মঙ্গলবার, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ ইং ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

জেনে নিন রোগ নির্ণয়কারী পরীক্ষা এমআরআই (MRI) সম্পর্কে জানা-অজানা সব তথ্য

এমআরআই বা Magnetic Resonance Imaging হল, সবচেয়ে আধুনিক রোগ নির্ণয়কারী একটি পরীক্ষা, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট রোগ বা অস্বাভাবিক অবস্থা খুঁজে বের করতে মানব শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের খুব স্পষ্ট ছবি (Image) নেওয়া হয়।

এমআরআই নামের এই নতুন প্রযুক্তিটির ভিত্তি শুরু হয়েছিল ১৯৪৬ সালে, যখন এই বছরে Felix Bloch (1905-1983), (সুইজারল্যান্ডের পদার্থবিদ) এবং Edward Mills Purcell (1912-1997), (আমেরিকান পদার্থবিদ) স্বাধীনভাবে Magnetic Resonance Phenomena আবিষ্কার করেছিলেন। পরে Dr. Raymond Johnson Damadian (1936 আর্মেনিয় আমেরিকান চিকিৎসক) ছিলেন প্রথম MRI স্ক্যানিং মেশিনের উদ্ভাবক।

এমআরআই মেশিন (MRI scanner) কিভাবে কাজ করে: এমআরআই স্ক্যানার আপনার শরীরের ছবি নেওয়ার জন্য একটি অত্যন্ত শক্তিশালী রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি তরঙ্গ এবং একটি শক্তিশালী কম্পিউটার ব্যবহার করে। এক্সরে বা সিটি স্ক্যানের মত এমআরআই মেশিন কোন ক্ষতিকারক বিকিরণ ব্যবহার করে না।

কি কারণে এমআরআই পরীক্ষা (MRI scanner) করা হয়?

শরীরের বিভিন্ন অংশের সুক্ষ রোগ নির্ণয়ের জন্য বর্তমানে এমআরআই একটি নির্ভরযোগ্য ও পছন্দের পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড, জয়েন্ট (যেমন হাঁটু, কাঁধ, কব্জি, এবং গোড়ালি), পেট, স্তন, রক্তনালী, হার্ট এবং শরীরের অন্যান্য অংশের পরীক্ষার জন্য এমআরআই ব্যবহার করা হয়।

সাধারণভাবে এমআরআই পরীক্ষা দ্বারা নিম্নলিখিত রোগ নির্ণয় করা যায় : ১. মস্তিষ্কের রোগ, যেমন টিউমার, স্ট্রোক এবং অন্যান্য, ২. মেরুদণ্ডের রোগ/আঘাত, ৩. জোড়া রোগ ও ক্রীড়াজনিত আঘাত, ৪. হাড় ও মাংসপেশির সমস্যা, ৫. রক্তনালীর অস্বাভাবিকতা, ৬. মহিলাদের স্তন ও তল পেটের সমস্যা, ৭. প্রস্টেট সমস্যা, ৮. লিভার, পিত্ত নালী ও কিছু আন্ত্রিক রোগ, ৯. নির্দিষ্ট নাক, কান ও গলা (ইএনটি) রোগ, ইত্যাদি।

কিভাবে এমআরআই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয়: এমআরআই পরীক্ষার জন্য সাধারনত বিশেষ কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। বেশিরভাগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে আপনি স্বাভাবিক খেতে/পান করতে, বা কোনো নির্দিষ্ট ঔষধ চালিয়ে যেতে পারেন। তবে এমআরআই সিস্টেমের শক্তিশালী চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট না হওয়ার জন্য, রোগী কোন প্রকার ধাতব বস্তু নিয়ে এমআরআই কক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না।

নিরাপদে স্ক্যান করা যাবে তা নিশ্চিত করার জন্য একজন সদস্য কিছু নিরাপত্তা প্রশ্নাবলী করবেন ও আপনাকে একটি স্ক্রীনিং ফর্ম পূরণ করতে বলা হবে।

