বুধবার, ৩১শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ১৬ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

লাখো জনতাকে শপথ বাক্য পাঠ করালেন শামীম ওসমান

লখো জনতার সমাগমে জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছিল নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের উদ্যোগে আয়োজিত “জেগে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ, জেগে উঠো শেখ হাসিনার বাংলাদেশ” শীর্ষক মহাসমাবেশ। লাখো লোকের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন শহরের ফতুল্লার ইসদাইর অক্টোফিস একে এম সামসুজ্জোহা স্টেডিয়াম কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় দুপুরের আগেই। সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকাল ৪টায়। কিন্তু জেলার ৭টি থানা থেকে একের পর এক মিছিল আসতে শুরু করে দুপুর ১২টার পর থেকেই। দুপুর ১টার মধ্যে পরিপূর্ণ হয়ে যায় লাখো লোকের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একে এম সামসুজ্জোহা স্টেডিয়াম।

সমাবেশস্থল পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় মিছিলগুলো অবস্থান নিতে শুরু করে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন পাগলা সড়ক। একই অবস্থা সৃষ্টি হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে। জায়গা না পেয়ে আশেপাশের বাড়ির ছাদে অবস্থান নেয় সাধারণ মানুষ। স্টেডিয়ামের বাইরে শহরের মূল পয়েন্ট চাষাঢ়া থেকে উত্তরে ২নং রেলগেইট, পূর্বে খানপুর, পশ্চিমে ফতুল্লার পঞ্চবটি ও দক্ষিণে শিবু মার্কেট পর্যন্ত প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার এলাকায় অবস্থান নেয় লাখো মানুষ। এতে বন্ধ হয়ে যায় সকল প্রকারের যান চলাচল। এক পর্যায়ে মঞ্চ থেকে মাইকে ঘোষণা আসে, মাঠে আর জায়গা নেই। যে যেখান যে এলাকার রাস্তায় অবস্থান করছেন সেখানেই অবস্থান নিন। শনিবার বিকালে শহরের ইসদাইর অক্টোফিস সামসুজ্জোহা স্টেডিয়ামে মহাসমাবেশে এই বিপুল সংখ্যক লোকের সামগম ঘটে।

বিকাল তিন টায় সমাবেশের মঞ্চে উঠে মাইকে শামীম ওসমান উপস্থিত লাখো লাখো জনতার জনসমুদ্রে বজ্রে কণ্ঠে হাত মুঠ করে শপথ বাক্য পাঠ করান জনতাকে। এক সাথে লাখো কণ্ঠে শপথ বাক্যে শামীম ওসমান পড়েন “আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার নামে শপথ করছি যে, জাতির জনকের কন্যা, বিশ্ব মানবতার নেত্রী, দেশ রত্ন শেখ হাসিনার ডাকে স্বাধীনতা বিরোধী, আগুন সন্ত্রাসী ও দেশ বেঁচে খাওয়া জ্ঞানপাপীদের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকব।

আমরা আরো শপথ করছি যে, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায় এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল থাকব”।

শপথের পরেই শামীম ওসমান নিজ কন্ঠে স্লোগান তোলেন জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। স্লোগানের আগে তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, “আসুন দেশব্যাপী স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিরুদ্ধে স্লোগান ধরি। স্লোগান ধরুন “ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু”। দীর্ঘক্ষণ চলতে থাকে স্লোগান। লাখো লাখো কণ্ঠের প্রতিধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে আশপাশের এলাকা।

