শনিবার, ১৪ই জুলাই, ২০১৮ ইং ৩০শে আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

আজ হজ কার্যক্রম উদ্বোধন শনিবার ফ্লাইট শুরু

চলতি বছর পবিত্র হজ পালনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। আগামী শনিবার ভোরে বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইটে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন হজযাত্রীরা। এ লক্ষ্যে আজ বুধবার রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর হজযাত্রীরা জেদ্দায় যাত্রার প্রস্তুতি নিবেন। আজ থেকেই হজযাত্রীরা ক্যাম্পে অবস্থান করতে পারবেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২১ আগস্ট পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর পবিত্র হজ পালনের জন্য বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছেন এক লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন হজযাত্রী। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ছয় হাজার ৭৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন এক লাখ ২০ জন। বেসরকারি ব্যবস্থায় ৫২৮টি হজ এজেন্সি হজ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে ৫৫ হাজার হজযাত্রীর জন্য বিমানের টিকিট বুকিং দেয়া হয়েছে। প্রায় ২০ হাজারের মতো ভিসা লজমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। সরকারি হজযাত্রীদের জন্য সৌদি আরবে বাড়িভাড়া ও খাবারের জন্য ক্যাটারিংসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার এজেন্সিগুলোও বাড়ি ভাড়া সম্পন্নসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখনো অনেক এজেন্সির মালিক সৌদি আরবে বাড়িভাড়া ও মোয়াল্লেমদের সাথে বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কাজ করছেন।

আজ বুধবার আশকোনায় ক্যাম্পে হজ কার্যক্রম শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজ কর্যক্রম উদ্বোধন করবেন এবং হজযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। আগামী শনিবার ১৪ জুলাই হজ ফ্লাইট শুরু হবে। ফ্লাইট শুরুর দিনে সৌদিয়া ও বাংলাদেশ বিমানসহ ১০টি ফ্লাইট ঢাকা থেকে জেদ্দায় যাবে। ভোর ৩টা ৪৫ মিনিটে সৌদিয়া এয়ারের এসভি ৮০৩ ও বাংলাদেশ বিমানের সকাল ৭টা ৫৫মিনিটে বিজি ১০১১ ফ্লাইটে হজযাত্রীগণ সৌদি আরবে যাত্রা শুরু করবেন। হজ ফ্লাইট শেষ হবে ১৫ আগস্ট। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২৭ আগস্ট এবং শেষ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ বিমান ১৮৭টি ফ্লাইটে ৬৪ হাজার ৯৬৭ জন হজযাত্রী পরিবহণ করবে আর সাউদি এয়ারলাইন্স ১৮৮টি ফ্লাইটে ৬১ হাজার ৮৩১ হজযাত্রী পরিবহন করবে।

এদিকে সাধারণ এজেন্সি মালিকরা বলছেন, বাংলাদেশে হজ ব্যবস্থাপনায় সুন্দরভাবে প্রস্তুতি চলছে। এতে মৌলিক কোনো সমস্যা নেই। তবে সৌদি আরবে মোয়াল্লেমগণের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। হজযাত্রীদের কাছ থেকে যে ক্যাটাগরির মোয়াল্লেম ফি নেয়া হয়েছে, সেখানে সে ক্যাটাগরির মোয়াল্লেম সার্ভিসের পরিমাণ কম। তাই বেশকিছু এজেন্সিকে বেশি মূল্য দিয়ে মোয়াল্লেম সার্ভিস নিতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তি ও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করছেন। এদিকে ৪০ দিনের কমে কোনো ফিরতি টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা অনুযায়ী তারিখের টিকিট না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের। অপরদিকে সাধারণ এজেন্সিগুলো এবছর গতবারের মতো রিপ্লেসমেন্টের সুবিধা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এ বিষয়ে আবাবিল ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. আবু ইউসুফ বলেন, বেশ কয়েকজন হজযাত্রী অসুস্থতা ও মুহরিম না পাওয়ার কারণে হজে যেতে পারছেন না। তাদের পরিবর্তে অন্য হজযাত্রীকে যাওয়ার সুবিধা করে দিলে তিন ধরনের উপকার পাওয়া যাবে। এক. নির্ধারিত কোটা পূরণ হবে, দুই. বাড়িভাড়াসহ আনুসাঙ্গিক ব্যয়ের ক্ষতি থেকে এজেন্সিগুলো রক্ষা পাবে, তিন. আগামী বছরের হজযাত্রীর কোটা থেকে চাপ কমবে।

আজমল ট্রাভেলস এর স্বত্ত্বাধিকারী সাঈদ আহমেদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র চার শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট দেয়া হয়ে থাকে। তাতে প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ হয় না। এজন্য গতবারের ন্যায় ১৫ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট দেয়া হলে সকলেই হজ করতে পারবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এলিগেন্স ট্রাভেলস এর স্বত্ত্বাধিকারী আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা সকল হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করেছি। এখন কোনো হজযাত্রী যেতে না পারলে বাড়ি খালি থাকবে। এতে করে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এজন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক হজযাত্রীর রিপ্লেসমেন্ট দেয়ার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান।

এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজ ব্যবস্থাপনা এবার কোনো ঘাটতি নেই। শুরুর দিকে যাতে ফ্লাইট খালি না যায় সেজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৫ হাজার টিকিট সংগ্রহ করেছে এজেন্সিগুলো। বিশ হাজারের বেশি ভিসা লজমেন্ট হয়েছে।

ধর্ম সচিব আনিছুর রহমান বলেন, হজ ফ্লাইট যাতে খালি না যায় সেজন্য এজেন্সিগুলোকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। তথ্য সংগ্রহ করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, এবার গত বছরের চেয়ে আরও বেশি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হজ ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের থাকার জন্য বাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের পক্ষে অধিকাংশ এজেন্সিও বাড়িভাড়ার কাজ শেষ করেছে। এ বছর বালাদেশ বিমানের টিকেট পাওয়া সহজ করতে এজেন্সিগুলো সরাসরি বাংলাদেশ বিমান থেকে হজযাত্রী সমপরিমাণ টিকেট সংগ্রহ করতে পারবে বলে তিনি জানান।