শনিবার, ১৫ই জুলাই, ২০১৭ ইং ৩১শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সরকারি খরচে সৌদি গিয়ে নিঃস হয়ে ফিরলেন চম্পা

AmaderBrahmanbaria.COM
সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৬

---

নড়াইল প্রতিনিধি: সরকারি খরচ ১৫ হাজার টাকায় বিদেশে গিয়ে নির্যাতিত হয়ে নিজের পরিবারের সর্বস্ব খুইয়ে দেশে ফিরে এসেছেন নড়াইল শহরের দূর্গাপুরের গৃহবধূ চম্পা বেগম (৩৫)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি খরচে বাসাবাড়িতে কাজের ভিসা নিয়ে নিজের ছেলে-মেয়ে-সংসার ফেলে ভালো থাকার আশায় ২০১৫ সালে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে পৌঁছান চম্পা বেগম। একদিন দূতাবাসে থাকার পর তাঁকে দেওয়া হয় সৌদির এক ব্যবসায়ীর বাড়ির কাজে। বাড়ির সব কাজ সেরে তাঁকে ঘুমানোর সময় দেওয়া হতো মাত্র এক ঘণ্টা। এরপর তাঁকে আবারো কাজে ফিরতে হতো। ক্লান্তিতে ঝিমিয়ে পড়লে খেতে হতো মার। আবার কাজ চলতো সারাদিন।

এভাবে এক মাস লাগাতার নির্যাতনের পর কাজ করার পর তিনি একদিন খুব ভোরে বাড়ি থেকে পালিয়ে রাস্তায় আসেন। একটি চলমান গাড়ি থামিয়ে আশ্রয় চান। সেখান থেকে তাঁকে নেওয়া হয় আরেক পরিবারে। ওই পরিবারে একজন কর্ত্রী তাঁকে জানান, ওই ড্রাইভার তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে তার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এ ঘটনা পরিবারকে জানানোর পর স্বামীর দুই শতক জমির একমাত্র ছোট্ট টিনশেড ঘরটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। এভাবে বিদেশে গিয়ে নিজের সব খুইয়ে এখন তিনি দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে পরের বাড়িতে থাকেন। নিজের বিদেশ গমনের এ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হতভাগ্য ওই নারী। এ ঘটনার পর তাঁর আত্মীয়-স্বজন ও শ্বশুর বাড়ির লোকদের কাছে পর হয়ে গেছেন। তার এ নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কাহিনী শুনতে কোনো সরকারি কর্মকর্তা আসেননি। তিনি এ ঘটনার জন্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

আজ শনিবার নড়াইলে ‘নিরাপদ অভিবাসন ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় নিজের এ দুঃস্বপ্নের কাহিনী বর্ণনা করেন চম্পা বেগম।

নড়াইল জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আইন ও শালিশ কেন্দ্রের সহায়তায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন এইচআরডিএফ এর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এ মতিন। হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম (এইচআরডিএফ) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন নড়াইল জজকোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আলমগীর সিদ্দিকী, নড়াইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মীর্জা নজরুল ইসলাম, বেসরকারি সংস্থা সাবলম্বীর নির্বাহী পরিচালক কাজী হাফিজুর রহমান প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা এই বৈদেশিক আয়, যার প্রতি সরকারকে আরো জোরালো ভূমিকা রাখা দরকার। সভায় জেলা বৈদেশিক শ্রম ও কর্মসংস্থান ডেস্ককে আরো শক্তিশালী করার সুপারিশ করা হয়।