g ফুলবাড়ীতে ৫শ বছরের শিমুল গাছটি এখন কালের সাক্ষী | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

রবিবার, ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ২৬শে ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ফুলবাড়ীতে ৫শ বছরের শিমুল গাছটি এখন কালের সাক্ষী

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ৭, ২০১৭
news-image

---

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্ত ঘেঁষা ৫’শত বছরের পুরনো দৃষ্টি নন্দিত বিশালাকৃতির একটি শিমুল গাছ এখন কালের সাক্ষী হয়ে আছে। ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে কুটিচন্দ্রখানা গ্রামে এ গাছটির অবস্থান। ৮ শতাংশ জমির উপর দাঁড়িয়ে থাকা আনুমানিক ১৫০ ফুট লম্বা শিমুলগাছটির গোড়ার পরিধি ৫৮ হাত।

বিশালাকৃতির এ গাছটির কাছে গেলেই মনে হবে সৃষ্টিকর্তা যেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে প্রকৃতিতে তৈরি করেছেন আরও একটি স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধের মত দেখতে এ গাছটির গোড়ার পাশে দাঁড়ালে মনে হবে এ যেন পাহাড়ের পাদদেশ। এ গাছের গোড়ায় দাঁড়িয়ে ক্যামেরায় ক্লিক করে ছবি উঠালে ছবিটি দেখে যে কেউ মনে করবে এ ছবি পাহাড়ের পাদদেশের অথবা স্মৃতিসৌধের। আশ্চর্য্য জনক এ গাছটি দেখার জন্য এখন কুটিচন্দ্রখানা গ্রামে পদচারনায় মুখরিত হচ্ছে হাজারো প্রকৃতি প্রেমি মানুষ। গাছটিকে নিয়ে মিডিয়ায় সম্প্রচার না হওয়ায় প্রকৃতি প্রেমি মানুষ ও দেশি বিদেশি পর্যটকদের দেখা যাচ্ছে না। শুধু মুখে শুনে ছুটে আসছেন প্রকৃতি প্রেমী স্থানীয় কিছু মানুষ।

মুখে শুনে গাছটিকে দেখতে আসা ঢাকার স্টুডেন্ট কেয়ার হাইস্কুলের সিনিয়র শিক্ষক আযমগীর হাসিবুর রহমান জানান, তিনি আশ্চর্যজনক বিশালাকৃতির গাছটিকে দেখে অভিভূত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের অনেক স্থানে বেড়িয়েছেন কিন্তু এমন দৃষ্টি নন্দন গাছ কোথাও দেখেননি। তিনি বলেন, এ গাছটিকে নিয়ে মিডিয়ার সম্পপ্রচার করা হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নজর কাড়বে। একই কথা জানালেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা থেকে আসা যুবক খালেদ মাসুদ, লালমনিরহাট থেকে আসা আসাদুজ্জামান, ভুরুঙ্গামারী থেকে আসা যুবক জহুরুল ইসলামসহ আরও অনেকে।

কুটিচন্দ্রখানা গ্রামে গিয়ে শোনা গেছে, গাছটির অলৌকিক দৃশ্যপট ও যৌবন কথা। এ গ্রামের তরুণ যুবক বয়োবৃদ্ধ সকলে জানিয়েছেন গাছটির অলৈৗকিক ও যৌবনকথার গল্প। গাছটি সম্পর্কে নানান জন নানা কথা বললেও গাছটির বয়স কত তা জানাতে পারেননি কেউ। এই গ্রামের ১২০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আফছার আলী জামালপুরি, ১১৪ বছরের বৃদ্ধা মোহিনী বালাসহ প্রবীণ আরও অনেকে একই কথাই জানিয়েছেন যে, আমরা আগে যেমন শিমুল গাছটি দেখেছি ঠিক তেমন অবস্থায় গাছটি এখনও রয়েছে। ঝড় বাতাসে ডাল পালা না ভাঙ্গায় গাছটি এখন অক্ষত রয়েছে।

১২০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আফছার আলী জামালপুরি জানান, তিনি যুবক বয়সে থাকা কালে তৎকালিন কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের সর্বোচ্চ বয়স্ক বৃদ্ধ খোকা চন্দ্র বর্ম্মনের কাছে শুনেছেন, খোকা চন্দ্রের দাদা তার দাদার সময়ও তারা গাছটিকে বর্তমান যেমন ঠিক তেমনি দেখেছেন। এতে তাদের ধারনা শিমুলগাছটির বয়স ৫’শত বছরেরও বেশি হতে পারে। গাছটির পাশের গ্রামের বসবাসকারী প্রধান শিক্ষক ভারত চন্দ্র রায় (৩৮) জানান, শিমুলগাছটি আগের চেয়ে দিন দিন আরো তাজা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ গাছে মৌমাছির চাকসহ, অসংখ্য প্রজাতির পাখির বাস। গাছটিতে টিয়া পাখিদের যেন অভয়াশ্রম। বিকাল হলেই টিয়া পাখিসহ বিভিন্ন পাখির কলরবে যে কেউ মুগ্ধ হবে।

গাছটি নিয়ে অনেক গল্পও রয়েছে। এলাকাবাসীর অনেকে জানিয়েছেন, এ গাছের নিচ থেকে গুপ্ত ধন তুলতে গিয়ে এ গ্রামের নারিয়া মামুদ নামের এক ব্যক্তি অন্ধ হয়েছে। এখানে কথিত নাগ নাগিনীর বসবাস বলেও তারা জানান। গাছটির জমির মালিক মৃত কোকন চন্দ্রের স্ত্রী কুসুম বালা ও তার বড় ছেলে কিরন চন্দ্র জানান, একবার এ গাছটি ১০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করে তারা বিপাকে পড়েন।

গাছটি এখন বিক্রি করবেন কিনা? এমন প্রশ্ন করলে কুসুম বালা, কিরন চন্দ্রসহ গাছটির মালিকরা জানান, যতদিন গাছটি নিজ হতে মারা যাবে না। ততদিন পর্যন্ত তারা গাছটি বিক্রি কিংবা গাছটির কোন ডালপালা কাটবেন না। তারা বিশালাকৃতির দৃষ্টি নন্দিত এ গাছটি সংরক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কাছে সহায়তা চেয়েছেন।

এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী সদর ইউপি চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ জানান, বিশাল দৃষ্টি নন্দিত শিমুল গাছটিকে দেখতে প্রায় দিনেই বিভিন্ন জায়গা থেকে এক নজর দেখতে আসে। গাছটি সংরক্ষণের জন্য উপজেলাবাসীসহ ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাতে করে এটি আশ্চর্য মণ্ডিত একটি দর্শনীয় বৃক্ষ হয়।

এ জাতীয় আরও খবর