শুক্রবার, ৫ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২০শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

ব্যাগের ওপর সবজি দিয়ে ঢাকা হয় লাশের টুকরা!

নারায়ণগঞ্জ মাসদাইর এলাকায় রত্না চক্রবর্তীর ভাড়া বাসায় স্বপনকে হত্যায় ব্যবহৃত বঁটি ও মাথায় আঘাত করা শিল উদ্ধার করে পুলিশ। পিন্টু দেবনাথ এবং রত্নাকে সঙ্গে নিয়ে এ অভিযান চালানো হয়

স্বপন সাহাকে হত্যার পর লাশ সাত টুকরা করে পাঁচটি বাজারের ব্যাগে ভরা হয়। এরপর ঘাতক পিন্টু দেবনাথ ও তার বান্ধবী রত্না চক্রবর্তী সেই ব্যাগগুলো নিজেরা নিয়ে বাসার পেছনের দেয়ালের পাশে রেখে দেয়। নিরাপদে লাশ নদীতে ফেলতে এবং মানুষের নজর এড়াতে লাশের টুকরাভর্তি ব্যাগের ওপরের অংশ বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে ঢেকে রাখে তারা। এরপর নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর থেকে তিন দফায় ব্যাগগুলো রিকশায় করে শীতলক্ষ্যা নদীর ১ নম্বর সেন্ট্রাল ঘাটে নেওয়া হয়। সেখানে থেকে নৌকা ভাড়া করে মাঝনদীতে নিয়ে মাঝির অগোচরে ব্যাগগুলো পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। পাঁচ দিনের রিমান্ডে থাকা পিন্টু তার ঘনিষ্ট বন্ধু স্বপনকে হত্যার বিষয়ে পুলিশকে এসব তথ্য দিয়েছে।

রোববার রিমান্ড শেষে পিন্টুকে আদালতে তোলা হবে। পুলিশ আশা করছে, রোববার সে আদালতে স্বপন হত্যার ঘটনায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে স্বপন হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় পিন্টুর বান্ধবী রত্না। রত্নার জবানবন্দিতে উঠে এসেছে কীভাবে, কখন তার মাসদাইরের ভাড়া বাসায় স্বপনকে অচেতন করে হত্যার পর লাশ টুকরা করা হয়।

মামলার তদন্তসংশ্নিষ্ট একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘাতক পিন্টু নিহত প্রবীর ঘোষ ও স্বপন সাহার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। দু’জনই পিন্টুর ষড়যন্ত্রে তারই হাতে নির্মমভাবে খুন হন। দুই বছর আগে স্বপনকে হত্যার পর ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। তবে প্রবীরকে হত্যার ২১ দিন পর পুলিশ পিন্টুর দেখানো মতো তার আমলাপাড়া এলাকার ভাড়া বাসার সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে প্রবীরের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় প্রবীর হত্যার বিষয়টি পিন্টু স্বীকার করলে পিন্টুর ওপর সন্দেহ বাড়ে নিখোঁজ স্বপন সাহার পরিবারের।

এরপর গত ১৫ জুলাই বিকেলে নিখোঁজ স্বপনের বড় ভাই অজিত সাহা সদর মডেল থানায় পিন্টু দেবনাথ, রত্না চক্রবর্তী, আবদুল্লাহ আল মামুন ও বাপেন ভৌমিককে আসামি করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলার সূত্র ধরে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জানতে পারে, নিখোঁজ স্বপনের দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে পিন্টুর বান্ধবী রত্না। এরপরেই রত্নাকে গ্রেফতার করে রিমান্ড নিয়ে পিন্টুর মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে ভয়ংকর তথ্য। প্রবীরকে হত্যার প্রায় দুই বছর আগে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর মোবাইল ফোনে ডেকে রত্নার মাসদাইরের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসা হয় স্বপনকে। সেখানে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তা খাওয়ানো হয় স্বপনকে। এতে স্বপন অচেতন হয়ে পড়লে তার মাথায় শীলপাটা দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ বাথরুমে নিয়ে বটি দিয়ে স্বপনের লাশ সাত টুকরা করে পাঁচটি বাজারের ব্যাগে ভরে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা হয়।

রিমান্ডে পিন্টু আরও জানিয়েছে, স্বপনকে হত্যা করা হয় রত্নার সহায়তা নিয়ে। আর প্রবীরকে একাই হত্যার কয়েকদিন পর রত্নার বাসায় গিয়ে সবকিছু তার কাছে খুলে বলেছিল পিন্টু। তখন রত্না পিন্টুকে এসব বিষয় কাউকে না বলার পরামর্শ দেয়। কিন্তু প্রবীরকে হত্যার পর পিন্টু যখন বেশি বিচলিত হয়ে পড়ছিল তখন রত্না পিন্টুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলা কমিয়ে দেয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম বলেন, রিমান্ডে স্বপন হত্যার বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে পিন্টু। কীভাবে স্বপনকে হত্যার পর লাশ গুমের জন্য শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলেছে, তাও বলেছে। আমরা পিন্টুকে নিয়ে স্বপনের লাশের খন্ডিত অংশগুলো শীতলক্ষ্যা নদীর যেখানে ফেলা হয়েছে, সে স্থান চিহ্নিত করেছি। তবে লাশ পাওয়া যাবে কি-না, তা বলা সম্ভব নয়।

নারায়গঞ্জে চাঞ্চল্যকার প্রবীর হত্যা মামলার তদন্তে পুলিশ জানতে পারে দুই বছর আগে পিন্টুর আরেক বন্ধু স্বপন নিখোঁজ হন। এরপর বেরিয়ে আসে প্রবীরের মতো স্বপনকেও একইভাবে খুন করে সে। সূত্র: সমকাল