g ‘অতীতে বিচারপতিদের নিয়ে বারবার খেলা হয়েছে’ | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মঙ্গলবার, ১৭ই অক্টোবর, ২০১৭ ইং ২রা কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

‘অতীতে বিচারপতিদের নিয়ে বারবার খেলা হয়েছে’

AmaderBrahmanbaria.COM
অক্টোবর ১৪, ২০১৭
news-image

---

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামীতে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ হয় আমরা সেটাই চাই। জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষিত করে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া আমাদের লক্ষ।

আমাদের সরকারের আমলে যতোগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন, উপ-নির্বাচন হয়েছে, সবগুলোয় খুব স্বচ্ছভাবে ভোট হয়েছে। যে দলকে মানুষ ভোট দিয়েছে, সে দলের প্রার্থীরাই নির্বাচিত হয়েছে। এভাবে যেন আগামী জাতীয় নির্বাচন হয়, তার ব্যবস্থা করাই আমাদের লক্ষ। অতীতে দেশে বিচারপতিদের নিয়ে বারবার খেলা হয়েছে মন্তব্য করে বিভিন্ন শাসনামলের চিত্রও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাথে দলটির উপদেষ্টা পরিষদের এক যৌথসভার সূচনা বক্তব্যে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। সভায় আওয়ামী লীগের প্রায় সকল শীর্ষ নেতাই উপস্থিত ছিলেন। সূচনা বক্তব্য শেষে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়।

আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে জানিয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছি। আমাদেরই প্রস্তাবে আজকের নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স থেকে শুরু করে, ছবিসহ ভোটারতালিকাসহ সবকিছু হয়েছে। সে কারণে মানুষ তার ভোটের অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে স্বাধীনভাবে, নিরপেক্ষভাবে, নিশঙ্কভাবে; সেই ব্যবস্থাটা যাতে আমরা করতে পারি সেটাই আমাদের লক্ষ। সবকিছুতে একটা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা থাকবে সেটাই আমরা চাই।

টানা দুই মেয়াদের সরকারপ্রধান বলেন, আজকে আমরা সরকারে আছি, প্রত্যেকটা উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে। অনেক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করেছে। যেমন সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলি। চারটা সিটিতেই বিএনপি জয়লাভ করলো। আমরা তো বাধা দিইনি। আমরা তো ফল বদলায়নি, মানুষের ওপর জুলুম করি নি। যার যার স্বাধীনভাবে যে যাকে চাইবে তাকেই পছন্দ করবে। ঠিক সেই কাজটাই আমরা করতে চাই।

রাজনৈতিক দলগুলো সাথে নির্বাচন কমিশনের চলমান সংলাপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন সকল দলের সাথে আলোচনা করবে। আমরা নিশ্চয়ই সেখানে যাবো। সেখানকার প্রস্তুতির জন্য ইতোমধ্যে বেশ কিছু খসড়া করা হয়েছে। বৈঠকে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে এবং সকলের মতামত নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনে কে কি বলবো, সে বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

বিভিন্ন সরকারের আমলে বিচারপতিদের নিয়ে বারবার খেলা হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের মনে আছে যে, উচ্চ আদালতের বিচারকদের বয়স আমাদের সংবিধানে ৬২ ছিল, সেটাকে ৬৫ করা হয়েছিল। এরপর আবার সেটাকে কমিয়ে দিয়ে ৬৫ থেকে ৬২ করে দিয়ে বিচারক বিদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। বারবার এ ধরণের খেলা হয়েছে। বিএনপির নেতা জিয়াউর রহমান এ ঘটনা ঘটায়। এজলাসে প্রধান বিচারপতি বসে আছেন। পত্রপাঠ তাকে বিদায় দেওয়া হলো। তিনি জানেনও না, তিনি নাই। একজন বিচারপতিকে রাষ্ট্রদূতের চাকরি দিয়ে দেশের বাইরে পাঠানো হলো।

তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয়, ১৯৯৬ সালে আমরা সরকারে আসার পর যতজন বিচারক নিয়োগ দিয়েছিলাম, একই দিনে ১০ জন বিচারককে পত্রপাঠ বিদায় করে দেওয়া হয়। এরপরে আবার আবার আরো ৬ জনকে, তারপর আরো ৫ জনকে এভাবে আমাদের নিয়োগকৃত যারা সবাইকে বিদায় দিয়ে দেওয়া হয়, অবশ্য পরে রিট করে কয়েকজন টিকে যায়।

