g পরিবেশ উন্নয়ন ও বিপর্যয় রোধে ইসলামের দিক-নির্দেশনা | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মঙ্গলবার, ৮ই আগস্ট, ২০১৭ ইং ২৪শে শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

পরিবেশ উন্নয়ন ও বিপর্যয় রোধে ইসলামের দিক-নির্দেশনা

AmaderBrahmanbaria.COM
জুন ৫, ২০১৭

---

মাওলানা মিরাজ রহমান : মহান আল্লাহ তায়ালা আকাশ-বাতাস, চন্দ্র-সূর্য, সাগর-মহাসাগর, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত, ফুল-ফল, বৃক্ষ-লতা দিয়ে সাজানো-গোছানো এ সুন্দর পৃথিবী তৈরি করেন মানব জাতি সৃষ্টির আগেই। তারপর এ পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন ১৮ হাজার প্রজাতির প্রাণী। আর মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে প্রেরণ করেছেন, যাতে তারা সুকোমল স্বভাব-চরিত্র ও পরোপকার ব্রত নিয়ে এখানে একটি সুন্দর ও সুশীল সমাজ গঠন করতে পারে এবং এখান থেকেই জোগাড় করতে পারে পরকালীন জীবনের পাথেয়।

পরিবেশ উন্নয়নে করণীয়-বর্জনীয়: স্বাস্থ্যসম্মত, দূষণমুক্ত, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, সুন্দর জীবন ও কল্যাণ সমাজের অত্যাবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের অভাবে আমাদের সামগ্রিক জীবনযাপনে বহুমুখী ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। আমরা পরিবেশের সুষম বেষ্টনীর মধ্যে বসবাস করি। গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, নদীনালা, পাহাড়-জঙ্গল, ফল-ফসল, আলো-বাতাস, মেঘ-বৃষ্টি, আকাশ-নক্ষত্র ইত্যাদি নিয়ে আমাদের পরিবেশ। এসবের সুশৃঙ্খল, অনুকূল এবং ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থিতি ও আচরণ পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও বাসোপযোগী রাখতে সাহায্য করে। এসবই আমাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে আশিসপূর্ণ নিয়ামত। পবিত্র কোরআনের সূরা কাফের ৭-১১ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং উদ্গত করেছি নয়নপ্রীতিকর সব ধরনের উদ্ভিদ; (এ হলো) আল্লাহ তায়ালার অনুরাগী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি এবং তা দিয়ে আমি সৃষ্টি করি উদ্যান ও পরিপক্ব শস্যরাজি ও সমুন্নত খেজুরবৃক্ষ যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর, আমার বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ। বৃষ্টি দ্বারা আমি সঞ্জীবিত করি মৃত ভূমিকে;…।’ সূরা আবাসার ২৪-৩২ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক! আমিই বারি বর্ষণ করি পর্যাপ্ত পরিমাণে, অতঃপর আমি ভালোভাবে বিদীর্ণ করি এবং তাতে আমি উৎপন্ন করি শস্য, আঙুর, শাকসবজি, জয়তুন, খেজুর, বহু গাছপালা বিশিষ্ট উদ্যান, ফল এবং গবাদিপশুর খাদ্য- এসব তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের ভোগের জন্য।’ আরও বলা হয়েছে, ‘আমি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে সুষমভাবে সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা জুমার : ৫)।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ইসলাম: পবিত্র কুরআনের সূরা হিজরের ১৯নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীকে আমি বিস্তৃত করেছি এবং তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি; আমি তাতে প্রত্যেক বস্তু উদ্গত করেছি সুপরিমিতভাবে।’ আর ২০নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এবং তাতে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি তোমাদের জন্য আর তোমরা যাদের জীবিকাদাতা নও তাহাদের জন্যও।’ অথচ এসব জীবিকানির্ভর বস্তুসামগ্রী বা ফলফলাদিতে আমরাই কৃত্রিমভাবে বিষ ঢুকিয়ে মানবসভ্যতাকে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি; অথচ এগুলো যারা তৈরি করছে তারা আমাদের আপন কেউ নয়। আবার তারা তাদের তৈরি এ বিষ সেবন থেকে সতর্কতা অবলম্বন করছে। আর অন্য জাতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

