শুক্রবার, ১২ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২৭শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

‘সর্ষের ভেতরের ভূত’ তাড়াতে হবে : অধ্যাপক আশরাফ

‘কোমলমতি’ শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনে ‘গুজব’ ছড়ানোর নেপথ্যে সর্ষের মধ্যে ভূত দেখছেন সরকারি তিতুমীর কলের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আশরাফ হোসেন। এই অধ্যাপকের মতে, যারা গুজবকে নিবৃত করার কথা, তারাই গুজবকে উস্কে দিচ্ছেন। খোদ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সরকারি কর্মকর্তারাও এমন গুজবে কান দিয়েছেন।

আমাদের সময় ডটকমকে দেওয়া একান্ত আলাপচারিতায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকৃত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

এখানে সাক্ষাৎকারে চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলোঃ

আমাদের সময় ডটকমঃ শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনে আপনার মূল্যায়ন কি?

আশরাফ হোসেনঃ দেখুন, ওদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য খুবই যৌক্তিক। আমি এ অহিংস আন্দোলনকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। শিক্ষার্থীরা আমাদের এবং সড়কের মধ্যে থাকা অসঙ্গতিগুলো প্রকাশ্যে তুলে ধরেছে। যা বড্ড দরকার ছিল। তবে শেষ ভালটা আর হলো না।

আমাদের সময় ডটকমঃ ভাল না হওয়ার পেছনে কি কারণ?

আশরাফ হোসেনঃ আমি তো এর জবাবে বলব, গুজবে কান দেওয়ার কারণেই এমনটা হয়েছে। আর যারা এটা ছড়িয়ে অহিংস অবস্থাকে সহিংস করেছে, তারা সাংঘাতিক অপরাধ করেছে। তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। যে কাজগুলো তারা পূর্বেও করেছে। সাধারণ, জনপ্রিয় ছাড়াও অনেক সরকারি কর্মকর্তারাও এমন গুজবে ঘি ঢেলেছেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও এমন নিন্দনীয় কাজে সহয়তা করেছেন। আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস কেন্দ্রীক ঘটনাটি ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। তখন সকলের উচিত ছিল এই উত্তাপকে ঠাণ্ডা করা। কিন্তু অনেকেই ঘটনার সত্যতা যাচাই না করেই উত্তাপ আরও বাড়িয়েছে।

আমাদের সময় ডটকমঃ ‘গুজব’ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?

আশরাফ হোসেনঃ সকলকে যৌক্তিক আচরণ করতে হবে। গুজব ছড়লেও তা সহসাই কানে তোলা যাবে না। চিলে কান নিয়েছে বলে আমাকে কান না চেক করেই চিলের পেছনে দৌঁড়ালে তো হবে না। গুজবের ভয়াবহতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আগে যাচাই করতে হবে। আর যারা ‘গুজব’ ছড়ায় তাদের তাড়াতে হবে।

আমাদের সময় ডটকমঃ বাংলাদেশে কোনো অহিংস আন্দোলনই সফল ইতি টানতে পারে না কেন?

আশরাফ হোসেনঃ না, টানতে পারে। ১৯৯৬ সালের ‘জনতার মঞ্চ’ এর উদাহরণ। সফল না হওয়ার পেছনে বলতে পারি, অহিংস আন্দোলনে স্বার্থান্বেষী একটি মহল চায় তাদের স্বার্থ হাসিল করতে। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে চায়। এটার অপব্যবহার করে। এতেই সুষ্ঠু  আন্দোলন চোরাবালিতে হারিয়ে যায়।

আমাদের সময় ডটকমঃ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কোন ভুল-ভ্রান্তি ছিল কি না?

আশরাফ হোসেনঃ না, ছিল না। কোমলমতিরা যা করেছে তা ভাল করেছে। তবে সুযোগ সন্ধানীরা আন্দোলনকে ডাইভার্ট করার জন্য অপকৌশল চালিয়েছেন, যার তীব্র নিন্দা জানাই।

আমাদের সময় ডটকমঃ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ছাত্রলীগের জড়িত বলে বিস্তর অভিযোগ ওঠছে, বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?

আশরাফ হোসেনঃ হামলার সূত্রপাত কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আক্রমণ পর থেকে। শিক্ষার্থীরা সেখানে ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ আক্রমণ করে, পাল্টা হামলার শিকার হয় তারাও। দেখুন, আপনার বাসায় আক্রমণ করতে তো কেউ বসে থাকবে না। আপনিও প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন। তবে এখন যারা আন্দোলন করছে, তারা কারা? তারা কি কোমলমতি? তবে হামলার ঘটনায় জড়িত যেই হোক না কেন, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। এটা খুবই নিন্দনীয় কাজ।

আমাদের সময় ডটকমঃ আপনার কলেজেরই ছাত্র রাজিব হোসেন। যে কিনা দুই বাসের টক্করে হাত হারিয়ে পরে মারা যায়। তার দুর্ঘটনার বিষয়ে আপনার প্রতিষ্ঠান কি করেছে?

আশরাফ হোসেনঃ আমি এবং আমার প্রতিষ্ঠান প্রথম থেকেই রাজিবের পাশে ছিলাম। আমরা আর্থিকভাবে সহয়তা করেছি। আমাদের কলেজের প্রতিনিধি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করেছে।

আমাদের সময় ডটকমঃ তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের কারণে নিহত রাজিবের ক্ষুব্ধ সহপাঠীরা এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার প্রতিবাদ করতে পারেনি বলে অভিযোগ আছে, আপনি কি বলছেন?

আশরাফ হোসেনঃ না, এমন অভিযোগ আমার কানে আসেনি, এই প্রথম আপনার নিকট শুনলাম। আর কেনই বাধা দিবে, রাজিব তো আমাদের প্রতিষ্ঠানের ছেলে।

আমাদের সময় ডটকমঃ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবির সঙ্গে আপনার কোনও দ্বিমত আছে?

আশরাফ হোসেনঃ সবগুলোই ঠিক আছে, তবে স্টপেজ ছাড়াও ছাত্রদের বাসে উঠাতে হবে- এমনটা হলে তো হ-জ-ব-র-ল তৈরি হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানর সামনে স্টপেজ না থাকলে তা করা উচিত।

আমাদের সময় ডটকমঃ সোমবার নতুন সকড় আইনের খসড়া অনুমোদিত হয়েছে, আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

আশরাফ হোসেনঃ প্রথমত এটি আইন-কানুনের ব্যাপার। আমি পুরো বিষয়টি এখনও পড়িনি। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে পক্ষে এটি একটি ধাপ।

আমাদের সময় ডটকমঃ শিক্ষার্থীদের রাস্তায় চলাচলে নিয়ম-কানুন নিয়ে আপনার কি পরামর্শ থাকবে?

আশরাফ হোসেনঃ শুধু শিক্ষার্থী কেন, আমাদের সকলকেই সচেতন হতে হবে। অভিভাবককে সচেতনতার প্রতি জোর দিতে হবে। কেননা সড়কে যেকোনো দুর্ঘটনাই দুঃখজনক।

দীর্ঘ এই আলাপচারিতায় কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. মোসাঃ আবেদা সুলতানাও উপস্থিত ছিলেন। তিনিও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহমত পোষণ করেন।