সোমবার, ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১৯শে ভাদ্র, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

হার্টের সমস্যা ছাডাও আরো অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে যার কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে

ডা: সাকলায়েন রাসেল: এ কথা সত্য যে হার্টে সমস্যা হলে বুকে ব্যথা হয় । কিšতু প্রশ্ন হলো বুকে ব্যথা মানেই কি হার্টের রোগ ? না পাঠক, বুকে ব্যথা মানেই হার্টের রোগ নয়।

হার্টের সমস্যা ছাডাও আরো অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে যার কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। অনেকে মনে করেন হার্টে সমস্যা মানেই মৃত্যুর হাতছানি। যার কারণে বুকে ব্যথা হলে আমরা বিচলিত হয়ে পড়ি। অথচ খুব কম ক্ষেত্রেই হার্টের সমস্যায় বুকে ব্যথা হয়। তাই আমরা বুকে ব্যথার কারণ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আজকের লেখায় ।

হার্টের সমস্যা ও বুকে ব্যথা

হার্টের সমস্যায় বুকে ব্যাথা হয়। এ ব্যথার নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। বুকের ঠিক মাঝখানে এ ব্যথা অনুভুত হয়। হার্টে রক্ত স্বল্পতার কারণে যে ব্যথা হয় তা বুকের মাঝখান থেকে কখনও কখনও গলা, চোয়াল, পিঠের পিছনে এবং বাম বাহুতে ছড়িয়ে পড়ে। রোগীরা সাধারণত বুকে ব্যথার চেয়ে বুকে অস্বস্তি লাগার কথা বেশি বলে থাকেন। ব্যথার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টও থাকে।
হার্টের ব্যথার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শারীরিক পরিশ্রমের সাথে সাথে এ ব্যথা বাড়ে এবং বিশ্রাম নিলে ৫ মিনিটেরও কম সময়ে তা ভাল হয়ে যায়। টেনশন করলে কিংবা একবারে বেশি পরিমাণ খেলে এমনকি ঠান্ডা বাতাসের কারণেও অনেকের এ ধরনের ব্যথা বাড়তে পারে। হার্টের সমস্যায় বুকে ব্যথার পাশাপাশি ঘাম হতে পারে, বমি বমি ভাব কিংবা বমি হতে পারে।

গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা ও বুকে ব্যথা

হাইপার এসিডিটি বা পেপটিক আলসারের সমস্যাকে সাধারণ মানুষ গ্যাষ্ট্রিক বলে থাকেন। গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যায়ও বুকে ব্যথা হতে পারে। এ ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝ বরাবর নিচের দিকে অনুভূত হয়। রোগের তীব্রতায় অনেক সময় তা পুরো বুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভাজাপোড়া খেলে, খালি পেটে থাকলে এ ধরনের ব্যথা আরো বেড়ে যায়। রেনিটিডিন বা ওমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ খেলে এ জাতীয় বুক ব্যথা কমে যায়। হার্টের ব্যথা কখনো এসব ওষুধে ভাল হয় না।

বুকের হাড় ও মাংসের সমস্যা এবং বুক ব্যথা

বুকের হাড়ে সমস্যা হলে বুকে ব্যথা হতে পারে। বুকের আর্থ্রাইটিস, হাড়ের ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে বুকে ব্যথা হয়। এছাড়া বুকের মাংসে আঘাত লাগলে, কক্সাসাকি নামক এক ধরনের ভাইরাস দ্বারা ইনফেকশন হলেও বুকে ব্যথা হতে পারে। এ ধরনের ব্যথা নড়াচড়া করলে বাড়ে এবং ব্যথানাশক ওষুধ খেলে কমে যায়। যারা খেলাধুলা করেন, ড্রাইভিং এবং ভারী কাজ করা যাদের পেশা তাদের বুকে ব্যথা হতে পারে। যারা হঠাৎ করে ব্যায়াম শুরু করেন প্রাথমিক অবস্থায় তাদেরও বুক ব্যথা হতে পারে। এসবই বুকের হাড় ও মাংসের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। বিশ্রাম নিলে, ব্যথার ওষুধ খেলে এ জাতীয় ব্যথা সেরে যায়।

