g প্রযুক্তির নগ্ন শিকার তরুণী-তরুনীরা | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শনিবার, ২৮শে অক্টোবর, ২০১৭ ইং ১৩ই কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

প্রযুক্তির নগ্ন শিকার তরুণী-তরুনীরা

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ৫, ২০১৬

---

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশে প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিশু-কিশোরীদের হয়রানি। যুক্ত হয়েছে শিশু-কিশোরীদের উত্ত্যক্ততায় নতুন মাত্রা। সম্প্রতি ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে উঠতি বয়সের মেয়েরা। মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করা, নগ্নছবি এমএমএস করা, ব্লুটুথের মাধ্যমে ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া, এ ধরনের কিছু বিব্রতকর ঘটনার অহরহ মুখোমুখি হচ্ছে কিশোরীরা।
যৌন নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফির মতো ভয়াবহ যৌন অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। এসব ঘটনার জের ধরে সমাজে কিশোরীদের আত্মহত্যার ঘটনা যেমন বাড়ছে; তেমনি বাড়ছে কিশোর অপরাধীর সংখ্যাও। বিষয়টি নিয়ে পরিবারের অভিভাবক থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি বিবেকবান মানুষ উদ্বিগ্ন।
যৌনকর্মে ঠিক কত কিশোরী জড়িত; এর সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এবিষয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে লাখ লাখ শিশু-কিশোরী বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে এবং এদের একটি বড় অংশ যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে।
projuktiমানুষের জন্য ফাউন্ডেশন-এর এক গবেষণায় জানা যায়, যৌনকর্মে শিশু-কিশোরীদের চাহিদা বেশি থাকায় নানা প্রলোভনে তাদের এ কাজে বাধ্য করা হচ্ছে। অধিকাংশ কিশোরী এ পেশা ছাড়তে চাইলেও উপযুক্ত কর্মসংস্থান ও সুযোগ না থাকায় তারা তা পারছে না।
জানা যায়, যৌনপল্লী যারা পরিচালনা করছে মূলত তারাই পর্নোছবির ব্যবসা পরিচালনা করছে। সিডি’র দোকান ও সাইবার ক্যাফেগুলোতে খুব সহজে এসব ছবি পাওয়া যায় এবং দোকান মালিকরা এসব ছবি দেখতে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের উৎসাহিত করে। অভিনয়, মডেলিং-এ সুযোগ দেয়ার নাম করে এক শ্রেণির সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী এই পর্নো ছবির ব্যবসায় নেমেছে।
মোবাইল ফোনে, সাইবার ক্যাফে ও বাসায় ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু কিশোররা পর্নোগ্রাফির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। কর্মজীবী ও পথশিশুরা সিডিতে পর্নোগ্রাফি দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। অনেক পথশিশু পর্নোগ্রাফিতে টাকার বিনিময়ে অভিনয়ও করছে। অনেকে আবার পর্নোগ্রাফি বিক্রিও করছে। গবেষণায় জানা যায়, স্কুলগামী শিশুরা মোবাইল ফোনকে পর্নোগ্রাফি ব্যবহারের সবচেয়ে নিরাপদ ও সহজ মাধ্যম বলে মনে করে।
পর্নোগ্রাফির সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ড নির্ধারণ করে ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২’ অনুমোদন হয়েছে। আইনে পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ প্রভৃতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় পর্নোগ্রাফি ব্যবহার ও এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর-কিশোরীরা।
চৌদ্দ বছর বয়সি রাজশাহীর তানোরের এক স্কুল ছাত্রী। প্রধান শিক্ষক তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করে। পরবর্তীতে ওই অশালীন সম্পর্কের স্থিরচিত্র ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিলে, ঐ স্কুলছাত্রী বাড়ি ফিরে আত্মহত্যা করে।
গাইবান্ধার সাদুল্ল্যাপুর উপজেলার নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে একই এলাকার এক বখাটে যুবক ফোনে প্রায় বিরক্ত করতো। এক পর্যায়ে সে যুবকটির সঙ্গে রুঢ় আচরণ করলে; দেখে নেয়ার হুমকি দেয় যুবক। ক্ষিপ্ত হয়ে সে একটি অর্ধনগ্ন ছবির সঙ্গে ছাত্রীটির মোবাইল ফোন নম্বর লিখে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে যৌনকর্মী হিসেবে ছাত্রীটির কাছে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফোন আসতে থাকে।
একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আরেক তরুণী। স্কুল থেকেই তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে যে যুবকের সঙ্গে; সম্পর্কের অবনতি হলে, সেই ক্ষিপ্ত হয়ে ফটোশপের মাধ্যমে পর্নোছবির নায়িকাদের মুখে তরুণীর মুখোচ্ছবি লাগিয়ে এলাকায় ছড়িয়ে দেয়। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয় হয়ে এক সময় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন ছাত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন ফোন কোম্পানির কল রেটের ওপর ছাড় থাকার কারণে রাত রাড়তেই মোবাইল ফোনে কল আসা শুরু হয়। ফোন রিসিভ করতেই ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে শোনা যায়, কেমন আছ? আমি তোমার বন্ধু হতে চাই? কিংবা তোমাকে ভালোবাসি। এসব কথার পরিপ্রেক্ষিতে রেগে গেলে শুনতে হয় আজেবাজে কথা। নয়তো মিসকল দিয়ে অতিষ্ঠ করে তোলে। ফোন রিসিভ না করলে আপত্তিকর ম্যাসেজ ও অশ্লীল ছবি পাঠায়।’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এর ২০১০ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে শতকরা ৭৭ ভাগ কিশোর পর্নোগ্রাফির দর্শক। যৌনকর্মীদের মধ্যে শতকরা ৮০ জনই ১৮ বছরের কম বয়সে এই পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। শিশুদের পর্নোগ্রাফির সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার বিষয়টি ভয়াবহভাবে বাড়লেও সচেতনতার অভাবে এখনো তা অন্ধকারেই রয়ে গেছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক উল ইসলাম বলেন, শিশুদের মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া উচিত।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শহরে শিশু-কিশোরদের মধ্যে পর্নোগ্রাফির ব্যবহার আশংকাজনকভাবে বাড়ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বলেন, প্রথমত প্রযুক্তির উন্নয়নের ভালো দিকের সাথে সাথে কিছু খারাপ দিকও যুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ইন্টারনেট, মোবাইলফোনের ব্যবহার অন্যতম। দ্বিতীয়ত, আমাদের সামাজিক শাসন ব্যবস্থা কমে যাচ্ছে।
আইনজীবী সালমা আলী বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার যেভাবে বাড়ছে তাতে অত্যাধুনিক এসব প্রযুক্তির ব্যবহারে নীতিমালা বা আইনের প্রয়োগ না থাকলে সমাজে এই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

মনোবিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল বলেন, এজন্যে আইনের পাশাপাশি সমাজের সচেতনতা দরকার। সাইবার ক্রাইমের কারণেও আত্মহত্যার ঘটনা ও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে কিশোররা। (সংগৃহীত)

এ জাতীয় আরও খবর