g ভারতে পাঠ্যবই থেকে ‘রবীন্দ্রনাথ’ বাদ দেয়ার সুপারিশ | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বৃহস্পতিবার, ২৭শে জুলাই, ২০১৭ ইং ১২ই শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ভারতে পাঠ্যবই থেকে ‘রবীন্দ্রনাথ’ বাদ দেয়ার সুপারিশ

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ২৬, ২০১৭

---

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :ভারতের স্কুল পাঠক্রম থেকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাধারাও বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে ইংরেজি, উর্দু, আরবি শব্দাবলী, শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের উদ্ধৃতি, এমন কি মির্জা গালিবের রচনাও। এসব বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছে একটি হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা সংগঠন। একই সঙ্গে গুজরাত আর শিখ দাঙ্গার বিষয়ও বাদ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এমন হিন্দি কবিতা বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যেটা পড়লে ছাত্রছাত্রীদের চরিত্র ‘খারাপ’ হয়ে যেতে পারে।

ভারতের কেন্দ্রীয় পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই রচনা করে যে সংস্থা, তাদের কাছে ওইসব সুপারিশ পাঠিয়েছে ‘শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস’ নামের আরএসএস ঘনিষ্ঠ সংগঠনটি।

ভারতে সনাতনী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর জন্য অনেকদিন ধরে দাবি করতে থাকা সংগঠন ‘শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস’ বলছে হিন্দি, ইতিহাস আর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন পাঠ্যবইতে অনেকগুলি বিকৃত তথ্য, অসাংবিধানিক শব্দ, চরিত্র নষ্ট করার মতো কিছু বিষয় রয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই রচনা করে যে সংস্থা, সেই ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশন রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং বা এনসিইআরটি-র কাছে পাঠানো পাঁচ পাতার একটি সুপারিশে সংগঠনটি এইসব বিষয়গুলি বাদ দিতে বলেছে।

হিন্দি পাঠ্যবই থেকে ভাইস চ্যান্সেলর, ওয়ার্কার, ব্যাকবোন, রয়্যাল একাডেমি, বেতরিব, তাকৎ, ঈমান, মেহমান-নওয়াজি ও ইলাকার মতো বেশ কিছু অ-হিন্দি শব্দ সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।

ওই ‘উত্থান ন্যাস’-এর সচিব অতুল কোঠারি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আমরা মূলত হিন্দি, ইতিহাস আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়গুলি নিয়েই সুপারিশগুলো পাঠিয়েছি। হিন্দি ভাষায় পড়ানোর সময়ে সেখানে ইংরেজি, আরবি, ফারসি, উর্দু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এটা ভাষাবিজ্ঞানের নিয়মের সঙ্গে মেলে না। তাই সেগুলিকে বাদ দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও, ইতিহাসের ক্ষেত্রে ঔরঙ্গজেবকে একজন উদারমনস্ক শাসক বলা হয়েছে। এটা তথ্য বিকৃতি। শিবাজিকে নিয়ে মাত্র দু’লাইন লেখা হবে কেন? শিবাজী, মহারাণা প্রতাপ, সুভাষচন্দ্র বসু, মদনমোহন মালব্য- তাঁদের বিষয়ে বিস্তারিত যাতে পড়ানো হয়, সেই সুপারিশও করা হয়েছে।’

এনসিআরটি-র কাছে পাঠানো তাদের সুপারিশে এও বলা হয়েছে, যেভাবে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনা উদ্ধৃত করে জাতীয়তাবাদ ও মানবতাকে দু’টি পরস্পরবিরোধী মত বলে দেখানো হয়েছে, সেটা অনুচিত।

মির্জা গালিবের একটি শের আর শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের রচনাও বাদ দিতে বলা হয়েছে।

কোঠারি বলেন, এসব যেমন ছাত্রদের পড়ানো অনুচিত, তেমনই দাঙ্গার মতো বিষয়গুলিও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমে রাখার কোনও দরকার নেই। ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গা বা গুজরাতের দাঙ্গার বিষয়গুলি এসেছে পাঠ্যবইতে। এগুলো কি ছাত্রদের পড়ানো বিষয়? দাঙ্গা তো কতোই হয় দেশ-দুনিয়ায়। সেসব বাচ্চাদের পড়িয়ে কী হবে?’

শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ অসাম্প্রদায়িকতার একটা মূর্ত প্রতীক। তার ভাবনা চিন্তা বাদ দিতে বলা হচ্ছে! এরপরে হয়তো কোনদিন শুনব জনগণমন অধিনায়কও জাতীয় সঙ্গীত না রাখার দাবি উঠছে। গালিব বোধহয় এরকম কোনও দাবি উঠতে পারে ভেবেই হয়তো লিখেছিলেন ‘ডুবওয়া মুঝকো ইনহোনিনে’, অর্থাৎ আমাকে ডুবিয়ে দিল। এদের লেখা বাদ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে – এটা কি সাহস না দু:সাহস কী বলব জানি না।’

তবে যেভাবে গুজরাত দাঙ্গার প্রসঙ্গ বাদ দেয়ার কথা উঠেছে, তা থেকে ভাদুড়ীর মনে হচ্ছে, ‘ব্যাপারটা এমন নয় তো যে পাঠক্রম থেকে গুজরাত দাঙ্গা বাদ দেয়ার জন্যই বাকি অনেক কিছু বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে?’

এই সুপারিশগুলো সামনে আসার পরে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে ভারতের শিক্ষা মহলে। পশ্চিমবঙ্গের স্কুল পাঠক্রম কমিটির প্রধান, অধ্যাপক অভীক মজুমদার বলেন, ‘ভারত একটা বহু ধর্ম-সম্প্রদায়ের মিলন ক্ষেত্র। কোন একটা বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভারতকে বিচার করতে গেলে সেটা খণ্ডিত, আংশিক হবে। আমার মনে হয় যারা এই সুপারিশ করছে, তারা ইতিহাসকেই অস্বীকার করতে চাইছেন। কেউ যদি দাঙ্গা কেন পাঠ্যবইতে থাকবে সেই প্রশ্ন তোলে, তাহলে কি তারা দেশভাগের সময়কার দাঙ্গার ইতিহাসও পড়াতে দিতে চাইছে না?’

তার ভাষায়, ‘এই অতি দক্ষিণপন্থী হিন্দুবাদীরা তো স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। এটার বহু প্রমাণ রয়েছে। আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তো ইংরেজদের দান আর তা থেকেই তো দাঙ্গা। নিরপেক্ষভাবে ইতিহাসের বিচার করতে গেলে ইংরেজদের সমালোচনা হবে, সেটা ভেবেই কি দাঙ্গার প্রসঙ্গ বাদ দেয়ার দাবি করা হচ্ছে?’

শুধু শিক্ষা-মহল নয়, রাজনৈতিক দলগুলিও উত্থান ন্যাসের পাঠানো এইসব সুপারিশ নিয়ে সরব। মঙ্গলবার বিষয়টি সংসদের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভায় উত্থাপিত হয়।

উল্লেখ্য, উত্থান ন্যাস সংগঠনটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত না হলেও তাদের ঘনিষ্ঠ। তাই শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা মনে করছেন, উত্থান ন্যাসের পাঠানো সুপারিশগুলো আসলে আরএসএসেরই চিন্তাভাবনার ফসল।সূত্র: বিবিসি বাংলা।

এ জাতীয় আরও খবর