শামীম ওসমান ওই সময় বক্তব্যে বলেন, ‘শকুনোর আকাশে উড়তাছে। যতবার নারায়ণগঞ্জ জেগেছে ততবার সারা বাংলাদেশ জেগেছে। এটা ইতিহাসের সাক্ষী। এ নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেক আন্দোলন হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্য হয়েছে। তিনি ভেবেছেন আমরা স্টুপিড। কারণ তিনি বলছেন ২০ দলের সাথে ঐক্য হয়েছে, কিন্তু জামায়াতের সাথে ঐক্য হয় নাই। বিএনপির সঙ্গে ঐক্য হয়েছে কিন্তু তারেক রহমানের সঙ্গে না। তিনি ভেবেছেন আমরা আহাম্মক। আমরা লেমন জুস খায়। কারণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। আমার লজ্জা লাগে। কারণ ছোটকালে তাঁর কোলে পিঠে উঠেছিলাম।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘ওরা নির্বাচনের জন্য জোট করেনি। এর ভিন্ন চিত্র। কারণ নারায়ণগঞ্জে পার্টি সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদেরের গণসংযোগ ছিল। সেদিন তিনি আসেননি। অথচ সেদিন নারায়ণগঞ্জের মুন্সীখেলায় বাসে চড়ে সন্ত্রাসীরা আসছিল। বাস থামানোর কারণে পুলিশকে গুলি করে দেয়। এটা ছিল পরিকল্পিত। কারণ একটি মটরসাইকেলে করে ৪ জন পালিয়ে যায়।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সামনে কঠিন সময় আসছে। দেশ কী আফগানিস্তান হবে নাকি দেশ এগিয়ে যাবে। সে সিদ্ধান্ত দেশের মানুষকে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল আর ড. কামালেরা এখন নির্বাচনের জন্য মাঠে নামে নাই। তারা মাঠে নেমেছেন নির্বাচনকে বানচাল করতে। বিএনপি জানে তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সে কারণেই নির্বাচন থেকে সরে যেতে। আর সে কারণেই তারা এমন কিছু ব্যক্তিত্বকে কাছে টেনে নিয়েছে যারা ওয়ের্স্টান কান্ট্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের ব্যবহার করে কিছু একটা করতে।

শামীম ওসমান বলেন, ‘ড. কামালদের বলছি যদি মনে করেন আমাদের উপর আঘাত করবেন করেন আপত্তি নাই। কিন্তু আমার দেশের একজন জনগণের উপর আক্রমণ হলে নারায়ণগঞ্জবাসী আর বসে থাকবে না। তখন সবাই আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী ঢাকায় গিয়ে উঠবো। দেখবো তখন কে ঠেকায়? একদিন নেত্রীর কথায় ধৈর্য ধরেছি। কিন্তু আর না। জনগণের উপর হামলা করলে বসে থাকবো না। আমার কোন নেতাকর্মীর উপর হামলা করলে আমরা আর লেমন চুসবো না। আমরা জানি বিদেশ থেকে টাকা আসছে। অনেক কিছু হচ্ছে। বিদেশে আর দেশে বসে অনেক পরিকল্পনা করছে।’

তিনি বলেন, ‘যদি কেউ মনে করেন বাংলাদেশের মানচিত্রের উপর আঘাত করবেন, নেত্রীর উপর হামলা করবেন, তাহলে আপনারা টিকতে পারবেন না। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আমরা পরাধীন হওয়ার জন্য রাজনীতি করতে আসি নাই। তখন কোন নির্দেশের জন্য বসে থাকবো না।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি সকলকে অনুরোধ করবো। আপনারা প্রস্তুত থাকেন। এ লড়াইয়ে আমরা জিতবো। আবারো প্রধানমন্ত্রী হবেন শেখ হাসিনা। আবারো ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ। সকলকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে। শত্রু কিন্তু আমাদের ভেতরেও আছেন। শুনতে পাই যুদ্ধাপরাধী অনেক পরিবারের সঙ্গে আমাদের অনেকের লোকজন যোগাযোগ রাখছেন। বলছেন পরিকল্পনা করছেন শামীম ওসমানকে ঠেকাতে।’

বক্তব্যের শেষে বলেন, ‘আবার কবে দেখা হবে জানি না। ভুল হলে আল্লাহরা ওয়াস্তে মাফ করে দিবেন। চেষ্টা করেছি উন্নয়ন করতে, আপনাদের পাশে থাকতে। আমি আপনাদের কাছে ঋণী হয়ে গেলাম। ঋণী হয়ে থাকলাম।’

এদিকে বিকাল সমাবেশ শেষ হওয়া পর্যন্ত সমাবেশস্থলে একের পর এক মিছিল আসতেই থাকে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সমাবেশস্থল থেকে শহরের খানপুর , ২ নং রেলগেইট, শিবু মার্কেট, ফতল্লার পঞ্চবটি এলাকায় রাস্তায় বসে মাইকে বক্তব্য শুনছে জনতা। প্রায় ৯-১০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে মহাসমাবেশে আগতদের অবস্থান। তবে সমাবেশের কারণে ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড ও ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ পাগলা পুরাতন সড়কের পাগলা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) শরফুদ্দিন জানান, সমাবেশের কারণে লিংক রোড়ের সাইনবোর্ড ও পুরতান পাগলা সড়কের পাগলা পর্যন্ত প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার এলাকার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। সমাবেশ শেষ হলে এই যানজট আর থাকবে না।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া, পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি চন্দন শীল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ইসরাত জাহান খান স্মৃতি, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইফউদ্দিন আহমেদ দুলাল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ প্রমুখ।