মঙ্গলবার, ১২ই জুন, ২০১৮ ইং ২৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

আলোর মুখ দেখছে আশুগঞ্জ কন্টেইনার নদীবন্দর স্থাপন প্রকল্প

আবারও আশুগঞ্জ কন্টেইনার নদী বন্দর স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। গত ২১ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে নতুন করে অনুমোদন পেয়েছে প্রকল্পটি।

বিস্তারিত সমীক্ষা না থাকায় ২০১১ সালে একনেকের অনুমোদন পাওয়ার পরও যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি ‘আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার নদীবন্দর স্থাপন’ প্রকল্প। এবার ২১ মে’র বৈঠকে আগের অনুমোদন পুরোপুরি বাতিল করে প্রকল্পটি নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের জুলাইয়ে শুরু হবে প্রকল্পের কাজ। লক্ষ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আশুগঞ্জ কন্টেইনার নদীবন্দর স্থাপন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারেরর নিজস্ব তহবিল থেকে (জিওবি)  ৮৬২ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৩১ কোটি টাকা। ভারতের দ্বিতীয় এলওসির (লাইন অব ক্রেডিট) অর্থ থেকে এখাতে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। সরকারের নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম, মোংলা ও অন্যান্য বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও প্রতিবেশী দেশে বিশেষ করে ভারত ও নেপালে কন্টেইনার পরিবহন এবং নদীপথে কন্টেইনার পরিবহন সহজতর করার মাধ্যমে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্যিক সুবিধা সৃষ্টি করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতেই সরকার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে কন্টেইনার নদীবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

আশুগঞ্জ দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার নদীবন্দর। এ বন্দরে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক জাহাজ আসে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কার্গো ও প্যাসেঞ্জার জাহাজ চলাচল করে। ২০০৪ সালে আশুগঞ্জকে নদীবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড প্রটোকল অনুযায়ী আশুগঞ্জ নৌবন্দরকে ‘পোর্ট অব কল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ প্রটোকল অনুযায়ী ‘পোর্ট অব কল’ উভয়দেশের নৌযানের মালামাল লোডিং, আনলোডিং সুবিধা দেবে। ওই প্রটোকলের আওতায় আশুগঞ্জ বন্দর পর্যন্ত নৌপথে পরিবহন করা ভারতীয় মালামাল বাংলাদেশের ট্রাক ও ট্রেইলারের মাধ্যমে ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া যাবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, আশুগঞ্জ ও কলকাতা নৌরুটের মাধ্যমে কন্টেইনার নৌ-ভেসেলের মাধ্যমে পরিবহন করা হবে এবং আশুগঞ্জ থেকে কন্টেইনারগুলো ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে আগরতলা পর্যন্ত পরিবহন করা যাবে। প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী এই নৌরুটে বছরে ৪ লাখ কন্টেইনার পরিবহন করা যাবে।

আরও : কারাগার থেকে বাসায় ফিরলেন আসিফ

আশুগঞ্জে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সুবিধা স্থাপন করা হলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ অঞ্চলসহ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। যা বাংলাদেশে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ বিবেচনায় আশুগঞ্জ কন্টেইনার নদী বন্দর স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। গত ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি একনেকের বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদনও পায়।

এ প্রকল্পে ভারতের প্রথম এলওসির এক বিলিয়ন ডলার থেকে অর্থায়নের প্রস্তাব ছিল। প্রকল্পের বিস্তারিত সমীক্ষা না থাকায় প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারত সরকারের মঞ্জুরি সহায়তায় ডব্লিউএপিসিওএস পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আশুগঞ্জের কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য কনসেপচ্যুয়াল ড্রইং ডিজাইনসহ প্রকল্পটির ওপর পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। এরপর আগে অনুমোদিত প্রকল্পটি বাতিল করে সম্পূর্ণ নতুনভাবে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

সম্ভাব্যতা সমীক্ষার আলোকে দ্বিতীয় এলওসির অর্থায়নে ৮৩১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটি ফের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর প্রকল্প প্রস্তাবটির ওপর পিইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্তের আলোকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় পুনর্গঠিত ডিপিপি পুনরায় প্রেরণ করে। পুনর্গঠিত ডিপিপি’র প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।

পিইসি সভায় উপস্থাপিত ডিপিপির তুলনায় পুনর্গঠিত ডিপিপির প্রাক্কলিত ব্যয় ৪৩১ কোটি টাকা বেশি। ভূমি অধিগ্রহণের সর্বশেষ সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এ খাতে ব্যয় ৩৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকা বেড়েছে। অবশিষ্ট ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছ পরামর্শক, পরামর্শকের ভ্যাট ও ট্যাক্স, ভ্রমণ, সম্মানী, অফিস সরঞ্জাম প্রভৃতি খাতের ব্যয়ের জন্য।

প্রকল্পের আওতায় ১২ দশমিক ৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। কার্গো হ্যান্ডেলিং ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে। সিভিল ওয়ার্ক (কমন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফ্যাসালিটির, পোর্ট ওয়ার্ক, কার্গো টার্মিনাল ইনফ্রা স্ট্রাকচার), ডিজাইন ও সুপারভিশন কাজের জন্য পরামর্শক সেবা দেওয়া হবে বলে নৌ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নৌপথে পণ্যবাহী কন্টেইনার পরিবহনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। এতে আর্থিক ও বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশ লাভবান হবে।

বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email

এ জাতীয় আরও খবর

‘গৃহকর্মী হিসেবে মেয়েদের কেন পাঠাতে হবে?’

রাজি থাকলে কাল খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেওয়া হবে

ঈদের আনন্দ প্রতিবন্দীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে-লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিও

দেশে বেকারের সংখ্যা ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন : পরিকল্পনামন্ত্রী

নাসিরনগরে অসহায় ও দুঃস্থদের মধ্যে ভিজিএফ‘র চাল ও নগদ টাকা বিতরণ

৬ কি.মি. দৈর্ঘ্যের ইফতার দস্তরখান বিছিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ল দুবাই