বৃহস্পতিবার, ১১ই মে, ২০১৭ ইং ২৮শে বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বিশ্বে ধূমপায়ী কমলেও অপরিবর্তিত বাংলাদেশ

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ৮, ২০১৭

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : তামাক ব্যবহারে নারী-পুরুষের হার ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম বিশ্বের অধিকাংশ দেশে কমে এসেছে। তবে ধূমপানকারী ও তামাকজনিত কারণে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে ধূমপানকারী মানুষের সংখ্যা ১৯৯০ সালের পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশে বর্তমানে ৩৮ শতাংশ মানুষ ধূমপানে আসক্ত।

বৃহস্পতিবার একটি গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যান্সেট’ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রধান তামাক কোম্পানিগুলো নতুন মার্কেট তৈরির লক্ষ্যে কাজ করায়; বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মৃত্যুহার আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

শতাধিক বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে তৈরি ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বিশ্বে গড়ে প্রত্যেক চারজন পুরুষের একজন ও ২০ জন নারীর মধ্যে একজন প্রত্যেকদিন ধূমপান করেছে। তবে ধূমপানকারীর সংখ্যা গত ২৫ বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। ওই সময় প্রত্যেক তিনজন পুরষের একজন ও ১২জন নারীর একজন প্রত্যেক দিন ধূমপান করেছিল।

তবে বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির ফলে একই সময়ে তামাকজনিত কারণে মৃত্যুহার বেড়েছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

ল্যান্সেট বলছে, ২০১৫ সালে প্রত্যেক দিন ৯৩ কোটিরও বেশি মানুষ ধূমপান করেছে। ১৯৯০ সালে এ ধূমপানকারীর সংখ্যা ছিল ৮৭ কোটি; অর্থাৎ বিশ্বে সাত শতাংশ ধূমপানকারী বেড়েছে।

বিশ্বে নিহত ১০ জনের একজনের মৃত্যু হয়েছে ধুমপানের কারণে; এর অর্ধেকই চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার। বিশ্বে মোট তামাক ব্যবহারের দুই তৃতীয়াংশই হয়েছে যৌথভাবে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, জাপান, ব্রাজিল ও জার্মানিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড এভালুয়েশনের জ্যেষ্ঠ লেখক এমানুয়েলা গাকিদো বলেন, উচ্চ রক্তচাপের পর অকালমৃত্যু ও বিকলাঙ্গতার জন্য ধূমপান এখনো দ্বিতীয় কারণ হিসেবে রয়েছে।

ল্যান্সেট বলছে, কর বৃদ্ধি, শিক্ষামূলক প্রচার, সতর্কতামূলক কর্মসূচির কারণে ধূমপান আসক্তের পরিমাণ বেশ কিছু দেশে ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে গত ২৫ বছরে প্রাত্যহিক পুরুষ ধূমপানকারীর পরিমাণ ২৯ থেকে ১২ শতাংশ এবং নারী ধূমপানকারী ১৯ থেকে ৮ শতাংশ কমেছে।

তবে ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে ধূমপানকারীর পরিমাণ অপরিবর্তিত রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৮ শতাংশ মানুষ ধূমপানে আসক্ত। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ায় ৪৭ শতাংশ ও ফিলিপাইনে ৩৫ শতাংশ মানুষ ধূমপায়ী। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ধূমপান নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা কার্যকর না করায় একই সময়ে রাশিয়ায় নারী ধূমপায়ীর পরিমাণ ৪ শতাংশ বেড়েছে।

ধূমপান বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে আফ্রিকার দেশগুলোতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আফ্রিকার দেশগুলোতে ২০১০ সালের ধূমপানের সঙ্গে তূলনা করে এক প্রতিবেদনে বলছে, আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চলে ২০২৫ সালে মধ্যে পুরুষ ও নারী ধূমপায়ীর পরিমাণ বেড়ে ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামের টোবাকো অ্যান্ড অ্যালকোহল স্টাডিজের জন ব্রাইটন বলেন, নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশে ভবিষ্যৎ মৃত্যুহার ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। ডব্লিউএইচও বলছে, তামাকই একমাত্র বৈধ মাদক; যা উৎপাদনকারীদের যথাযথ ইচ্ছা অনুযায়ী অনেক ব্যবহারকারীকে হত্যা করে।

প্রত্যেকদিন ধূমপায়ীদের অর্ধেক তাদের তামাকের অভ্যাস ত্যাগ না করলে অকালে মৃত্যুর মুখোমুখি হবেন বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।