বুধবার, ৫ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ২১শে ভাদ্র, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়ে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়ে দুই বছরে ১০ ব্যবসায়ীর একটি সিন্ডিকেট অন্তত সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বাড়তি টাকা আদায় করে প্রায় দুই লাখ কর্মীর কাছ থেকে এই অর্থ নিয়েছেন তারা।

জনশক্তি রপ্তানিকারক ও বায়রার সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের প্যানেল নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ এ অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে এই পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের খবরও মিডিয়াতে বেরিয়েছে। এটা আমাদের কোনও অনুসন্ধান নয়, তবে ওই সিন্ডিকেটটি শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে বড় রকম অর্থ আত্মসাৎ করেছে।

শফিকুল আলম ফিরোজ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেট শ্রমিকদের কাছ থেকে যে সাড়ে ৩ লাখ বা ৪ লাখ টাকা করে নিয়েছে, তা সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে অনেক বেশি।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে যেখানে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা চুক্তি, সেখানে মৌখিক অনুমোদন আছে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার টাকার মতো। তাহলে কেন তারা শ্রমিকদের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ বা ৪ লাখ টাকা নেবে- প্রশ্ন রাখেন তিনি।

তার প্যানেলটি আসন্ন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তিনি এও অভিযোগ করেছেন, ১০ এজেন্সির ওই সিন্ডিকেটটি আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর বায়রা নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে। তারা যেকোনভাবে আবার বায়রার দখল নিতে চায়।

তিনি বলেন, গত দুই বছর বায়রার নেতৃত্ব দিয়ে আসছে শক্তিশালী সিন্ডিকেটটি। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের শ্রমবাজার ধ্বংস করার পেছনে এই সিন্ডিকেট কাজ করেছে। তারা দেশের বড় ধরনের ক্ষতি করেছে।

“এখন তারা আবার বায়রার দখল নিয়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তারা চাচ্ছে- বিনা ভোটে তারা নির্বাচিত হোক। আমাদের প্যানেল যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে।”

মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যম স্টার অনলাইন সূত্রে জানা যায়, ১০ এজেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে মাথাপিছু সর্বোচ্চ ২ হাজার রিংগিত খরচ হওয়ার কথা। সেখানে এজেন্টরা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ২০ হাজার রিংগিত আদায় করছিল। এর অর্ধেক টাকা যাচ্ছিল সেই সিন্ডিকেটের হাতে, যার বিনিময়ে তারা ওয়ার্ক পারমিট ও বিমানের টিকেটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছিল।

এমন পরিস্থিতিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মুহাম্মদ বলেন, নতুন ব্যবস্থা চালুর জন্য তার সরকার একটি ‘স্বাধীন’ কমিটি করে দেবে, যে কমিটি সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে সুপারিশ করবে।
যেখানে শ্রমিক নিয়োগ দিতে নতুন নিয়মের কথা শোনা যায়।

পরে সংবাদ মাধ্যমে এও খবর পাওয়া যায়, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করেছে মালয়েশিয়া সরকার।
তবে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের লেবার কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম মুকুল বলেন, এটা বিভ্রান্তিকর খবর। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়নি। দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুবই ভালো। নতুন সরকার আগের পদ্ধতি বাদ দিয়ে সকল সোর্স কান্ট্রি’র জন্য ইউনিফাইড পদ্ধতি চালুর প্রক্রিয়া করছে।
খুব শিগগিরই এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও আসবে। শ্রম বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

অবশ্য মালয়েশিয়ার সরকারের নতুন নিয়মকে স্বাগত জানিয়েছে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট। তারা বলছে, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে জনবল নিতে যে নতুন নিয়মের ঘোষণা দিয়েছে, তাতে ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেট মুক্ত হবে শ্রমবাজার। এর ফলে স্বচ্ছতাও ফিরে আসবে। সূত্র: আরটিভি অনলাইন