g পরিচয় মিলল সাত জঙ্গির | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শুক্রবার, ৬ই অক্টোবর, ২০১৭ ইং ২১শে আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

পরিচয় মিলল সাত জঙ্গির

AmaderBrahmanbaria.COM
ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬

---

1482636550নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর কল্যাণপুরের ‘জাহাজ বিল্ডিং’ খ্যাত তাজ মঞ্জিলে পুলিশের অপারেশন স্টর্ম-২৬ অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গির মধ্যে সাত জনকে শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন দিনাজপুরের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পটুয়াখালীর আবু হাকিম নাঈম, ঢাকার ধানমন্ডির তাজ-উল হক রাশিক, গুলশানের আকিফুজ্জামান খান, ঢাকার বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক, সাতক্ষীরার মতিউর রহমান এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন।

এদিকে কল্যাণপুরে নিহতদের মধ্যে ছবি দেখে তিন জঙ্গির পরিচয় নিশ্চিত করেছে তাদের পরিবার। তারা হচ্ছেন ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ’র শিক্ষার্থী সেহজাদ রউফ অর্ক ওরফে মরোক্কো, নোয়াখালী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র জোবায়ের হোসেন ও চট্টগ্রামের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সাব্বিরুল হক কণিক।

সেহজাদ ছিলেন মার্কিন পাসপোর্টধারী: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রকাশিত নিহত ৯ জঙ্গির ছবির মধ্যে ৬ষ্ঠ যুবক হলেন নিহত অর্ক। তার ফিঙ্গার প্রিন্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের ফিঙ্গার প্রিন্টের সঙ্গে মেলানো হয়েছে। অর্ক’র ঠিকানা ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি-ব্লকের ১০ নম্বর রোডের ৩০৪ নম্বর বাড়ি। তার বাবার নাম তৌহিদ রউফ। নর্থ সাউথের বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র ছাত্র ছিলেন অর্ক। শাহবাগ থানার একটি অস্ত্র মামলার আসামি ছিলেন অর্ক। গত ২ ফেব্রুয়ারি শাহবাগের ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের সামনে ডিবি পুলিশের অভিযান চলাকালে গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গি নিবরাসের সঙ্গে পালিয়ে যান তিনি। র্যাব ঘোষিত নিখোঁজদের সর্বশেষ ৬৮ জনের তালিকায় অর্কর নাম ছিল। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভাটারা থানায় তার বাবা সাধারণ ডায়েরি (ডিজি) করেন। অর্ক আমেরিকান নাগরিক ও ঐ দেশের পাসপোর্টধারী। তার পাসপোর্ট নং ৪৭৬১৪৫৯৯২। গতকাল দুপুরে মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তাসহ অর্কের বাবা ও ভাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে যান। তারা লাশ দেখে কেবল সন্দেহ করেন। তবে ডিএনএ টেষ্টের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে সেটি অর্কের লাশ কি না।

নোয়াখালীর জোবায়ের ছিলেন শিবির কর্মী: নোয়াখালী প্রতিনিধি আলমগীর ইউসুফ জানান, নিহত নয় জঙ্গির মধ্যে মো. জোবায়ের হোসেন নামের একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার বাড়ি নোয়াখালীর সুধারাম থানাধীন কাদির হানিফ ইউনিয়নের পশ্চিম মাইজদী গ্রামে। সে ওই গ্রামের মো. আবদুল কাইয়ুমের পুত্র। মঙ্গলবার রাতে নিহত জঙ্গিদের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর তার পিতা আবদুল কাইয়ুম ওই ছবি দেখে তার পুত্রের সঙ্গে ৮০ শতাংশ মিল রয়েছে বলে শনাক্ত করেন। জোবায়ের নোয়াখালী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। জোবায়েরের পিতা আবদুল কাইয়ুম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি চালক। তিনি অভিযোগ করেন, একই বাড়ির জামায়াত রাজনীতির সঙ্গে জড়িত খালেদ মোহাম্মদ আলী ওরফে বাহাদুর (৪৫) তার পুত্রকে বিপথে নিয়েছে। তার পুত্র নিখোঁজ হওয়ার পর তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না।

