বৃহস্পতিবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১২ই আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

যেভাবে খুন করেছিলেন, সেভাবেই খুন হলেন!

ময়মনসিংহ নগরীর মাসকান্দা এলাকায় মিল্লাত তারাশী (৩২) নামক এক ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ খুনের খোঁজ খবর নিতে গেলে স্থানীয়রা জানায়, প্রায় আট বছর আগে ২০১০ সালে একই এলাকার আশানুর মিয়াকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মিল্লাত তাড়াশীসহ আরো ৫ জন মিলে কুপিয়ে খুন করে। মিল্লাত তারাশী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকায় স্বস্তি ফিরলেও কোন হত্যাকাণ্ডই কাম্য নয় বলে দাবি করেন স্থানীরা।

ময়মনসিংহ নগরীর মাসকান্দা এলাকায় আশানূর হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি চিহিৃত সন্ত্রাসী মিল্লাত তারাশী (৩২) নিহত হওয়ার ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। মিল্লাত তারাশীর হাতে খুন হওয়া আশানূরের পরিবারও একে প্রকৃতির বিচার হিসেবে ধরে নিয়ে এক প্রকার শান্তনা পেয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে পেরে বুকে জমানো চাপা কষ্ট হালকা হয়েছে বলছে তার পরিবার। নিহত মিল্লাত তারাশীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

গত ২৯ জুন বিকালে মাসকান্দা পুলপাড় মহল্লার মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে মিল্লাত তারাশীকে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে ওই দিন রাতে ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।

২০১০ সালের ৫ নভেম্বর একই এলাকার ফজলুল হকের ছেলে মটর মিস্ত্রি আশানূরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পাশের ধান ক্ষেতে কুপিয়ে হত্যা করে মিল্লাত তারাশী ও তার সহযোগীরা। ঘটনার পর দিন নিহতের বাবা বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় মিল্লাত তারাশীকে প্রধান আসামি করে পাঁচ জনের একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছে।

নিহত আশানূরের বড় বোন রেজিয়া খাতুন বলেন, মিল্লাত তারাশী এবং আমার ভাই এক সাথে চলাফেরা করত। তাদের মধ্যে সামান্য কথাকাটাকাটির জেরেই ৮ বছর আগে আশানূরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে মিল্লাত তারাশী এবং তার সহযোগীরা।

ঘটনার এতো বছর পরেও আমরা বিচারের মুখ দেখছিলাম না। তারা জামিনে এসেও আমাদেরকে মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখাতো। আমার ভাইকে মিল্লাত তারাশী যে ভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে তাকেও মানুষ সে ভাবে মেরেছে। আজ আমরা ভাই হত্যার বিচার পেয়েছি এর চাইতে বড় কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। বাকি হত্যাকারীদেরও এরকম ভাবে বিচার হবে সেই প্রত্যাশা করছি।

আশানূরের বোন জামাই শফিকুল ইসলাম জানান, আমার শ্যালককে হত্যার পর মিল্লাত তারাশী যখন রাস্তার উপর দিয়ে বুক ফুলিয়ে চলতো তখন আমাদের খুব কষ্ট হতো। শ্যালক হত্যার বিচার চেয়ে সাংবাদিক সম্মেলন এবং মানববন্ধন করেছি কোন কাজ হয়নি। মিল্লাত তারাশী খুন হওয়ার পর আমরা স্বস্তি পেয়েছি।

১৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন-অর রশিদ এবং সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বলেন, মিল্লাত তারাশীর রাজনৈতিক তেমন কোন পরিচয় ছিল না। তবে সে যুবলীগের লোকজনের সাথে ঘোরাফেরা করতো।

মিল্লাত তারাশী আশানূর হত্যা মামলার অন্যতম আসামী। আমরা শুনেছি তার বিরুদ্ধে আরো মামলা রয়েছে। তবে হাদিসে আছে কেউ কাউকে হত্যা করলে তাকেও মানুষ হত্যা করে। মিল্লাত তারাশীর ক্ষেত্রেও সেটি ঘটেছে। তবে কোন হত্যাকাণ্ডই কাম্য নয় দাবি করে এর বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।

স্থানীয় কয়েকজন দাবি করেন, মিল্লাত তারাশী হত্যার পর মাসকান্দা বাসন্ট্যান্ড এলাকা শান্ত হয়েছে। সে মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিল। তার বিরুদ্ধে নেত্রকোণার পূর্বধলা থানায়ও মাদক মামলা রয়েছে বলে তারা জানান।

মিল্লাত তারাশী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৩০ জুন শনিবার রাতে তার স্ত্রী লাভলী আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় ১১জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

লাভলী আক্তার জানান, একটি মোটর সাইকেলকে কেন্দ্র করে পূর্ব শুত্রুতার জেরেই তার আসামিকে ওই আসামিরা হত্যা করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই এস এম নূর মোহাম্মদ বলেন, তারাশী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাব্বি নামে এজহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকীদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে সার্বিক দিক বিবেচনা করেই মামলার তদন্ত করা হচ্ছে।