g ‘হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই’ | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

রবিবার, ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ২৬শে ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

‘হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই’

AmaderBrahmanbaria.COM
আগস্ট ৩১, ২০১৭

---

ইসলাম ডেস্ক : মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম সমাবেশ পবিত্র হজ আজ বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট)। পবিত্র এই কর্তব্য পালনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে জড়ো হয়েছেন লাখ লাখ মুসল্লি। মহান ‍আল্লাহ ঘরের মেহমানরা আরাফাত ময়দানে ‍উপস্থিহ হয়ে প্রাণভরে উচ্চারিত করছেন ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক/লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক/ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক’। অর্থাৎ—‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’
এই ধ্বনিতে আজ মুখরিত হচ্ছে আরাফাতের ময়দান। তালবিয়া পাঠ করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে পাপমুক্তির আকুল বাসনায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান (হাজি) আজ মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়েছেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁরা আরাফাতের ময়দানে থাকবেন। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করছেন। মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের খুতবা দেবেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শাইখ।

খোদার ঘরের মেহমানরা আরাফাত প্রান্তরে অনুভব করছেন রাব্বুল আলামিনের সেই মায়াভরা বাণী। যেখানে মধুর সুরে আল্লাহ বলছেন- ‘নাহনু আকরাবু ইলাইহি মিন হাবলিল ওয়ারিদ। (কাফ, আয়াত-১৬)। অর্থ- হে আমার প্রিয় বান্দা, আমি তোমার শাহরগের কাছে থাকি।

তাই তো আজ দিনভর আরাফার ময়দানে রাব্বুল আলামিনের অনুভব, অনুভূতির শিহরণ হচ্ছে প্রেমিক মনে। জীবনের আপদমস্তক গোনার দৃশ্য স্মরণ করে হৃদয়ভাঙা আহাজারি করবেন হাজিরা- ক্ষমা করুন, করুণা ধারা বর্ষণ করুন, হে রাব্বুল আলামিন দৃশ্য অদৃশ্য জগতের মালিক। হৃদয় ফাটা আর্তনাদে মরুর বুক ভেসে যাচ্ছে কান্নায়। লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক- আমি হাজির, আমি হাজির বেজে উঠছে। আত্মা আর পরমাত্মার সুরে সিজদাবনত হচ্ছে আরাফাবাসী।

হাজীরা আজ মাওলার প্রেমে মজে থেকে রাব্বুল আলামিনের অকূল সাগর পাড়ি দেবেন প্রেম তরীতে। কাফনের সাদা দু’টুকরা ইহরামের কাপড় পরে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য ব্যাকুল তারা। আশেক আর মাশুকের প্রেমময় আবহে বিরাজ করবে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃশ্য।

ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করার পরপরই হাজীরা ইহরাম বাঁধা অবস্থায় ছুটেন আরাফার ময়দানে। লাব্বাইক, লাব্বাইক সুর ধ্বনি তুলে রাব্বুল আলামিনের কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দেন তারা। ক্ষমা ও মুক্তির জন্য হাজীরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে রোনাজারি করবেন। কেউ পাহাড়ের কাছে, গাছের নিচে, তাঁবুর ভেতর, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ধ্যান ইবাদত করবেন।

এই আরাফাত ময়দানে দাঁড়িয়েই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আজ থেকে চৌদ্দশ বছর আগে বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। লাখো মানুষের উদ্দেশে প্রদত্ত এ ভাষণের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছিল দ্বীনের পরিপূর্ণতার। আজো সেই ধারাবাহিকতায় খুতবা-ভাষণ দেয়া হয়। ভাষণে গোটা বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। আর হাজীরা এক আবেগঘন পরিবেশে মহান আল্লাহর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেয়ার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে আহাজারি করতে থাকেন। তারা নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, নিজের পরিবার-পরিজন, সমাজ ও রাষ্ট্রের সুখ শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।

