g বিশ্বের সর্বাধিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় মেঘালয়ের মাসিনরামে | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

রবিবার, ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ১৯শে ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বিশ্বের সর্বাধিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় মেঘালয়ের মাসিনরামে

AmaderBrahmanbaria.COM
জুন ৩০, ২০১৭
news-image

---

সারা বছরই বৃষ্টি। পাহাড়, গাছ-গাছালি, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি সবই জলে ভেজা। এ এলাকাই দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি জলে ভেজা জায়গা। হবেই না বা কেন? এটা যে মেঘালয়, মানে মেঘের দেশ। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মাউসিনরাম গ্রামে বছরে বৃষ্টি হয় ৪৬৭ ইঞ্চি। এটাই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি। জলে ভেজা এই মেঘের দেশে ঘুরে ঘুরে সেখানকার প্রকৃতি ও জীবনের ছবি তুলেছেন, লিখেছেন আলোকচিত্রী আমোস চ্যাপেল। দ্য আটলান্টিক-এ প্রকাশিত ফটো-ফিচারের খানিকটা এখানে তুলে ধরা হলো।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের এলাকা মেঘালয়ের মাউসিনরাম গ্রাম। বছরে ৪৬৭ ইঞ্চি বৃষ্টি হয় এখানে। ছবি: আমোস চ্যাপেল/দ্য আটলান্টিক

মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি শহর থেকে খুব দূরে নয় এই মাউসিনরাম গ্রাম। এখানকার রাস্তাঘাটে চলাফেরা করলে প্রথমেই চোখে পড়বে ঐতিহ্যবাহী খাসিয়া ছাতা কনুপ। আসলে এটা ছাতা আর টুপির মাঝামাঝি। অনেকটা বাংলাদেশের কৃষকদের ব্যবহার করা মাথালের মতো। বাঁশের চটি আর কলাপাতা দিয়ে বানানো নৌকার মতো আকৃতির। ওপরের দিকটা মাথায় আটকে থাকে, পেছনটা লেপটে থাকে পিঠে। এতে কোনো হাতল নেই। আর কনুপের সবচেয়ে বড় সুবিধাও এটাই। মাথায় কনুপ আটকে রেখে দুই হাতে কাজ করতে পারেন চাষি-মজুরেরা।

সপ্তাহের পাঁচ দিন সকালেই এই দৃশ্যটা দেখা যায়। ‘জ্যান্ত সেতু’র ওপর দিয়ে হেঁটে স্কুলে যায় ছেলেমেয়েরা। ছবি: আমোস চ্যাপেল/দ্য আটলান্টিক

মেঘালয়ের এ অঞ্চলে সবচেয়ে চমকপ্রদ দ্রষ্টব্য হলো ‘জ্যান্ত সেতু’। ছোট ছোট খাদ, পাহাড়ি ঝরনাধারা বা ছরার দুই পাড় সংযুক্ত করা এই সেতুগুলো গাছের শিকড় আর ঝুলন্ত লতা দিয়ে বানানো। প্রথমে দুই পাড়ের দুই-তিনটি রাবারগাছ বরাবর একটা বাঁশের কাঠামো বানানো হয়। পরে বাঁশের কাঠামোর ওপর গাছের শিকড় পেঁচিয়ে দেওয়া হয়। জ্যান্ত শিকড়গুলো ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আর সেতুটা দিন দিন আরও শক্তিশালী হতে থাকে। প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে শত শত বছর ধরে এই পদ্ধতিতে সেতু বানিয়ে আসছে মেঘালয়ের মানুষেরা।

মাউসিনরামের নিচের উপত্যকায় পাহাড়ি ছরাতে মাছ শিকারে নেমেছে এক শিশু। মাউলিয়ং গ্রামের এই সেতুটা অনেক পুরোনো। তবে, এখানকার নংগ্রিয়াত গ্রামটাই শিকড়ের জ্যান্ত সেতুর জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত। ছবি: আমোস চ্যাপেল/দ্য আটলান্টিক

