বৃহস্পতিবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১২ই আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

অনলাইনেও জমে উঠেছে গরু-ছাগলের হাট

নিউজ ডেস্ক।। রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। কিন্তু চাকুরিজীবীদের অফিসের ব্যস্ততা বা ব্যবসায়ীদের ঠিক সময়ে হাতে টাকা থাকায় এত কম সময়ে মাঠে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে কোরবানীর জন্য গরু-ছাগল কেনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য ব্যস্ত নাগরিকরা যার ওপর ভরসা করে থাকে কোরবানীর গরু-ছাগল কিনতেও এখন তাদের একমাত্র ভরসা অনলাইন বাজার। গরুর হাটের কাঁদা, ভীর, সারা রাস্তা গরু টেনে বাড়িতে নিয়ে আসার মতো ঝক্কি ঝামেলা থেকে গা বাঁচাতেই তাই নগর জীবনে শেষ মুহুর্তে জমজমাট হয়ে উঠছে এই অনলাইন গরু-ছাগলের বাজার।

গরু-ছাগলের অফ-লাইন বাজারের পোস্টার-ব্যানারে যেখানে শহর-গ্রামের আনাচে-কানাছে পরিপূর্ণ ঠিক সেই সময় ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ওয়াল আর ওয়েবসাইটগুলোতে গরু-ছাগলের কেনাকাটা নজর কাড়ছে সবার। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় কেনা-বেচা করেছে দেশি প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল মিট। দীর্ঘদিন ধরে গরুর মাংস বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করে অনলাইনে বিক্রি করলেও প্রতিষ্ঠানটি গত কয়েক বছর ধরে অনলাইনে কোরবানীর পশু বিক্রি করছে। নিজেদের খামারের গরুর পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশী গরু বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠাটি। এরই মধ্যে তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া সবগুলো কোরবানীর পশু বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির হেড অফ মার্কেটিং এইচইউএম মেহেদি সাজ্জাদ। তিনি বলেন, সব পশু বিক্রয় করা শেষ এখন আমরা ডিস্ট্রিবিউশন করছি। অনলাইনে কেনা-কাটা আমাদের দেশে জনিপ্রয়তা লাভ করেছে ঠিকই কিন্তু কোরবানীর পশু বিক্রিও যে এত জনপ্রিয়তা পেতে পারে আমরা নিজেরাও ভাবতে পারিন। তিনি বলেন, অনলাইনে আমরা গরুর উচ্চতা, রঙ, ওজন ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য পশুগুলোকে উচ্চতা স্কেলের সামনে দাঁড় করিয়ে তোলা ছবি দেই। সঙ্গে যুক্ত করেছিলাম ভিডিও ক্লিপও। এতে সঠিক ধারণা পাওয়ায় সময়ের আগেই মজুদ করা সব পশুই বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি জানান, বেঙ্গল মিট গত বছর মাত্র ২১২টি কোরবানীর গরু অনলাইনে বিক্রয় করলেও চলতি বছর দ্বিগুন হারে প্রায় ৪৫০টি গরু বিক্রয় হয়েছে। এ বছর বাড়তি সুবিধা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ৪০শতাংশ টাকা অনলাইনে পেমেন্টও করেছে। বেঙ্গল মিটের অনলাইন হাট থেকে গরু কিনতে ও ডেলিভারি নিতে হলে আগ্রহীদের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে অবস্থিত বেঙ্গল মিটের আউটলেটে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে দাম পরিশোধ করতে পারবেন। সরাসরি অনলাইনেও পরিশোধ করা যাবে। তবে ডেলিভারির জন্য আলাদা আলাদা চার্জ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বেঙ্গল মিটের ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা যায়, ৭০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকার গরু বিক্রি হচ্ছে এখানে।

এদিকে শুরুর দু-এক বছর টুকটাক বিক্রি হলেও এখন এই ভার্চুয়াল হাট বেশ সুবিধাজনক বলে মন্তব্য করেছেন অপর অনলাইন বাজার বিক্রয়ডট.কম থেকে কোরবানীর গরু কেনা বেসরকারি চাকরিজীবী রোজেন আহমেদ। তিনি বলেন, বাসা মগবাজার হওয়ায় গরু কিনতে অন্যান্য বছর আফতাবনগর গরুর হাটেই যেতাম। কিন্তু রাস্তার জ্যাম-কাঁদা মাড়িয়ে গরু নিয়ে যখন বাড়ি ফিরতাম তখন নিজের চেহারা নিজেরই অচেনা মনে হতো। এ বছর তাই অনলাইন থেকেই গরু কিনেছি। ঘরে বসে কম্পিউটার থেকে সাইটে ঢুকে মাউসের ক্লিকে বা স্মার্টফোনের পর্দায় ভেসে ওঠা ছবিতে স্পর্শ করে দেখেই কিনেছি।

দেশের অন্যতম অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিক্রয়ডট.কমও তিন-চার বছর ধরে পশুর হাট বসাচ্ছে নিজেদের সাইটে। এবারও আছে। এই হাটে যেকোনো বিক্রেতাই নিবন্ধন করে পশু বিক্রি করতে পারছেন। এমনকি গ্রামের সাধারণ গৃহিণীরাও। সাইটটি ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন দামের পশু রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিক্রেতারা তাদের পশুর বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। আকৃতি ও জাতভেদে রয়েছে দামের পার্থক্য। পাওয়া যাচ্ছে ৪৫ হাজার থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকা দামের গরু। তবে লাখ টাকার নিচের গরুর সংখ্যাই বেশি। রয়েছে কোরবানির ছাগলও। দাম ১৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে। অনলাইনে কোরবানীর পশু কেনা-বেচার আরেকটি ওয়েবসাইট হচেছ পল্লী কোরবানীর হাট। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ই-কমার্স উদ্যোগ ‘পল্লী কোরবানির হাট অনলাইন’। এবারই প্রথম অনলাইনে কোরবানির পশুর হাটের আয়োজন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যাংকের সদস্যদের কাছ থেকে সংগৃহীত গরু বিক্রি হচ্ছে এখানে। প্রায় ৪০০ গরুর বিস্তারিত তথ্য সংযুক্ত করা হয়েছে সাইটে। পোস্ট করা আছে ৪৮ হাজার থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যের গরুর ছবি। মাঝারি দাম অর্থাৎ ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা দামের গরুর সংখ্যাই বেশি।