৯ জিলহজ সূর্যাস্তের পরপরই মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফাত ময়দান ত্যাগ করবেন হাজীরা। মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ, এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সারা রাত সেখানে অবস্থান করবেন তারা। মিনায় জামারাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭টি কঙ্কর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে মিনার উদ্দেশে রওনা হবেন। পবিত্র মক্কা থেকে প্রায় ৯ মাইল পূর্ব দিকে একটি পাহাড়ের নাম ‘জাবালে রহমত বা করুণার পাহাড়’।

এ পাহাড় সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রলম্বিত বিরাট প্রান্তরটি আরাফা প্রান্তর নামে পরিচিত। এর উচ্চতা প্রায় ২০০ ফুট। এ পাহাড়ের পূর্বদিকে পাথরের সিঁড়ি রয়েছে। এর ষষ্ঠ ধাপের উচ্চতা বরাবর আগে একটি উন্নত মঞ্চ ও একটি মিম্বর ছিল। এ মিম্বরে দাঁড়িয়ে প্রতি বছর ৯ জিলহজ আরাফার দিন ইমাম খুতবা প্রদান করতেন। এখন আর সেই মঞ্চ ও মিম্বার নেই এবং এখান থেকে হজের খুতবাও প্রদান করা হয় না। বরং এখন খুতবা দেয়া হয় মসজিদে নামিরা থেকে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর মাত্র ১ দিন হাজীরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন। হজের সময় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজের অন্যতম ফরজ বিধান। ইমাম তিরমিযী (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আরাফার ময়দানে অবস্থান করার ভাগ্য যার হয়নি তার হজ বাতিল হয়ে যাবে।

হজ:
হজ অর্থ সংকল্প করা, দর্শন করা। রাব্বুল আলামিনের প্রেমের অনন্য নিদর্শন এই হজ। কাবা শরিফের তাওয়াফ, মদিনা শরিফের জিয়ারত, মুজদালিফা, মুলতাজাম, হাজরে আসওয়াদ, জমজম, মাকামে ইবরাহিমের সায়ী, উকুফে আরাফা, জামারাত কোরবানি, বিদায়ী তওয়াফ’ এগুলো মুমিনের জন্য রাব্বুল আলামিনের সান্নিধ্যস্থল। মুমিনের হৃদয়ে যখন রাব্বুল আলামিনের ইশক ও মুহাব্বতের বর্ষণ শুরু হয় তখন থেকে হজের জন্য কাতর হতে থাকে তার আত্মা বা রূহ। হজ মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর চেতনা ও আদর্শের প্রতীক। হজের প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে আল্লাহর একত্ববাদ, একচ্ছত্র আধিপত্য ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতার সমৃদ্ধ স্বীকৃতি। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনজুড়ে ছিল কঠিন সব পরীক্ষা। সেসব পরীক্ষা ছিল দুনিয়ার বিচারে অবাস্তব অকল্পনীয়, বিবেকের কাছে যা অগ্রহণীয়। সব পরীক্ষাই তাকে দিতে হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ এলো- যেখানে কোনো গাছপালা, ফল-শস্য, পানি বা লোকজনের বসতি নেই স্ত্রী সন্তান সেখানে রেখে আসার। এমন পরীক্ষাতেও হজরত ইবরাহিম (আ.) উত্তীর্ণ হলেন। উপাধি পেলেন খলিলুল্লাহ- আল্লাহর বন্ধু নামের প্রেমময় ভূষণ। সেই জনমানবহীন ভূমিই আজ বিশ্ব মুসলিমের তীর্থস্থান। সেখানেই সমাধা করতে হয় হজের যাবতীয় ব্রত। পরের পরীক্ষা আরও কঠিন। পিতা পুত্রকে জবাই করতে হবে, এটা আল্লাহর আদেশ। এ কাজেও হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বতঃস্ফূর্ত রাজি হয়ে গেলেন। আল্লাহ প্রেমিক কাকে বলে! প্রেমের দৃষ্টান্ত রাখলেন পিতা-পুত্র। পুত্রও পিতার হাতে জবাই হতে রাজি হয়ে গেলেন। কোরআনের ভাষায়, হে পিতা আপনি বাস্তবায়ন করুন যা আদেশপ্রাপ্ত হয়েছেন। ইনশাল্লাহ আপনি আমাকে পাবেন ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা সাফফাত ১০২)। আল্লাহ ডেকে বললেন- হে ইবরাহিম তুমি বাস্তবায়ন করেছ তোমার স্বপ্নাদেশ। (তুমি সফল ও সার্থক হয়েছে)। মাওলার প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা। ওই প্রেম ও ভালোবাসার আলোকচ্ছটায় যার আত্মা উদ্ভাসিত হয় সেই তো কাবার প্রেমে ব্যাকুল হয়ে কালো গিলাফ দর্শনে আকুল হয়ে হজব্রতে ছুটে আসেন।

