিদের গুণাবলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ৩. যদি মুসলিমরা নিরাপদ থাকে তাহলে অমুসলিম রাষ্ট্রকে আক্রমণ করা বৈধ নয়। ৪. ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে স্বীকার করে। ৫. ইসলাম আন্তর্জাতিক আইনের প্রণয়ন এবং জাতিসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাকে স্বাগত জানায়। মুসলিমরা আন্তর্জাতিক আইন স্বীকার করে নেয়ায় এখন অন্য কোনো রাষ্ট্রের ওপর হামলার কোনো বৈধতা নেই।

ড: কারজাবি বলেন, বর্তমান অমুসলিম বিশ্বকে দারুল আহাদ (চুক্তিবদ্ধ দেশ) মনে করতে হবে। কেননা সব দেশই এখন জাতিসঙ্ঘের আওতায় নানা চুক্তিতে আবদ্ধ। ড. কারজাবি আরো বলেছেন, ইরহাব বা সন্ত্রাস আর জিহাদ এক নয়। সব ধরনের সন্ত্রাস ইসলামে নিষিদ্ধ। এর ব্যতিক্রম শুধু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রাম বা এ ধরনের অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রাম।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

সূত্র: নয়াদিগন্ত

Print Friendly, PDF & Email

এ জাতীয় আরও খবর

প্রতিবেশী ও এতিম সম্পর্কে নবীজি সা. এর হাদিস!

যেভাবে রমজানের প্রস্তুতি নেবেন

চাঁদ দেখা গেলে ১৬ মে পবিত্র রোজা

যেভাবে রূহ কবজ করা হয় মানুষের

সৌদিতে রোজা হতে পারে ১৬ মে

গ্রীষ্মকালে মুমিনের আমল