শনিবার, ৩রা নভেম্বর, ২০১৮ ইং ১৯শে কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায়ও গ্রেফতার মইনুল

সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলার অভিযোগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর গ্রেফতার দেখানোর এ আবেদন মঞ্জুর করেন।

এদিন আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই জিয়াউল ইসলাম আসামিকে (মইনুল) গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন।শুনানি শেষে আদালত এ আবেদন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আদালত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৯ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

শুনানির সময় মইনুলকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলার অভিযোগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়।২৪ অক্টোবর সাইবার ট্রাইব্যুনালে (বাংলাদেশ) আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপকমিটির সদস্য, শিক্ষানবিশ আইনজীবী সুমনা আক্তার লিলি এ অভিযোগ দায়ের করেন।ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেন বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি গুলশান থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গণ্য করার আদেশ দেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৬ অক্টোবর রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ৭১ এ প্রচারিত মিথিলা ফারজানা সঞ্চালিত ৭১ জার্নাল টকশো চলাকালে মাসুদা ভাট্টি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রশ্ন করেন ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আপনি যে হিসেবে উপস্থিত থাকেন, আপনি বলেছেন, একজন নাগরিক হিসেবে উপস্থিত থাকেন কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে বলেন, আপনি জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকেন’- মাসুদা ভাট্টির এ প্রশ্নের জবাবে মইনুল হোসেন বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনাকে আমি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই।’

একজন নারীর প্রতি এমন ইচ্ছাকৃত-ধারাবাহিক কুৎসা রটনা ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য মাসুদা ভাট্টি ও নারী জাতির প্রতি বিরক্তিকর, অপমানজনক, অপদস্থমূলক এবং হেয় প্রতিপন্নকর।এ ধরনের বক্তব্যের পর ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন মাসুদা ভাট্টি তথা নারী জাতির সম্মানহানি নিরসনকল্পে আজও পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনোরূপ ক্ষমা কিংবা দুঃখ প্রকাশ করেননি।ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন গত ২১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে পুনরায় একটি টেলিফোনের অডিও রেকর্ড ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রকাশ করেন।

ওই অডিও রেকর্ডটি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন এবং মাসুদা ভাট্টির দায়ের করা মামলায় আগাম জামিন পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন। তিনি দৈনিক প্রথম আলোর জরিপের বক্তব্য প্রকাশ করেন।মাসুদা ভাট্টিকে ‘৫ ভাগ ভালো’ আর ‘৯৫ ভাগ খারাপ’ মহিলা হিসেবে প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘একটা মেয়ে লোক যে এত বাজে হতে পারে তা তো আমি আগে জানতাম না।’২৩ অক্টোবর মামলার বাদী ইউটিউবে অডিও রেকর্ডটি শুনতে পান। মইনুল হোসেন ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশন পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মাসুদা ভাট্টি সম্পর্কিত বিতর্কের ব্যাখার আড়ালে পুনরায় ফেইসবুকে মাসুদা ভাট্টির ব্যক্তিগত চরিত্র সম্পর্কে জঘন্য ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে বলে মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন।

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের রিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।গত ২১ অক্টোবর ঢাকায় মাসুদা ভাট্টি নিজে মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মানহানির একটি মামলা করেন।২৩ অক্টোবর সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলার অভিযোগে রংপুরে মিলি মায়া বেগমের দায়ের করা মানহানি মামলায় মইনুল হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।এরও আগে ২২ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডির) সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের বাসা থেকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।