বুধবার, ১৮ই জুলাই, ২০১৮ ইং ৩রা শ্রাবণ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

পাওনা টাকা আদায়ে আইনগত পদক্ষেপ কিভাবে নিবেন ? রইল একজন ওসির পরামর্শ!!

পাওনা টাকা আদায়েরর জন্য দুই রকমের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। প্রথমত স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমে পাওনা টাকা আদায় করার চেষ্টা করা যেতে পারে।

যেসব অঞ্চলে সালিশি প্রথা বিজ্ঞজনদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় এবং যেখানকার অধিবাসীরা শান্তিপ্রিয় ও যুক্তিবোধসম্পন্ন, তারা এই উপায়ে এরকম বিরোধের নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করে থাকে। এতে মামলা-মোকদ্দমার মতো দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়ানো যায়।

স্থানীয় বিজ্ঞজনরা সালিশে বসে ন্যায়ানুগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যদিয়ে পাওনাদারকে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে। পাওনা টাকা আদায়ের আরেকটি উপায় আদালতে মামলা-মোকদ্দমা চালানো। ফৌজদারি ও দেওয়ানি এই দুই প্রকার আইনেই পাওনা টাকা আদায়ের বেশকিছু প্রতিকার পাওয়া যায়।

স্থানীয় শালিশ বিচারের আশ্রয়ঃ

আপনি এ ব্যপারে প্রথমে গ্রাম্য আদালতে অভিযোগ করবেন কিংবা এলাকার মাতব্বর/মুরুব্বীদেরকে জানিয়ে তাদের আপনার বৈধ কাগজ দেখিয়ে পাওনা টাকা আদায়ের দেয়ার আহ্বান করতে পারেন।

এক্ষেত্রে গ্রাম্য আদালত কিংবা মাতব্বর/মুরুব্বীরা আপনাকে এবং পাওনাদারকে ডেকে বৈঠকের মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই যারা প্রভাবশালী, তার প্রভাবের কাছে স্থানীয় বিচার টিকেনা, এক্ষেত্রে যদি বৈঠকের সিদ্ধান্ত আপনার পক্ষে না যায় তবে হতাশ হবেন না। আপনার উপর কেউ কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবে না।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত আপনি যদি না মানেন তবে তাদের পরিষ্কার করে বলে দিবেন যে আমি আপনাদের সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারছিনা ফলে আমি আদালতে আইনের শরণাপন্ন হবেন। আইন ও আদালত আপনার পাওনা টাকা ফিরে পেতে আপনাকে যথেষ্ট প্রতিকার দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনি ফৌজদারী আদালত অথবা দেওয়ানী আদালত দুই আদালতেই আপনার পাওনা টাকা ফিরে পেতে মামলা করতে পারবেন।

থানায় মামলাঃ

থানা পাওনাদারের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের মাধ্যমে আতœসাতের মামলা করতে হবে। পাওনা টাকার দাবীর সাপেক্ষে যে সমস্ত কাগজ পত্র বা যে সমস্ত প্রমাণ আপনার কাছে আছে সে সব কিছু তদন্তকারী অফিসারের নিকট জমা দিতে হবে। যেমন- রশিদ থাকতে পারে-ইত্যাদি যে সমস্ত ডকুমেন্টগুলো আছে সেগুলি নিয়ে যেতে হবে।

আদালতে মামলাঃ

আদালতে যত মামলা-মোকদ্দমা হয়, তার একটা বড় অংশই পাওনা টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে। আদালতে মামলা দায়ের পূর্বে পাওনা টাকার দাবীর সাপেক্ষে যে সমস্ত কাগজ পত্র বা যে সমস্ত প্রমাণ আপনার কাছে আছে সে সব কিছু নিয়ে একজন আইনজীবীর নিকট যেতে হবে।

আইনজীবির মাধ্যমে পাওনাদারকে লিগ্যাল নোটিশ দিতে হবে। লিগ্যাল নোটিশে পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য কয়েক দিন সময় দিতে হবে।

লিগ্যাল নোটিশে দেওয়া উক্ত সময়ের মধ্যে যদি পাওনাদার আপনার পওনা টাকা পরিশোধ করে তাহলেতো ভাল। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে যদি উক্ত টাকা পরিশোধ না করে সেক্ষেত্রে পাওনাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এজন্য প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য প্রমাণগুলো সাথে নিয়ে যেতে হবে নিকটতস্থ কোর্টে। সেখানে গিয়ে একজন ভাল আইনজীবির মাধ্যমে পাওনাদারের বিরুদ্ধে একটি মানি সুটের মামলা করতে হবে।

থানা কিংবা আদালতে যেখাইেন মামলা করা হোব না কেন সমস্ত সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত যদি সন্তোষ্ট হয় তবে আদালত পাওনাদারের বিরুদ্ধে ডিক্রি জারী করতে পারে।

আদালত কি পরিমাণ টাকা জরিমানা করতে পারে? এখানে মূল বকেয়া টাকা প্রদানের জন্য ডিক্রি দিতে পারে, যেমন যে পাঁচ লক্ষ টাকা আত্মসাতের জন্য সেই পাঁচ লক্ষ টাকা প্রদানের জন্য রায় দিতে পারে। পাওনা টাকার উপর সুদ প্রদানের ডিক্রি প্রদান করতে পারে।

অর্থাৎ এই যে পাঁচ লক্ষ টাকা দীর্ঘ দিন যাবৎ পাওনাদারের কাছে বকেয়া পরে আছে সেই সময়ের উপর নিদিষ্ট হারে সুদ প্রদানের জন্য আদালত ডিক্রি দিতে পারে। এছাড়া মামলা পরিচালনার ব্যয় পরিশোধের জন্য দেনাদারের বিরুদ্ধে ডিক্রি দিতে পারে।

অর্থাৎ এই মামলাটি পরিচালনার জন্য আপনার যে পরিমাণ খরচ হয়েছে সেই খরচও পাওনাদারকে দেওয়ার জন্য আদেশ দিতে পারে আদালত। একই সাথে আরো কিছু ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দিতে পারে আদালত। একই সাথে পাওনারদারের বিরুদ্ধে দন্ড বা জেল হাজতের ব্যবস্থা করতে পারে আদালত।

জনসচেতনায়- মোঃ সাব্বির রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত), বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা, ব্র্রাহ্মণবাড়িয়া।

এ জাতীয় আরও খবর