বৃহস্পতিবার, ১৮ই মে, ২০১৭ ইং ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

‘ধর্ষক’ সাফাত নানা কুকীর্তির নায়ক

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ১০, ২০১৭

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে অস্ত্রের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে তোলপাড়। সোশ্যাল মিডিয়াসহ সর্বত্রই বয়ে যাচ্ছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।

ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর অসহায়ত্বের পাশাপাশি উচ্চবিত্ত পরিবারের বখে যাওয়া সন্তান তিন ধর্ষকের প্রতি ধিক্কারের অন্ত নেই। একইসাথে বিষয়টি নিয়ে বনানী থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও তৈরি হয়েছে রহস্য।

এদিকে জঘন্য ওই ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের উচ্ছুঙ্খল জীবনের নানা কাহিনীও বেরিয়ে আসছে। তার সাবেক স্ত্রীও জানিয়েছেন সাফাতের নানা কুকীর্তির কথা। এদিকে তার বাবা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী দিলদার আহমেদ ছেলের অপকর্মের পক্ষে সাফাই গেয়ে নিন্দার মুখে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, সাফাত আহমেদ নিয়মিত মাদক সেবনে অভ্যস্ত। ঘটনার দিন সারা রাত তিনি ইয়াবা সেবন করেন। একইসাথে পৈশাচিক নির্যাতন চালান দুই তরুণীর উপর। ঘটনার পর ওই দুই তরুণীর সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হন সাফাতের সাবেক স্ত্রী এশিয়ান টিভির সাবেক পরিচালক ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা।

পিয়াসার বক্তব্য- সাফাত আমার লাইফ ধ্বংস করেছে বিয়ে করে। আর ওদের দুইজনের লাইফ ধ্বংস করেছে বিয়ে না করে।

পিয়াসা আরো জানান, ইয়াবা আসক্ত সাফাত ও তার বন্ধুরা বনানীর এক রেস্তোরাঁয় নিয়মিত নেশার আসর বসাতেন। উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্ত সাফাতের অপকর্মের নানা কাহিনী তার স্বজনরাও জানে। অসংখ্য নারীর সাথে তার সখ্যের বিষয়টি জানে তার পরিবারের লোকজনও।

তিনি জানান, বেশ কিছুদিন প্রেমের পর ২০১৫ সালের ১লা জানুয়ারি সাফাতের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পরই পরিচিত এক বড় ভাই বলেছিল, সাফাত ইয়াবা খায়। ওকে বিয়ে করা ঠিক হয়নি। বিয়ে হয়ে গেছে দেখে ওই সময় আর কথা বলিনি।

পিয়াসা জানান, গত ৮ মার্চ হঠাৎ বিয়ে বিচ্ছেদের চিঠি পাঠিয়ে ভারতে চলে যান সাফত। এরপর এক মাস পার হওয়ার আগেই তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে।

পিয়াসার তথ্য অনুযায়ী, এ মামলার আরেক আসামি নাইম আশরাফ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম ইমেকার্সে কাজ করতেন। তিনিও ইয়াবায় আসক্ত।

পিয়াসা বলছেন, আগেও একবার বিয়ে করেছিলেন সাফাত। আগের সেই স্ত্রী এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। সব কিছু ভুলে তাকে বিয়ে করেছিলাম। অথচ বিয়ের পর আমাকে সব কিছু থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। বিয়ের পর সাফাতের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি।

সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেয়ে গুলশানের ‘দি রেইনট্রি’ হোটেলে গিয়ে ঢাকার দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগে গত ৬ মে মামলা হয় ঢাকার বনানী থানায়।

এজাহারে সাফাত ছাড়াও এক ঠিকাদারের ছেলে নাঈম আশরাফ (৩০), পিকাসো রেস্তরাঁর অন্যতম মালিক মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ (২৪) এবং সাফাতের দেহরক্ষী ও গাড়িচালককে আসামি করা হয়।

দুই ছাত্রীর অভিযোগ, ওই হোটেলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাতভর আটকে রেখে সাফাত ও নাঈম তাদের ধর্ষণ করেন। অন্য তিনজন তাতে সহায়তা করেন।

পুলিশ বলছে, সাফাত, নাঈম, সাদমান এবং ঢাকার একজন সংসদ সদস্যের ছেলে বনানী ১১ নম্বর সড়কে একটি রেস্তোরাঁ চালান। এছাড়া তাদের একাধিক সীসা বার রয়েছে।

মামলা হওয়ার পর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে ঘটনায় অভিযোগ আনা দুই তরুণীর ওপর উল্টো দায় চাপালেন অভিযুক্ত সাফাত আহমেদের বাবা ও আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ। তিনি দাবি করেছেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তার ছেলের সঙ্গে এমন কাজ করেছেন ছেলের সাবেক স্ত্রী। শুধু তাই বিষয়টি (ধর্ষণ) আপসেও ঘটতে পারে বলে দাবি করেন তিনি।

অভিযুক্তদের ধরিয়ে দিতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা যারা সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, বিল্লাল হোসেন, সাদনান ও সাকিফকে চেনেন, তারা দয়া করে বনানী থানায় বিস্তারিত জানান এবং ছবি প্রকাশ করুন। যেন অন্য কেউ তাদের খোঁজ দিতে পারে। তাদের মধ্যে সাফাত ও নাঈম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তারা ওই দুই ছাত্রীর বন্ধু বলে পরিদর্শক মতিন জানান। এরাই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের ধর্ষণ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন দুই ছাত্রী।’

অন্যদিকে ঘটনার দীর্ঘদিন পর নির্যাতনের শিকার দুই ছাত্রী মামলা করলেও আসামি আটক ও তদন্ত নিয়ে পুলিশের গড়িমসির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ রয়েছে মোটা অংকের লেনদেনে তুষ্ট হয়ে পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে উদাসীনতা দেখাচ্ছে। যদিও মঙ্গলবার সাফাতের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশের দল তবে তার আগে রাতেই চম্পট দেন সাফাত। এসময় পুলিশ সাফাতের বাবা দিলদার আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।