বনজসম্পদ রক্ষায় ইসলাম: নবী (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলমান যদি কোনো একটি গাছ অথবা ফসল ফলায় আর সেখান থেকে যদি কোনো প্রাণী কিংবা মানুষ ফল কিংবা ফসল খায় অল্লাহ তায়ালা প্রতিটি ফলের বিনিময়ে সদকার সমান ছওয়াব দান করবেন।’ (তিরমিজি)। আল্লাহ তায়ালা সুন্দর কথাবার্তাকে সুন্দর গাছের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ তায়ালা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেন, পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মতো। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত।’ (সূরা ইবরাহিম: ২৪)। নবী (সা.) কেয়ামত সংঘটিত হওয়া অবস্থায়ও বৃক্ষরোপণের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি তোমাদের কারও ওপর কেয়ামত সংঘটিত হয় আর তার হাতে যদি একটি চারাগাছ রোপণ করার থাকে সে যেন তা লাগিয়ে নেয়।’ (মসনদে আহমাদ)। অর্থাৎ, একজন মুসলমান তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ মুহূর্তেও যদি সুযোগ পায় যে, সে একটি গাছ লাগাতে পারবে তাহলে এ সুযোগটি সে হাতছাড়া করবে না।

গাছ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালোকাসতেন রাসূল (সা.): হজরত আবুদ্দারদা (রা.) এর একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একদা তিনি দামেস্কে একটি গাছ রোপণ করছিলেন। এমন সময় একটি লোক তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে আবুদ্দারদাকে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে বৃক্ষরোপণ করতে দেখে একটু আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি মহানবী (সা.) এর একজন ঘনিষ্ঠ সাহাবি হওয়া সত্ত্বেও এ কাজটি করছেন কেন?’ সাহাবি আবুদ্দারদা বললেন, ‘আপনি এমনটি বলবেন না, আমি স্বয়ং প্রিয় নবী (সা.) কে বলতে শুনেছি, কোনো ব্যক্তি যদি একটি গাছ লাগায় অতঃপর তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা আল্লাহর যে কোনো সৃষ্টি খাদ্য গ্রহণ করে, তখন তা রোপণকারীর জন্য একটি সদকা হিসেবেই পরিগণিত হয়।’

বন এবং বন্য পশুপাখি প্রকৃতির শোভাবর্ধক, তাই প্রিয় নবী (সা.) এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মক্কা-মদিনার একেকটি বিশেষ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা বলে ঘোষণা করেছিলেন। এসব এলাকার গাছপালা কাটা এবং সেখানে বন্য পশুপাখি শিকার করা আজও নিষিদ্ধ। মূলত গাছপালা, বন-জঙ্গলেই মানুষের প্রভূত কল্যাণ নিহিত। এ কারণেই যুগে যুগে এ পৃথিবীতে আগত নবী-রাসূল, সাহাবা-আউলিয়া, সাধু-সজ্জনেরা দিনের পর দিন রাতের পর রাত বিরামহীনভাবে বন-জঙ্গলের কোনো নিভৃত স্থানে বসেই আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে চিন্তা করতেন এবং প্রধানত সেখান থেকেই মজলুম মানবসমাজের মুক্তির পয়গাম নিয়ে লোকালয়ে ফিরে আসতেন। বন-জঙ্গলঘেরা আয়মন উপত্যকার একটি গাছের মধ্য থেকেই হজরত মুসা (আ.) এর উপর ওহি নাজিল হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, অতঃপর মুসা (আ.) যখন আল্লাহর কাছে পৌঁছাল, তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান প্রান্তের বৃক্ষ থেকে আওয়াজ দেয়া হলো, ‘হে মুসা! আমি আল্লাহ, বিশ্ব পালনকর্তা।’ (২৮ : ৩০)।