নিহত সাব্বিরের বাবা আওয়ামী লীগ নেতা: চট্টগ্রাম অফিস জানায়, বাবা করেন আওয়ামী লীগ। অথচ ছেলে যোগ দিয়েছে জঙ্গিদের দলে। এমন ছেলের লাশও নিতে চান না চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক চৌধুরী। ঢাকার কল্যাণপুরে নিহত নয় জঙ্গির মধ্যে তার ছেলে সাব্বিরুল হক কনিকও রয়েছে। ছেলের লাশ সনাক্ত করতে গতকালই ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন আজিজুল হক। তবে লাশটি যদি তার ছেলে কনিকেরও হয় তবু সেই লাশ গ্রহণ করবেন না তিনি। গতকাল বুধবার ইত্তেফাককে এমনটাই জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা।

তিনি জানান, গত ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের রাউজানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় কনিক। এরপর সে আর বাড়ি ফেরেনি। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর রাগে, দুঃখে থানায় কোনো জিডি করেননি আজিজ। কারণ আজিজদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ছেলে কনিক বিপথগামী হওয়ায় পিতাসহ পুরো পরিবার তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার জানান, কনিক পড়াশোনা করতো জামায়াত নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকনোমিক্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে। কিন্তু শিবিরের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করার কারণে তার চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসে। বাড়ির অন্যদের সঙ্গে তার মতাদর্শগত সমস্যা হতো। মাঝে মাঝে তবলিগে যাওয়ার কথা বলে সে উধাও হয়ে যেত।

ফেসবুকে উত্তর দিলেন মনিরুল ইসলাম: কল্যাণপুরে পুলিশের জঙ্গি বিরোধী এই অভিযান নিয়ে সোস্যাল মিডিয়াতে যেসব প্রশ্ন করা হয়েছে, তার উত্তর দিয়েছেন ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি তার ফেসবুক আইডিতে উল্লেখ করেছেন, ‘আমি যদি বলি আপনি বুঝে ও না বোঝার ভান করছেন আপনি খণ্ডাবেন কি করে? গোটা সোস্যাল মিডিয়া জুড়ে আলোচনা হচ্ছে যে প্রতিবেশীরা বলছে, ঐ বাসার লোকেরা সারারাতই কথিত জিহাদের স্বপক্ষে শ্লোগান দিয়েছে, তাদের রুমে কথিত আইএসের পতাকা পাওয়া গেছে, প্রচুর সংখ্যক উগ্রবাদী বইপুস্তক পাওয়া গেছে। তারপরও এরা জঙ্গি কিনা তা বোঝার জন্য কি রিসার্চের প্রয়োজন আছে?’

তিনি ফেসবুকে আরো লেখেন ‘আনুমানিক রাত একটার কাছাকাছি পুলিশের প্রথম দলটি বাসাটিতে নক করে এবং প্রথম দফা সংঘর্ষের পরে প্রায় সারারাত বিল্ডিংটা কর্ডন করে রাখা হয়। চূড়ান্ত অভিযান শুরু হয় ভোর ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে। এত দীর্ঘ সময় তারা ঘুমিয়ে ছিল কিনা, এই পোশাক পরার সময় পেয়েছিল কিনা তা বোঝার জন্য বুদ্ধিজীবী হওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা দয়া করে ভেবে দেখবেন কি? সারারাত মূর্হুমুহু গোলাগুলি হয়েছে এ রকম কোনো তথ্য আমার জানা নেই। আমি যতটুকু জানি যখনই পুলিশ বাসাটিতে ঢুকতে চেষ্টা করেছে ততবারই গুলি চালানো হয়েছে। চূড়ান্ত অভিযান হয়েছে একঘণ্টার কাছাকাছি। ঐ সময়েই মূলত চূড়ান্ত গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আমার বিশ্বাস এ তথ্য আপনার অজানা নয়। তাহলে কেন এ রকম প্রশ্ন তুলছেন? পুলিশের সাফল্য মানতে পারছেন না তাইতো! আপনি তো সবজান্তা অথচ আপনি এই ধরনের অপারেশনগুলোর ইতিহাস জানেন না। দেশে এবং দেশের বাইরে কোথায় এই ধরনের অপারেশনে কতজন জীবিত গ্রেফতার হয়েছে জানালে বাধিত হব।’

এ জাতীয় আরও খবর