বিএনপি আমলের কথা তুলে ধরে বলেন, পরবর্তীতে আবার দেখলাম, প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে দেওয়া হলো, ৬৫ থেকে ৬৭। যাতে করে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে যেটা করা হয়েছিল, তার উপদেষ্টা, যেহেতু যিনি সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তিনি হবে সেটার উপদেষ্টা। সেজন্য বিএনপি তাদের দলের আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক কে এম হাসান তাকে বানালো। তার বয়সও বাড়িয়ে দিয়ে তাকে শেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি করার জন্য একটা চক্রান্ত করলো, যাতে তিনি প্রধান উপদেষ্টা হয়ে তাদেরকে ভোট চুরির সুযোগ করে দেয়। এবং এক কোটি ২৩ লক্ষ ভুয়া ভোটার করা হয়।

সেনা সমর্থিত সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের উদাহরণ টেনেও প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন আমরা দেখলাম, একজন বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন ডেকে নিয়ে এক কাপ চা খাইয়ে বললেন, আপনি পদত্যাগ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশাসনেও একই অবস্থা ছিল। যা হুকুম দিবে তাই করতে হবে, এই ধরণের একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। আর জাতীয় সংসদে ভোট কারচুপির মাধ্যমে তামাশা করা হতো। সবথেকে দুর্ভাগ্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী উপদেষ্টা করে সংসদে বসানো হলো। শুধু তাই না, যারা জাতির পিতার হত্যাকারী খুনী, তাদেরকেও সংসদে বসানো হলো। আমাদের লাখো শহীদের রক্ত রঞ্জিত পতাকা তুলে দেওয়া হয় যুদ্ধাপরাধীদের হাতে। সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, সেটা বন্ধ করে দিয়ে, যারা সাজাপ্রাপ্ত তাদেরকেও মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানো হয়।

১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হওয়ার পাশাপাশি জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয় বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বলেন, সেই থেকেই জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়। আওয়ামী লীগ ছাড়া যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই এটা করেছে। হ্যা না ভোট দিয়ে জিয়াউর রহমান শুরু করলো অবৈধ ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া এরপর জেনারেল এরশাদ সেই এসে একই কা- ঘটালো। তারপর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেও গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে। মূলত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানুষ বুঝতে পারে ভোটটা জনগণের অধিকার।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর নির্বাচনকে কিভাবে স্বচছ করা যায়, জনগণ কিভাবে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে। তাদের ভোটের অধিকার যাতে প্রয়োগ শুরু করে, আমরা সেই আন্দোলন শুরু করি। আমরাই ভোট ও ভাতের অধিকার নিয়ে আন্দোলন শুরু করি, আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো…! অর্থাৎ মানুষকে সচেতন করা, ভোটের অধিকারটা তাদের অধিকার তারা ভোট দেবে। আওয়ামী লীগ সবসময় এটাই চেয়েছে।

বিএনপি শাসনামলের ২০০১ এর সংসদ নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকাতে ভোটের দিন নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে আর্মির গাড়িতে চড়িয়ে তাকে বেধে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে নিয়ে নিয়ে দেখানো হয়েছিল, যে আওয়ামী লীগে ভোট দিলে কী দশা হবে। আমাদের নেতাকর্মীরা কেউ ভোটের আগের দিন পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে পারে নি। কেউ ধানক্ষেতে, কেউ জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে নির্বাচনের জন্য কাজ করেছে। এরকম খেলা হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিজের নামে মামলার স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছিল, অনেকের নামে মামলা হলে দেশ ছেড়ে পালায়, আপনি আবার দেশে যাচ্ছেন কেনো? আমি বলেছিলাম, আমার ভেতর এটুকু আত্মবিশ্বাস ছিল, আমি কোনো অন্যায় করি নি। তাই আমার নামে ওয়ারেন্ট দিলে আমি লুকিয়ে থাকবো না। আমরা কিন্তু জীবনের ঝুকি নিয়ে আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। যতোক্ষণ শ্বাস আছে, দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে যাবো বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।