শুক্রবার, ২৬শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ১১ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

১৩ মাসে গ্রামীণফোনের কলড্রপ ১০৩ কোটি

দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর হতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩ মাসে ১০৩ কোটি ৪৩ লাখ কলড্রপ হয়েছে। একই সময়ে রবির কলড্রপ ৭৬ কোটি ১৮ লাখ, বাংলালিংকের ৩৬ কোটি ৫৪ লাখ আর টেলিটকের আনুমানিক ৬ কোটি।সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। গ্রামীণফোনের কলড্রপ নিয়ে সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ প্রকাশের একদিন পরেই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করলো বিটিআরসি। রোববার সংসদে তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘ইদানিং লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আমরা যারা গ্রামীণফোন ব্যবহার করি, প্রত্যেকটি কলে কলড্রপ হয়। একেকটি কলে ৩, ৪, ৫ বার ড্রপ হয়। এজন্য বার বার কল করতে হয়।’

বিটিআরসির নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কলড্রপের জন্য গ্রাহককে ১ মিনিট টকটাইম ফেরত দিতে হবে। তবে অপরেটরগুলো সে নিয়ম পালন করেনি। গ্রামীণফোনের ১০৩ কোটি ৪৩ লাখ বার কল ড্রপ হলেও গ্রাহকরা রিটার্ন কল মিনিট ফেরত পেয়েছে মাত্র ১০ কোটি ৩০ লাখ। আর রবির কল ড্রপ ৭৬ কোটি ১৮ লাখ বার হলেও গ্রাহকরা রিটার্ন কল মিনিট ফেরত পেয়েছেন ৬ কোটি ৮২ লাখ মিনিট। আর বাংলালিংক গ্রাহকরা ফেরত পেয়েছেন ৪ কোটি ৯৪ লাখ মিনিট।

কলড্রপের কারণে গ্রাহকের প্রাপ্য ৪৭ দশমিক ৩২ কোটি মিনিট টকটাইম ফেরত দেয়নি জিপি, রবি ও বাংলালিংক। বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিদিন একজন গ্রাহকের একটির বেশি কলড্রপের প্রতিটিতে এক মিনিট করে করে টকটাইম ফেরত দিতে হবে।২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর হতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রামীণফোনের একের অধিক কলড্রপ হয়েছে ২৭ কোটি ৭৭ লাখ। এরমধ্যে অপারেটরটি ফেরত দিয়েছে ১০ কোটি ৩০ লাখ মিনিট। তারা ১৭ দশমিক ৪৭ কোটি মিনিটই ফেরত দেয়নি গ্রাহককে।

রবির একের অধিক কলড্রপ ২৪ কোটি ৪৭ লাখ। এরমধ্যে ৬ কোটি ৮২ লাখ ফেরত দিয়েছে তারা। বাকি ১৭ দশমিক ৬৫ কোটি মিনিট ফেরত দেয়নি তারা। বাংলালিংকের একাধিক কলড্রপ ১৭ কোটি ১৪ লাখ। তারা ফেরত দিয়েছে ৪ কোটি ৯৪ লাখ মিনিট। ১২ দশমিক ২ কোটি মিনিটই ফেরত দেয়নি তারা। সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটকের এই একের অধিক কোনো কলড্রপ নেই।

এদিকে মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রকৃত কলড্রপের অবস্থা এবং এ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিটিআরসি। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে একটি মোবাইল ফোন অপারেটরের বিরুদ্ধে কল ড্রপ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের একদিন পর এ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

রোববার রাতে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বাণিজ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গ্রামীণফোন ব্যবসার জন্য কলড্রপ করে। একটা কলে ৪ থেকে ৫ বার ড্রপ হয়, এটা বাস্তবসম্মত না। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছি হঠাৎ কলড্রপ। এছাড়া আমাদের রোমিং করা সিম দেখা যায় বিদেশে একটা ফোন করলে হঠাৎ কল ড্রপ।