কোরবানি:
হজের অন্যতম বিশেষ ইবাদত হল আল্লাহর জন্য পশু কোরবানি করা। আমরা কোরবানি বা পশু জবাই করি, পশুত্বকে জবাই করি না। আল্লাহ বলেন, কোরবানির পশুর গোশত কিংবা রক্ত কখনই আল্লাহর কাছে পৌঁছবে না, পৌঁছবে শুধু তোমাদের কলবের তাকওয়া (সূরা হজ, আয়াত ৩৭)। এটিই কোরবানির শিক্ষা। হযরত ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ.) যখন আল্লাহর আদেশের সামনে কোরবান হয়ে গেলেন এবং পিতা ইবরাহিম পুত্র ইসমাইল (আ.)-এর গলায় ধারালো ছুরি চালালেন তখনই আল্লাহ বললেন ‘(থামো) হে ইবরাহিম! স্বপ্নকে তো তুমি সত্য করে দেখালে। (সূরা আস-সাফফাত, আয়াত ১০৫) এবং কোরবানি করার জন্য আল্লাহ জান্নাত থেকে দুম্বা পাঠালেন। আর বললেন, ‘এভাবেই আমি মুহসিনিনদের পুরস্কৃত করি’ (সূরা আল-সাফফাত, আয়াত ১০৫)।

হাজীরা তো কোরবানি করবেনই, এর বাইরে যার ওপর জাকাত ফরজ তার ওপর কোরবানি দেয়া অপরিহার্য করেছে ইসলাম। আমরা আজ সুন্দর সুন্দর পশু কোরবানি করি, কিন্তু আল্লাহর কাছে যা পৌঁছবে, তা সুন্দর করার চিন্তা করি না। পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে প্রবৃত্তি নামক অদৃশ্য পশুটির গলায় ছুরি চালাতে হবে আমাদের। তা হলেই আমরা হতে পারব প্রকৃত মাওলার প্রেমিক। আমরা তখন পাব মাওলার সান্নিধ্য। হজের আনুষ্ঠানিকতা শুধু দৈহিক বা আর্থিক পরিপালনের বিষয় নয়। রূহের হেরার ঘরে বাতি জ্বালানোর মোক্ষম এক ইবাদত। আত্মার ঘরকে ভালোবাসার রঙে রাঙানোর পর্ব এটি। তাই হজের দিনটি সতর্কতার সঙ্গে মজনু বেশে যাপন করা জরুরি।

হজ কবুলের পূর্বশর্ত :
হজ কবুল হওয়ার জন্য হালাল সম্পদ থাকা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় তা কবুল হবে না। কেননা নবী সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ পূতঃপবিত্র। তিনি পবিত্র সম্পদ ছাড়া অন্য কিছু কবুল করেন না।’ অপর এক হাদিসে আছে, ‘যখন কোনো ব্যক্তি হালাল সম্পদ নিয়ে হজের উদ্দেশ্যে বের হয়, অতঃপর বাহনে আরোহণ করে বলেন, ‘লাব্বায়িক আলাহুম্মা লাব্বায়িক’ তখন আসমান থেকে জবাব আসে, ‘হজের উদ্দেশ্যে তোমার বের হওয়া ও হজের উদ্দেশ্যে আগমন মঞ্জুর, তোমার সৌভাগ্যের দ্বার উদঘাটিত, তোমার পাথেয় হালাল, তোমার বাহন হালাল, তোমার হজ কবুল ও ত্র“টিমুক্ত ঘোষণা করলাম।’

