রবিবার, ১১ই নভেম্বর, ২০১৮ ইং ২৭শে কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

সন্ধ্যা ৭টার ভাষণে যা বলবেন সিইসি

নিউজ ডেস্ক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। এর সঙ্গে সঙ্গেই সভা-সমাবেশসহ প্রচারণার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সিইসির এই ভাষণ প্রচারিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের পর গতকাল বুধবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

এদিকে আজকের মধ্যে মাঠপর্যায়ে মনোনয়ন ফরমসহ নির্বাচনী মালপত্র পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির সহকারী সচিব সৈয়দ গোলাম রাশেদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইস্যু করে বলা হয়, মনোনয়ন ফরম, জামানত বই, রসিদ বই ও আচরণ বিধিমালা ৮ নভেম্বর তেজগাঁও প্রিন্টিং প্রেস থেকে দেশের সব জেলার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে। তাঁরা নির্বাচনী মালপত্র গ্রহণ করবেন।

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা অনুসারে তফসিল ঘোষণার পর সভা-সমাবেশের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আসবে। আজ রাত থেকেই সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাবে। জনচলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে, এমন কোনো সড়কে জনসভা, এমনকি পথসভা করা যাবে না। মাইকের ব্যবহার সীমিত করা হবে। ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের আগের ২১ দিন ছাড়া কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারও নিষিদ্ধ থাকবে। এসব নিয়ম লঙ্ঘন হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী আইন অনুসারে যেকোনো সভা-সমাবেশ, মিছিল—এসবের ওপর ইসির নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে নির্বাচনী প্রাচারও শুরু করা যাবে না। তিন সপ্তাহ সময়ের মধ্যেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নির্বাচনী জনসভা বা সমাবেশও করা যাবে না।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল মোবারকও বলেন, “সরকারি দলের ক্ষেত্রেও সমাবেশ করতে না পারার নিয়ন্ত্রণ প্রযোজ্য হবে। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালাতে আছে, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ তাঁহাদের নিজেদের বা অন্যদের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় সরকারি যান, সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার বা অন্যবিধ সরকারি সুবিধাভোগ করতে পারবেন না। এ ছাড়া নিজেদের নির্বাচনী প্রচারে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও ব্যবহার করতে পারবেন না।’”

গত ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সভায় ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন জানানো হয়, মনোনয়নপত্র দাখিল ও ভোটগ্রহণের তারিখসহ বিস্তারিত সময়সূচি ৮ নভেম্বরে আরেকটি সভায় নির্ধারণ করা হবে। সেদিন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী জানান, ৪ নভেম্বরেই তফসিল ঘোষণার কথা ছিল, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপসহ সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইসির এ সিদ্ধান্তে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আপত্তি জানালেও ক্ষমতাসীন দলসহ কয়েকটি দল দ্রুত নির্বাচন অনষ্ঠানের পক্ষেই মত দেয়।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের নেতৃত্বাধীন ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’-এর ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে সংলাপের অজুহাতে বিলম্ব না করে পূর্বনির্ধারিত সময়েই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানায়। গতকাল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদলও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে বলে, নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। নির্বাচন কমিশন যা করবে তাতে তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

গত ৬ নভেম্বর জাতীয় ঐক্যফন্টের বিপরীত অবস্থান নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল না পেছানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানায় ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট। সেদিন সিইসি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তফসিল পেছানোর দাবি সম্পর্কে বলেন, ‘একক দল নয়, বাংলাদেশের যত রাজনৈতিক দল আছে সবাই যদি বলে তাহলে নির্বাচন পেছানো যেতে পারে।

জানুয়ারির ২৮ তারিখের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে। এর মধ্যে সকল রাজনৈতিক দল যদি বলে নির্বাচন কয়েক দিন পিছিয়ে দেন, তখন পিছিয়ে দেয়া যাবে।’ এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য জানুয়ারি মাসটা নানা কারণে ডিস্টার্ব মাস। জানুয়ারি মাসে বিশ্ব ইজতেমা হয়। আমি যত দূর জানি, দুই দফায় ইজতেমা হবে। এ কারণে ১৫ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। সেখানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পুলিশ, র‌্যাব নিয়োগ করা হয়। আবার জানুয়ারির শুরু থেকে স্কুলগুলো খোলা থাকে। এ ছাড়া এ সময় অনেক শীত ও কুয়াশা থাকে। এ জন্য চর ও হাওর অঞ্চলে ঝুঁকি থাকে। এসব কারণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া দরকার।’

ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের ধারণা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ ২০ অথবা ২৩ ডিসেম্বর পড়ার সম্ভাবনা বেশি। আবহাওয়া অধিদপ্তর নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, ডিসেম্বরের শেষে প্রচণ্ড শীত থাকবে। আর জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে বড়দিন উৎসবের জন্য ২৪ থেকে ২৬ ডিসেম্বর, এই তিন দিন বাদ রেখে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণের অনুরোধ জানায়।

সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিন আগে নির্বাচন আয়োজন করার বিধান রয়েছে। সেই হিসাবে গত ৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনী কাউন্টডাউন শুরু হয়। সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা করেন। সে সময় প্রধান বিরোধী জোটের নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার হুমকির মুখে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। কাজী রকিব ওই দিন তাঁর ভাষণের শুরুতেই সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর সে আহ্বানে সাড়া মেলেনি। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। নির্বাচন কমিশন আশা করছে, এবার সব দলের অংশগ্রহণেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কালের কণ্ঠ অনলাইন