বিষয়টি গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষসহ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে দেখার জন্য অনুরোধ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। পরদিন সোমবার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে অপারেটরদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের পরিচালক মো. গোলাম রাজ্জাক স্বাক্ষরিত অপারেটরদের প্রধানদের ‘কলড্রপের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রাহক অসন্তুষ্টি প্রসঙ্গে’ চিঠি পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল অপরেটরদের কল ড্রপ সংক্রান্ত অভিযোগ অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চলমান জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছে। দিন দিন টেলিযোগাযোগ সেবার মান নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেবার মান নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে বিটিআরসির একটি অগ্রাধিকারযোগ্য কার্যক্রম। বিটিআরসি ইতোমধ্যে ড্রাইভ টেস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন অপারেটরের সেবার মান নিয়মিত পরিমাপ করছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, গ্রাহক স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কলড্রপের পরিমাণ বিটিআরসি কর্তৃক নির্ধারিত সীমার (২ শতাংশ) মধ্যে থাকা আবশ্যক। অপারেটর কর্তৃক দাখিলকৃত মাসিক রিপোর্টে তাদের কল ড্রপ নির্ধারিত সীমার মধ্যেই আছে দাবি করলেও সম্প্রতি এ বিষয়ে গ্রাহক পর্যায়ে অনেক অভিযোগ আছে। এছাড়াও কোন কোন অপারেটরের নেটওয়ার্কে একটি কলে ৪ থেকে ৫ বার কল ড্রপ হয় বলে অভিযোগ রয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়।

‘এমতাবস্থায়, আপনার নেটওয়ার্কে সাম্প্রতিক প্রকৃত কল ড্রপের অবস্থা এবং এ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে আপনাদের ব্যাখ্যা আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে বিটিআরসি’তে প্রেরণের জেন্য নির্দেশক্রমে বলা হলো।’এরআগেও কলড্রপ নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৩০ জুন বিটিআরসি অপারেটরদের নির্দেশনা দেয়। এতে বলা ছিল, কোন মোবাইল সংযোগ হতে দৈনিক একের অধিক প্রতিটি কল ড্রপের জন্য ১ মিনিট টকটাইম গ্রাহককে ফেরত দিতে হবে এবং তা এসএমএসের মাধ্যমে তাকে জানাতে হবে।

প্রচলিত নিয়মানুসারে কল ড্রপের জন্য ফেরতকৃত টক টাইমের ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ ১০ সেকেন্ড পালস প্রযোজ্য হবে এবং এর মেয়াদকাল কমপক্ষে ১ মাস হতে হবে।অন নেট এবং অফ নেট উভয় ক্ষেত্রেই কল অরিজিনেটিং মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রাহককে ওই টক টাইম ফেরত দিতে হবে। তবে অফনেট কলের ক্ষেত্রে পরবর্তী অপারেটরদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

এদিকে কলড্রপ ইস্যুতে যুগান্তরের কাছে একটি লিখিত বিবৃতি পাঠিয়েছে গ্রামীণফোন। সেখানে তারা লিখেছে, রেডিও প্রযু্ক্তিনির্ভর মোবাইল সেবায় কলড্রপ একটি স্বাভাবিক উপসর্গ। গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কে কলড্রপের পরিমাণ সবমসময়ই বিটিআরসি ও আন্তর্জাতিক নির্ধারিত মানদন্ডরে অনেক নীচে রয়েছে।গ্রাহক সংখ্যার বিচারে গ্রামীণফোনের কলড়্রপের পরিমাণ অন্যান্য অপারেটরের তুলনায় অনেক কমই রয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। তবে গ্রাহকদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে গ্রামীণফোন গ্রাহকদের কলড়্রপের ক্ষতিপুরন দিয়ে থাকে বলেও উল্লেখ করা হয়।

প্রসঙ্গত, বিটিআরসির সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরের মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৫ কোটি ৪১ লাখ ৭৯ হাজার। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক ৭ কোটি ৭ লাখ, রবির ৪ কোটি ৬১ লাখ, বাংলালিংকের তিন কোটি ৩৪ লাখ এবং সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ৩৮ লাখ ৭৩ হাজার গ্রাহক।