হজ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে কুরআন ও হাদিস : জীবনে একবার হজ করা ফরজ। মহান আল্লাহ হজ ফরজ হওয়া সম্পর্কে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে (মাসজিদুল হারামে) যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই ঘরের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য। আর যে প্রত্যাখ্যান করবে সে জেনে নিক, নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন’ (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)।

হজ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে মহানবী সা:-এর অনেক হাদিস রয়েছে। কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো-
হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। অতএব তোমরা হজ করো। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! প্রতি বছর? তিনি চুপ করে থাকলেন। তিনবার একই কথা জিজ্ঞেস করার পর রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, আমি হ্যাঁ বললে তা (প্রতি বছর পালন করা) বাধ্যতামূলক হয়ে যেত। অথচ (তা পালনে) তোমরা সক্ষম হতে না’ (মুসলিম)। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমার ইচ্ছা হয় কিছুসংখ্যক লোককে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করি এবং তারা দেখুক ওই সব লোককে যারা হজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও তা আদায় করে না এবং তারা তাদের ওপর জিজিয়া কর আরোপ করুক। কেননা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা হজ আদায় করে না তারা মুসলমান নয়’ (আস-সুনান)। নবী সা: বলেন, ‘হে মানব জাতি! আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন, কাজেই তোমরা হজ আদায় করো’ (মুসলিম)।

হজের ফজিলত : হজের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী সা:-এর অনেক হাদিস রয়েছে। এখানে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো:
হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘একটি ওমরা পরবর্তী ওমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারাস্বরূপ। আর কবুল হজের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা ইমাম মালিক, মুসনাদে আহমদ)
হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টিলাভের) জন্য হজ করে এবং স্ত্রীসম্ভোগ ও পাপাচারে জড়িয়ে পড়ে না, সে তার জন্মদিনের ন্যায় (নিষ্পাপ অবস্থায়) ফিরে আসে’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা একই সাথে পর পর হজ ও ওমরা করো। কেননা হজ ও ওমরা অভাব ও পাপরাশি এমনভাবে দূর করে, যেমন হাঁপরের আগুন লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে। আর কবুল হজের প্রতিদান হচ্ছে একমাত্র জান্নাত’ (তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)। ৪. হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘হজ ও ওমরা আদায়কারীরা হচ্ছেন আল্লাহর মেহমান। তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তিনি তা কবুল করেন এবং ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করে দেন’ (ইবনে মাজাহ)।

হজ না করার পরিণাম:
হজ ফরজ ইবাদত। সামর্থ্যবান মুসলমানদের এ ইবাদত আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। হজ না করার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। মনে রাখতে হবে, হজ না করলে কিংবা অস্বীকার করলে আল্লাহর কোনো ক্ষতি হবে না, ক্ষতি হবে আমাদেরই। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে (মাসজিদুল হারামে) যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশে ওই ঘরের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য। আর যে অস্বীকার করবে, সে জেনে রাখুক, নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন’ (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)।

মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে কোনো অনিবার্য প্রয়োজন অথবা জালিম শাসক অথবা দুরারোগ্য রোগব্যাধি হজ আদায়ে বাধার সৃষ্টি করেনি, সে হজ না করে মারা গেলে চাই ইহুদি হয়ে মরুক অথবা খ্রিষ্টান হয়ে মরুক’ (দারেমি)।

মহিলাদের হজ : হানাফি মাজহাব মতে হজে গমনেচ্ছু মহিলার সাথে তার স্বামী বা মাহরাম আত্মীয় (যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন স্থায়ীভাবে হারাম) থাকা শর্ত। ইমাম মালেক ও ইমাম শাফি আ: বলেন, মহিলার সাথে মাহরাম আত্মীয় থাকা শর্ত নয় বরং শর্ত হচ্ছে, সে তার সতীত্ব রক্ষা করতে পারবে কি না তা নিশ্চিত করা। এ অভিমত অনুযায়ী সে যদি তার সতীত্ব ও সম্ভ্রম বজায় রেখে হজ করার নিশ্চয়তা লাভ করে, তবে মাহরাম আত্মীয় ছাড়াও হজে যেতে পারে।