পরীক্ষা করার আগে রোগীকে যে সব ধাতব বস্তু অপসারণ করতে হবে তা হল: পার্স, মানিব্যাগ, ব্যাংক কার্ড, ঘড়ি, চশমা, কলম, ক্লিপ, কয়েন, চাবি, জুতা, বেল্ট, সেফটি পিন, চুলের পিন, মেটাল গহনা, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যেমন সেল ফোন, শ্রবণ যন্ত্র (Hearing aids) ধাতব প্লেট লাগানো আলগা দাঁত, পোষাক যাতে ধাতব দ্রব্য আছে, যেমন – মেটাল চেইন, বোতাম, হুক ইত্যাদি।

কে বা কারা এমআরআই পরীক্ষা করতে পারবে না: যেহেতু এমআরআই স্ক্যানার একটি অত্যন্ত শক্তিশালী চুম্বক ব্যবহার করে, তাই যে সকল রোগীর শরীরের ভিতরে medical implant (ইলেক্ট্রনিক অথবা চৌম্বকীয় ধাতব) বস্তু বসানো আছে তাদের এমআরআই স্ক্যান করা চলবে না। এতে মেডিকেল ডিভাইসটি তার স্থান থেকে সরে যেতে পারে/ অস্বাভাবিক উত্তপ্ত হতে পারে/ ছবির মানে হস্তক্ষেপ করতে পারে বা ডিভাইসটির কাজ প্রভাবিত হতে পারে। নিম্নলিখিত মেডিকেল ডিভাইসগুলি উদাহরণ মাত্র যা এমআরআই পরীক্ষা করার সময় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বা অন্যান্য সমস্যা তৈরি করতে পারে:

১. পেসমেকার ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ২. Aneurysm ক্লিপ (মস্তিষ্কের রক্তনালীর অপারেশনে লাগানো), ৩. Cochlear (কান) ইমপ্লান্ট, ৪. শরীরের/চোখের ভিতরে বা কাছাকাছি কোন চৌম্বক ধাতব বস্তু যদি থাকে; যেমন বুলেট, ধাতুর টুকরা ইত্যাদি।

যদি কৃত্রিম হার্টের বাল্ব, ধাতব জয়েন্ট, অঙ্গ, প্লেট, রড বা আলগা দাঁত লাগানো থাকে তাহলে বিশেষজ্ঞ রেডিওলজিস্ট এর সাথে কথা বলুন। তিনি আপনার কাগজ পত্র দেখে পরামর্শ দিবেন।

এমআরআই পরীক্ষা কতটা নিরাপদ: এটি প্রমাণিত যে, যদি সঠিক নিরাপত্তামূলক সতর্কতা নেয়া হয়, তাহলে এমআরআই পরীক্ষা অত্যন্ত নিরাপদ। সাধারণভাবে, এমআরআই পদ্ধতি কোন ব্যথা উৎপাদন এবং কোনো ধরনের স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী টিস্যু ক্ষতি করে না। তবে গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাস, এবং যদি বিগত ৮ সপ্তাহের মধ্যে মস্তিষ্ক, কান, চোখ, হৃদয়, বা রক্তনালীর অপারেশন হয়ে থাকে, তবে এমআরআই স্ক্যানিং সাময়িক এড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন।

আপনার এমআরআই পরীক্ষা প্রভাবিত হতে পারে এরকম যে কোনো অভ্যন্তরীণ বস্তু বা শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকলে এমআরআই কেন্দ্রে রেডিওলজিস্ট-এর সাথে যোগাযোগ করুন বা রেডিওগ্রাফার-কে জিজ্ঞেস করুন।

এটা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, যেহেতু এমআরআই পরীক্ষাটির মাধ্যমে অত্যন্ত নিরাপদভাবে অনেক বেশি সুক্ষ রোগ নির্ণয় করা যায়, সেহেতু প্রয়োজনে, বিশেষ করে ছোটদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাটিই করানো উচিত, কারণ এতে কোন ক্ষতিকারক রেডিয়েশন নেই এবং ব্যবরিত Contrast Agent তুলনামুলক সমস্যার সৃষ্টি করে না।

