মঙ্গলবার, ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১০ই আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

অন্যকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকে হত্যা!

সাতক্ষীরার দেবহাটার পুস্পকাটিতে ফারিয়া খাতুন (৪) নামের একটি শিশুকে পানিতে ভাসন্ত মৃত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে এলাকাবাসী পুকুরে ভাসন্ত অবস্থায় শিশুর লাশটি দেখতে পায়। কিন্তু এই শিশুর মৃত্যুকে ঘীরে এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে ভিন্ন মতভেদ সৃষ্টি হচ্ছে। যা ভিন্ন কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে শিশুটির বাবা ফরহাদ হোসেন তার মেয়ে ফারিয়াকে নিয়ে ভোমরা বন্দরে যাচ্ছিলেন। প্রতিমধ্যে কে বা কারা পেছন দিক থেকে এসে ফরহাদ হোসেনের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে ফরহাদ ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকেন। এই সুযোগে শিশু ফারিয়াকে দুর্বৃত্তরা রাস্তার পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে পথচারিরা ফরহাদকে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

এদিকে, শুক্রবার সকালে শিশু ফারিয়ার মৃত লাশ পানিতে ভাসার খবর শিশুটির বাবা ফরহাদ হোসেন জানতে পেরে নিজের অসুস্থতার কথা ভুলে হাসপাতালের বেড ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। এসে মেয়ের মৃত লাশ দেখে ফরহাস অজ্ঞান হয়ে যান।

অপরদিকে, এ শিশু বাচ্চা ফারিয়ার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে নানা ধরনের সমালোচনার ঝড় বইছে। এলাকাবাসীর দাবি, ফরহাদ একজন ধূর্ত প্রকৃতির লোক। তাকে কেউ লাঠি দিয়ে আঘাত করেনি। এমনকি তার মেয়েকে পুকুরে ছুড়ে ফেলে হত্যার ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত নয়। ফরহাদ যে দুর্বৃত্তদের হামলার কথা বলছে সেটা সম্পূর্ন মিথ্যা কারণ তার শরীরের কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। সে ইতোপূর্বে এমন অনেক মিথ্যা ঘটনা ঘটিয়েছে।

এলাকাবাসী আরও দাবি করছেন, ফরহাদ নিজের মেয়েকে নিজেই মেরেছে। আর এই হত্যার দায় স্থানীয় কিছু নিরিহ মানুষের উপর চাপিয়ে দিবেন এটা তার পরিকল্পনা। ফরহাদের কাছের এক প্রতিবেশী ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর প্রতীকী কবর তৈরি করার দায়ে মকছেদ আলি তিনি বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। মোকছেদকে জেলে পাঠানোর জন্য এলাকার কয়েজনকে ফরহাদ দায়ী করেছিলেন। আর সেই সূত্র ধরে ফরহাদ মোকছেদের পরিবারের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা নিয়েছেন। আর তার বিনিময়ে নিজের মেয়েকে নিজে হত্যা করে সে দায়ভার এলাকার কিছু যুবকের উপর চাপাতে চাচ্ছেন।

আলিপুর ইউপি যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন জানান, অভিযুক্ত ফরহাদের বিরুদ্ধে এর পূর্বে অনেক অভিযোগ রয়েছে। ফরহাদ তার মেয়েকে হত্যার আগে মোকছেদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেয়। মোকছেদ ২০১৩ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রতীকী কবর তৈরি করে দেবহাটায় ব্যাপক সহিংসতা চালায়। ফরহাদ তার নিজের মেয়েকে হত্যা করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নাম বলছে, যারা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মোকছেদকে ধরিয়ে দিয়েছিল। এটি একটি সাজানো নাটক।

কিন্তু অভিযুক্ত ফরহাদের দাবি, তাকে কে বা কারা বৃহস্পতিবার রাতে মাথায় আঘাত করেন। এ ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। যারা তাকে আঘাত করেছে তারাই তার মেয়েকে পানিতে ফেলে দিয়েছে।

দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মান্নান আলি বলেন, ফরহাদ ও তার স্ত্রী থানা হেফাজতে রয়েছে। তাদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক ভাবে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।