খাদ্যনালীর সমস্যা ও বুকে ব্যথা

খাদ্যনালীর সমস্যায়ও বুকে ব্যথা হতে পারে। খাদ্যনালীর সমস্যা যেমন খাদ্যনালীর ইনফেকশন, খাদ্যনালীর স্পাজম ইত্যাদিতে বুকে ব্যথা হয়। চিত হয়ে শুয়ে থাকলে, খাবার সময়, পানি পান করার সময় এ ব্যথা বাড়তে পারে। এ ব্যথার ধরন অনেকটা রক্ত স্বল্পতাজনিত বুকে ব্যথার মতোই এবং কখনো কখনো ব্যায়াম করলে বাড়ে ও নাইট্রেট ¯েপ্র নিলে কমে যায়।

শ্বাসনালীর সমস্যা ও বুকে ব্যথা

এ্যাজমা বা হাপানি রোগে শ্বাসনালীর স্পাজম হতে পারে। এ রোগে বুকে চাপ চাপ লাগে এবং বিশ্রাম নিলে কমে যায়। হার্টে রক্ত স্বল্পতাজনিত ব্যথার সাথে এ ব্যথার অনেক মিল আছে । তবে এক্ষেত্রে ব্যথার পাশাপাশি কাশি, বুকে চি চি আওয়াজ হতে পারে। ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা যেমন নিঊমোনিয়া,ফুসফুসে পানি ঢোকা,ফুসফুসের যক্ষা ও ক্যান্সার ইত্যাদি রোগেও বুকে ব্যথা হতে পারে।

টেনশন ও বুকে ব্যথা

টেনশন বুকে ব্যথার অন্যতম কারণ। যারা প্রায়ই টেনশনে ভুগেন তারা সবসময় বুকে একটা চাপ অনুভব করেন। বিশ্রাম নিলে, রাতে ভাল ঘুম হলে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে। তাই এ ধরনের সমস্যা এড়াতে যতদুর স¤ভব দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করা ঊচিত। টেনশনের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো আগে থেকে হার্টের সমস্যা থাকলে টেনশন তা আরো বাড়িয়ে দেয়।

এক নজরে হার্টে সমস্যাজনিত বুক ব্যথা ও অন্যান্য ব্যথা:

 হার্টে সমস্যাজনিত বুকে ব্যথা বুকের মাঝখানে হয় এবং বড় একটা অংশ জুড়ে তা ছড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য কারণে বুকে ব্যথা হলে তা সাধারণত বুকের যেকোন একপাশে হয় এবং একটা নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকে।
 হার্টের কারণে বুকে ব্যথা হলে তা ঘাড়, চোয়াল, বাহুতে ছড়িয়ে পড়ে। অন্য কারণে বুকে ব্যথা হলে তা ছড়ায় না।
 হার্টের ব্যথা চাপ চাপ ধরনের হয়। সাথে দম বন্ধ হয়ে আসার অনুভুতি থাকে। অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যথা খুব তীব্র হয়। ছুরি দিয়ে খোচা মারার মতো একটা অনুভুতি থাকে।
 হার্টের ব্যথা পরিশ্রমের কারণে কিংবা টেনশনের মাধ্যমে বেড়ে যেতে পারে। অন্যান্য ব্যথা হঠাৎ করেই শুরু হয়। পরিশ্রমের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। নড়াচড়া বা চাপ দিলে এ ব্যথা বোঝা যায়।
 বিশ্রাম নিলে কিংবা নাইট্রেট জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে হার্টের ব্যথা কমে যায়। অন্যান্য কারণের বুক ব্যথা বিশ্রামে কমে না।
 হার্টের কারণে বুকে ব্যথা হলে এতে সাধারণত শ্বাসকষ্ট হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হয় না।

ইদানিং স্বাস্থ্য সচেতনতা অনেক বেড়েছে। তবে অতি সচেতনতা অনেক সময় বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে। যেমন বুকে ব্যথা। অতি স্বাস্থ্য সচেনতার কারণে সামান্য বুকে ব্যথায় আমরা দিশা হারিয়ে ফেলি। কাকে দেখাবো, মেডিসিন না হার্ট স্পেশালিষ্ট, সবচেয়ে বড় স্পেশালিষ্ট কে ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে আমরা খেই হারিয়ে ফেলি। আশা করি আজকের লেখা এমন লোকদেরর জন্য গাইড লাইন হয়ে থাকবে। বলে রাখা ভালো, অল্পতেই যাদের মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে তাদেরও বুকে সবসময় একটা চাপ চাপ অনুভুতি থাকতে পারে। ভয়ের কারণ নেই, প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে এ জাতীয় সমস্যা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।