যে অংশের পরীক্ষা হবে তার সম্পুর্ণ পরীক্ষা সম্পূর্ণ/ আংশিক পরীক্ষাও করানো যেতে পারে। আংশিক পরীক্ষাটি মাত্র ১০ মিনিটে শেষ করা যায়। এছাড়া আরও একটি কথা মনে রাখতে হবে, যদি সম্ভব হয় এই পরীক্ষাটি একটি MRI মেশিনে করানো উচিত।

উপরোত্ত এই তথ্যটি সাধারন মানুষের মধ্যে এমআরআই পরীক্ষা সম্বন্ধে প্রাথমিক জ্ঞান প্রদান করবে। নিজের পরীক্ষা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্যের জন্য রেডিওলজিস্ট, আপনার চিকিৎসক, বা রেডিওগ্রাফার এর উপর ভরসা করা উচিত।

এমআরআই করতে কত টাকা লাগে ?

এমআরআই করতে টাকা বেশি লাগে । তাই অনেকেই এটা করতে চায় না। হ্যা, আপনাদের জন্য এই লেখাটি। ধরুন,আপনার খুব ব্যথা শুরু হলো মেরুদন্ডে। আপনি এক্সরে করলেন, বিভিন্ন ওষুধ খেলেন। আপনার ধরুন সব মিলিয়ে ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হলো। আপনি ভালো হলেন। কিছুদিন পর আবারো দেখা দিল। আবার আপনার ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হলো। এরপর দেখা গেল আপনি একসময় অচল হয়ে পড়লেন। মানে মুভমেন্ট করতে পারছেন না যাকে বলে প্যারালাইসিস। আপনি হাটা তো দূরের কথা, শুতে বসতেও কস্ট হচ্ছে। তখন আপনি আসলেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কাছে।

এবার রোগ নির্নয়ের জন্য আপনার এমআরআই করা হলো। দেখা গেল রোগ অনেক জটিল হয়ে গেল । এবার আপনার হাজার হাজার টাকা নিয়ে দৌড় দিল। তখন কি হলো? কস্ট করলেন, দুই বারে আগেই ৮ হাজার টাকা খরচ করে দিলেন। রোগটাকে বাড়ালেন, সেই এমআরআই করতেই হলো, শেষে আরো প্রচুর টাকা খরচ হলো। তারচেয়ে প্রথমেই থামিয়ে দেওয়া কি উচিত নয়? তাই টাকা বাচানোর জন্য নিজের রোগটাকে বাড়াবেন না। আসলে আপনি কিন্তু টাকা বাচাচ্ছেন না। বরং ভিন্নভাবে টাকা খরচের রাস্তা তৈরি করছেন। এমআরআই করতেও বেশি টাকা লাগেনা। সরকারি হাসপাতালে ৩০০০ টাকায়ই আপনি এমআরআই করাতে পারবেন। যদিও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ডায়গনোস্টিকগুলোতে খরচ প্রায় ৩গুণ বেশি। [১]

সূত্র- দেহ

এ জাতীয় আরও খবর

জুয়ায় খোয়ালেন ১০০০ কোটি টাকা!

মায়ের জীবন বাঁচিয়ে আলোচনায় চার বছরের শিশু!

ভাড়ায় মিলছে ‘বয়ফ্রেন্ড’!

বাচ্চাদের স্তন্যপান করায় নতুন প্রজাতির মাকড়সা !

সেক্স সাইটে ভুয়া প্রোফাইল, গৃহবধুর দরজায় হাজির ‘কাস্টমার’!

১৪০ বছর বেঁচে থাকে এই প্রাণী

নিলামে চাঁদের ৩ পাথর, দাম ৬ কোটি টাকা!

প্রস্রাব চেপে রেখে বিপদে যুবক, যা হলো…

দৈত্যাকৃতির মোরগ!