বৃহস্পতিবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১২ই আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন: ৪২ শিক্ষার্থীর জামিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে জামিন পেলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ শিক্ষার্থী। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের উপর হামলা ও ভাংচুরের দুই মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো।

রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এই ৪২ শিক্ষার্থীর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। এতে প্রায় দুই সপ্তাহ পর পরিবারের কাছে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা।

রোববার সকাল থেকেই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে অভিভাবকদের সংখ্যাও । কারও বাবা, কারও মা, কারও বাবা-মা দু’জনেই হাজির হন আদালত চত্বরে। কারও কারও আবার ভাই-বোনও ছিলেন। দুপুরে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে একসঙ্গে বাড্ডা ও ভাটারা থানার মামলার আসামি ১৬ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুরের মাধ্যমে সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়।

জামিনের আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে আদালত চত্বরে। অভিভাবকদের চোখে তখন আনন্দের অশ্রু। সন্তান ছাড়াই ঈদ কাটানোর যে শঙ্কা ঘিরে ধরেছিল তাদের, জামিন আদেশে সেই শঙ্কা দূর হয়ে তাদের ঈদের আনন্দ যেন দ্বিগুণ হয়ে ওঠে।

এরপর একে একে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৪২ শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীতে আন্দোলন চলাকালে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা দেয়া, গাড়ি ভাঙচুর ও ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগে পৃথক কয়েক মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

আদালতে আসামিদের পক্ষে জামিন শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কবীর হোসাইন, আকতার হোসেন সোহেল, মাইদুল ইসলাম পলকসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।

জামিন পাওয়া আসামিদের অধিকাংশই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

বাড্ডা ও ভাটারা থানার মামলায় ১৬ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুরের পরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা পৃথক তিন মামলায় ৯ জনকে জামিন দেন আদালত।

জামিন পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন— সোহাদ খান, মাসরিকুল ইসলাম, তমাল সামাদ, মাহমুদুর রহমান, ওমর সিয়াম, মাহাবুবুর রহমান, ইকবাল হোসেন, নাইমুর রহমান ও মিনহাজুল ইসলাম। তারা সবাই ধানমন্ডি থানার তিন মামলারই আসামি।

পরে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও ভাঙচুরের অভিযোগে বাড্ডা ও ভাটারা থানায় দায়ের করা দুই মামলায় আরো দুই শিক্ষার্থীর জামিন হয়। জামিন পাওয়া এই ১৮ জনের সবাই বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা হলেন— ইফতেখার আহম্মেদ, নূর মোহাম্মদ, জাহিদুল হক, হাসান, মুশফিকুর রহমান, রাশেদুল ইসলাম, রেজা রিফাত আখলাক, এএইচএম খালিদ রেজা ওরফে তন্ময়, তরিকুল ইসলাম, রেদোয়ান আহম্মেদ, সাখাওয়াত হোসেন নিঝুম, আজিজুল করিম অন্তর, মাসহাদ মর্তুজা বিন আহাদ, মেহেদী হাসান, শিহাব শাহরিয়ার, মেহেদী হাসান, সিমান্ত ও ইফতিদার।

এর বাইরে মহানগর হাকিম আদালতে উত্তরা (পশ্চিম) থানায় দায়ের করা মামলায় জামিন পাওয়া তিন শিক্ষার্থী হলেন— মাহবুব খান রবিন, তোফায়েল ও আশিক; কোতোয়ালি থানার মামলায় জামিন পাওয়া তিন শিক্ষার্থী হলেন— মেহেদী, জাহিদুল ও দুলাল এবং পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় জামিন পাওয়া শিক্ষার্থী হলেন সাইফুল ইসলাম অদুদ।

এছাড়া, নিউমার্কেট থানায় দায়ের হওয়া মামলায় জামিন পাওয়া তিন শিক্ষার্থী হলেন— নুর আলম মিন্টু, আজিজুল রহমান ও আমিন হোসেন; রমনা থানার মামলায় জামিন পাওয়া তিন শিক্ষার্থী হলেন— আরমানুন, সাইরুল ও দাইয়ান নাফিজ এবং শাহাবাগ থানার মামলায় জামিন পাওয়া দুই শিক্ষার্থী হলেন— আবু বকর সিদ্দীকি ও রিয়াজুল হক।

এর আগে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর রাজপথে আন্দোলন চলাকালে বাড্ডার আফতাবনগর এলাকার ভাঙচুরের মামলায় ১৪ শিক্ষার্থীকে এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ভাঙচুরের মামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ৭ আগস্ট তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ রিমান্ড আবেদন করলে আদালত প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ৯ আগস্ট তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ১২ ও ১৩ আগস্ট তাদের জামিন আবেদন করা হলেও জামিন মঞ্জুর করা হয়নি।বাংলাদেশ জার্নাল