বৃহস্পতিবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১২ই আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

গরু আছে, এবার গুঁড়ির খোঁজে

নিউজ ডেস্ক: কুরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র দুই দিন। পর্যাপ্ত দেশি গরুর আমদানি থাকায় এ বছর রংপুর অঞ্চলে পশুর দামও খুব চড়া নয়। এরই মধ্যে ক্রেতারা তাদের পছন্দের গরু-ছাগল কিনে ফেলেছেন।

কিন্তু ঈদের দিনে কোরবানির গরুর মাংস কিংবা হাঁড় কাটতে গাছের গুঁড়ির বিকল্প নেই। মানুষ তাই পশুর হাটগুলোতে এখন গরুর পাশাপাশি হন্যে হয়ে খুঁজছে গাছের গুঁড়ি।

আগেকার দিনে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে মাংস কাটার জন্য একখণ্ড গাছের গুঁড়ির অভাব হতো না। কিন্তু বর্তমানে দা, ছুরি, বটিসহ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও মাংস কাটতে গাছের গুঁড়ির অভাবই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রংপুর অঞ্চলে ঈদকে ঘিরে বিষয়টির সমাধানে কাঠমিস্ত্রিরা বর্তমানে আস্ত গাছ কিনে খণ্ড খণ্ড করে গুঁড়ি বানিয়ে জমজমাট ব্যবসা করছেন। প্রত্যেক হাটে ক্রেতারা তাই গরু কেনার পাশাপাশি দু‌ই-একটি করে গাছের গুঁড়ি কিনে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছেন। বিভিন্ন সাইজ অনুযায়ী এই গুঁড়ির দাম নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শহর কিংবা গ্রামে মাংস বিক্রেতারা (কসাই) হাঁড় ও মাংস টুকরো টুকরো করেন সমতল একটি গাছের গুঁড়ির ওপর রেখে। শহরকেন্দ্রিক অনেকে ওই মাংস বিক্রেতাদের দিয়ে কুরবানির পশুর মাংস তৈরি করে নিলেও এ সংখ্যা হাতেগোনা। তাছাড়া মজুরি দিতে চাইলেও একইদিনে একই সময় মাংস তৈরির জন্য বিক্রেতাদের পাওয়া যায় না। তাই যারা পশু কুরবানি দেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দা, ছুরি, বটিসহ গাছের গুঁড়ির চাহিদা রয়েছে।

রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, কুরবানির পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে এই অঞ্চলের আট জেলায় এক লাখ ১০ হাজার ৫২০টি বাণিজ্যিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩৩ হাজার ১৫৫টি। এসব খামারে প্রায় সাড়ে চার লাখ পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছে খামারিরা।

এ ছাড়া আরও দুই লক্ষাধিক গৃহস্থ বাড়িতে লালন-পালন করে প্রায় ১০ লাখ পশু বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে ছাগল ও ভেড়া রয়েছে প্রায় তিন লাখ।

এবার রংপুর বিভাগের আট জেলায় কুরবানির ঈদে পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ১২ লাখ। এ কারণে লোকজন স্বস্তিতে এবার সাধ্য অনুযায়ী কুরবানির পশু কিনতে পারছেন। এ ছাড়া অতিরিক্ত পশু ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।

কুরবানির পর বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে পরিবারের লোকজন সবাই মিলে মাংস তৈরি করেন। এ ক্ষেত্রে তারা প্রথমে পশুর চামড়া ছড়ানোর পর মাটিতে কলার পাতা বিছিয়ে মাংসগুলো তার ওপর রাখেন। এরপর গাছের গুঁড়ির ওপর রেখে হাঁড় ও মাংস কাটেন।

আগেকার দিনে অধিকাংশ বাড়িতে পরিত্যক্ত গাছের গুঁড়ি ব্যবহার করা হলেও এখন তা মেলে না। তাই এই প্রয়োজনকে কাজে লাগিয়ে কুরবানির ঈদকে ঘিরে কাঠ ব্যবসায়ীরা গাছের গুঁড়ির জমজমাট ব্যবসা করছেন।

সরেজমিনে আজ রবিবার রংপুরের অন্যতম পশুরহাট লালবাগহাটে দেখা যায়, জমজমাটভাবে চলছে গাছের গুঁড়ির ব্যবসা। ক্রেতারা পশু কেনার পর এই গুঁড়ি হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। গরুর চেয়ে এই গুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি। ক্রেতার চাহিদা মেটাতে হাটেই করাত দিয়ে গাছ কেটে গুঁড়ি বানিয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। একেকটি গুঁড়ি আকার অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

নগরীর বাবুপাড়াএলাকার ওয়াহিদুল ইসলাম কুরবানির গরু কেনার পর ৬০০ টাকা দিয়ে দুটি গাছের গুঁড়ি নিয়ে ফিরছিলেন। হাতে কি?- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এইটা না হইলে কি গোস্ত কাটা যায়! হাটোত এইটা পাওয়ায় টেনশন দূর হইছে।’ পশুরহাটে দরকারি এই উপকরণ গাছের গুঁড়ি পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

গুঁড়ি বিক্রেতা আজিজার রহমান বলেন, প্রথমে তারা ঘোড়া নিম, আম, তেঁতুল, কাঁঠালসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেনেন। এরপর গোল করে করাত দিয়ে ওই গাছ কেটে বিভিন্ন সাইজের গুঁতি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। ছোট ছোট খণ্ড করতে হয় বলে এই গুঁড়ি তৈরি করতে খুব দামি গাছ কিনতে হয় না। কুরবানির পশুর হাটকে ঘিরে প্রত্যেক হাটে গাছের গুঁড়ি বিক্রি করা হচ্ছে। গাছের দাম, পরিবহন খরচ ও মিস্ত্রিদের মজুরি বাদ দিয়ে ভালো আয় হচ্ছে বলেও জানান তিনি।