g বাঞ্ছারামপুরে মাদক ব্যবসায় বাঁধা দেওয়ায় নিরীহ ব্যক্তিকে জুতাপেটা | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শনিবার, ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ১লা আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বাঞ্ছারামপুরে মাদক ব্যবসায় বাঁধা দেওয়ায় নিরীহ ব্যক্তিকে জুতাপেটা

AmaderBrahmanbaria.COM
সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
news-image

---

ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর থেকে : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে মাদক ব্যবসায় বাঁধা দেওয়ায় দুই নিরীহ ব্যক্তিকে শালিস ডেকে জুতাপেটা ও মুচলেকা রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় এক ভুক্তভোগীর বড় ভাই গতকাল মঙ্গলবার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চরমরিচাকান্দি সাধুর বাজারে অপু মিয়ার সভাপতিত্বে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের মরহুম আব্দুল মালেকের ছেলে নাছির উদ্দিন ও তার ছোট ভাই মাইনউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে মরিচাকান্দি বাজারে কনফেকশনারী দোকানের আড়ালে রমরমা মাদক ব্যবসা করে আসছে। নাছির দুই দফায় বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাভোগও করেছে।

সর্বশেষ গত কয়েক মাস আগে বাঞ্ছারামপুর থানায় উপস্থিত হয়ে নাছির উদ্দিন অঙ্গীকার করেন আর কখনও মাদক ব্যবসা করবেন না। কিন্তু গত ২০ রমজানে চরমরিচাকান্দি উত্তরপাড়ায় সিএনজিতে করে মাদকদ্রব্য বিক্রির সময় নাছির উদ্দিন ও তার ভাই মাইনউদ্দিনকে স্থানীয় ২নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ শাহজাহান ও প্রত্যক্ষদর্শীরা ধাওয়া করলে ১৪৪ ক্যান বিয়ার ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায় ওরা। সেই ঘটনার সূত্র ধরে শাহজাহান মেম্বার ও তার পরিবারের সাথে দ্বন্ধ জড়িয়ে আসছে নাছির গংরা।

আরও জানা যায়, ১০ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে নয়টায় চরমরিচাকান্দি গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে প্রতিবন্ধী শাকিল (২৮) উলুকান্দি গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার পথে কানাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছা মাত্র মাদক ব্যবসায়ী নাছির ও তার ভাই মাইনউদ্দিন জোরপূর্বক তাকে বাড়িতে নিয়ে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে শাহজাহান মেম্বারের ছোট ভাই সুজনকে ঘটনার সাথে জড়িয়ে শাকিলের মুখে ভিডিও ধারণ করে। এই ভিডিওচিত্র দিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর চরমরিচাকান্দি সাধুর বাজার স্কুল মাঠে শালিস বৈঠক করে শাকিল ও সুজনকে ৫০টি করে জুতাপেটা এবং ৩০০ টাকার খালি ষ্ট্যাম্পে মুচলেকা রাখেন। এই ঘটনা জানাজানি হলে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় ২নং ওয়ার্ড মেম্বার চরমরিচাকান্দি গ্রামের মোঃ শাহজাহান অভিযোগ করে বলেন, “থানার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমার ভাইকে চুরির মিথ্যা অভিযোগ এনে শালিস করে ৫০টি জুতাপিটার রায় এবং ৩০০ টাকার খালি ষ্ট্যাম্পে সাইন নিছে। মাদক ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমার ভাইকে চুরির কলঙ্ক দিছে। সেইজন্য আজকে (মঙ্গলবার) আমি এই শালিসের বিরুদ্ধে ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করছি। স্যারকে বলেছি অনুগ্রহ করে স্যার যেন ঘটনার আসল বিষয় বের করে।”

এবিষয়ে ভুক্তভোগী সুজন মিয়া বলেন, “আমরার গ্রামের প্রতিবন্ধী শাকিলরে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার সময় রাস্তা থাইকা ধইরা নিয়া বিয়ার বেপারী নাছির ও হেরার ভাইয়েরা বাড়িতে বাইন্দা রাইখা বিচার জমাইয়া আমারেও দোষী করার চেষ্টা করছে নাছিররা। ৩০০ টেহার ষ্ট্যাম্পের মধ্যে সর্দাররা আমার, শাকিল, কানাইনগরের শুক্কুরের এবং এই তিনজনের পরিবারের লোকের সাইন নিছে। আমারে জুতাপিটা রায় দিলেও উপস্থিত জনগণের জিগাইরের (উচ্চস্বরে প্রতিবাদ) কারণে এই রায় তামিল করতে পারছেনা। আমি এই ঘটনার কলঙ্ক মোছন করার জইন্য আজকে আমার শাহজাহান ভাই বিচার চাইয়া ইউএনও স্যারের কাছে দরখাস্ত করছে।”

এদিকে শালিস বৈঠকে উপস্থিত সোনারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ও দুলারামপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, “জুরিবোর্ডের বেশির ভাগ লোক এক পক্ষে থাকায় আমি তেমন কিছু কইতে পারিনাই। আমার কাছে মনে হইল ঘটনাটা কিছুটা সাজানো। নাছির যে বিয়ার টিয়ার বেছে এইডা হগলেই জানে।”

এবিষয়ে শালিস বৈঠকের আরেক সাবেক মেম্বার ও শান্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান মতি বলেন, “যাকে দিয়ে চুরির নাটক সাজাইছে সেই শাকিলই মিটিংএ শেষে আমাদেরকে বলছে মাদক ব্যবসায়ী নাছির ও তার ভাই মাইনউদ্দিন রাস্তা থেকে জোরপূর্বক ধইরা নিয়া বাড়িতে পিটাইয়া মিথ্যা ভাবে চুরির স্বীকার করাইছে এবং তা ভিডিও করে মিটিং দেখাইছে। কিন্তু মিটিংএ শুক্কুর আলী ও শাকিল বলছে, নাছিরদের মাইরধইরের কারণে শাহজাহান মেম্বারের ভাই সুজনের নাম বলেছি কিন্তু সুজনকে আমরা চিনি না। মিটিংএর পরে শাকিল বলছে আমারে নির্যাতন কইরা কইছে মেলে (মিটিং) গিয়া কইবি তুই ও সুজন মিল্লাই আমাদের বাড়িতে চুরি করতে আইছলি। মিটিংএর আগেই যদি এই বক্তব্য শুনতাম তাহলে উল্টা নাছির তার ভাই মাইনউদ্দিনের উপর জুতাপেটার রায় দিতাম।”

এবিষয়ে মাদক ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন বলেন, “আমি এহন আর মাদক ব্যবসা করিনা। আমি বর্তমানে ড্রেজার ও বালুর ব্যবসা করি। আমরার বাড়িতে চুরির প্রস্তুতির সময় শাকিল নামের এক চোররে ধরছিলাম। হেই চুরই অন্যদের নাম কইছে। চোরে চিনে চোরেরে, আমিতো আর শাহজাহান মেম্বারের ভাই সুজনের নাম কই নাই। চোরের মুখদাই কইছে। চোরেরে বাইড়াইয়া স্বীকার করাইছি এইডা ঠিক না। চোরে এমনে এমনেই কইছে। কয়েকজন সর্দার সুজনরে জুতা পিটার রায় দিয়াও টেহা খাইয়া বাছাইয়া দিছে। কেডা বালা আর কেডা খারাপ এইডা এলাকার মানুষই বালা জানে।”

এবিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, “আজকে চরমরিচাকান্দির শাহজাহান মেম্বারের আবেদন পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখব।”

এ জাতীয় আরও খবর