সারা বছর ধরে বৃষ্টি হলেও বৃষ্টিপাতের ভরা মৌসুম থাকে জুন-জুলাইয়ের বর্ষাকালে। মাউসিনরামে শুধু বর্ষকালেই ২৭৫ ইঞ্চি বৃষ্টি হয়। তবে অক্টোবর পর্যন্ত গড়াতে থাকে এই বৃষ্টিপাতের মৌসুম। শীতকাল আসতে আসতে এই জলে ভেজা মেঘের দেশ খানিকটা শুকোতে ধরে। রাস্তাঘাটের নির্মাণ বা মেরামত কাজসহ আরও অনেক কাজকর্মই পড়ে থাকে কয়েক মাসের শীতের জন্য। কিন্তু হিমালয়ের পাদদেশে মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড়গুলোতে শীতকালেও ভালোই বৃষ্টি হয়।

হাটবারে দোকানের জন্য তাজা মাছ বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন উইনচেস্টার লিয়োংখোই। ২৬ বছর বয়সী এই যুবকের মতোই এখানকার লোকজন বৃষ্টি-বাদলা মাথায় নিয়েই কাজ করতে অভ্যস্ত। ছবি: আমোস চ্যাপেল/দ্য আটলান্টিক

মেঘালয়ে এমন বিপুল পরিমাণ বৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে বাংলাদেশের প্লাবন সমভূমি। বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে আসা মৌসুমী বায়ু এই প্লাবন সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্পে সিক্ত হয়। ক্রমাগত উত্তর দিকে বয়ে যেতে যেতে হিমালয়ের পাদদেশে মেঘালয়ের এই খাসিয়া পাহাড়ে গিয়ে ধাক্কা খায় জলীয়বাষ্পে ঠাসা মেঘগুলো। মেঘে মেঘে জমা জলীয়বাষ্প অঝোর ধারায় ঝরে পড়ে বৃষ্টিজল হয়ে।

রোববারের প্রার্থনায় যোগ দিতে গির্জায় ঢুকছেন এক প্রৌঢ় খাসিয়া নারী। মাউসিনরামের এই ক্যাথলিক গির্জাটি অনেক পুরোনো। ছবি: আমোস চ্যাপেল/দ্য আটলান্টিক

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের জায়গা হিসেবে খ্যাতি মিলেছে মাউসিনরাম গ্রামের। কিন্তু এখানকার আবহাওয়া অফিসে এখনো বৃষ্টি মাপা হয় অনেকটা পুরোনো পদ্ধতিতেই। আবহাওয়া অফিসের নির্দিষ্ট পাত্রে রাখা বৃষ্টির জল মাপা হয় প্রতি মাসেই। তবে, এ বছরের শেষ নাগাদ এই স্টেশনে বসানো হবে বৃষ্টিজল মাপার একটা স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল মেশিন।

মাউসিনরাম গ্রামের পাশেই আবহাওয়া অফিস। এখানে জমা হওয়া বৃষ্টির পানি মাপা হয় প্রতি মাসেই। ছবি: আমোস চ্যাপেল/দ্য আটলান্টিক

মেঘালয়সহ আশপাশের এলাকাগুলোতে আদিবাসী খাসিয়ারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে, খাসিয়াদের প্রায় ৭০ শতাংশই এখন খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। এ এলাকার খাসিয়ারাও খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছে উপনিবেশের যুগেই। বাংলাদেশের সমভূমিতে খ্রিষ্টান মিশনারি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রেভারেন্ড থমাস জোনস ১৮৪১ সালে মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড়ে মিশন নিয়ে যান। চেরাপুঞ্জি শহরে এই অঞ্চলের প্রথম গির্জার প্রতিষ্ঠাতাও রেভারেন্ড থমাস।

এ জাতীয় আরও খবর