বুধবার, ১৪ই নভেম্বর, ২০১৮ ইং ৩০শে কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়াকে তো কনডেম সেলে রাখা উচিত : শেখ সেলিম

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাংলাদেশের কাছে ফেরৎ পাঠানোর জন্য বৃটেনের কাছে দাবি জানিয়েছেন সংসদে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার জেল হওয়ায় ঘটনায় ব্রিটেনে বাংলাদেশী হাইকমিশনে হামলা হলো কিভাবে, জানতে চান। তিনি বলেন, কিভাবে সন্ত্রাসীরা হাইকমিশনে ঢুকে বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনার ছবিসহ হাইকমিশন ভাংচুর করলো, তখন ব্রিটেনের নিরাপত্তা রক্ষীরা কি করছিল? তারা কেন বাধা দিল না- এর জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে কৈফিয়ত চান তিনি।

জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ দাবি করেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, উনারা গরিবের টাকা চুষে বাইরে আরাম-আয়েশ করবে, জুয়া খেলে আরাম-আয়েশ করবে এটা হতে পারে না। হতে দেয়া হবে না। দুর্নীতি মালায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার ডিভিশন পাওয়া নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে শেখ সেলিম বলেন, উনারে এত সুন্দর একটা বাড়ি দেওয়া হয়েছে, গোটা জেলাখানাই তো উনারে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কত আরাম-আয়েশে আছে। আর বলে কি উনারে ডিভিশন দেওয়া হয় নাই, অমুক দেওয়া হয় নাই, তমুক দেওয়া হয় নাই। উনাকে কি পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁও এর রাখতে হবে? চুরি করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। উনাকে তো কনডেম সেলে রাখা উচিত। উনার তো কাজ করা উচিত।

ব্রিটিশ সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে শেখ সেলিম বলেন, সেদিন বাংলাদেশ হাই কমিশনের ভেতরে ঢুকে যে হামলা করলো আপনারা কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? সেদিন সন্ত্রাসীরা, জঙ্গিরা কিভাবে হাই কমিশনে ঢুকলো? আজ যদি আপনাদের হাই কমিশনে ঢুকতো সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিতাম। আপনার কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? এটা আপনাদের ব্যর্থতা। এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। সে একজন সন্ত্রাসী, জঙ্গি সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আপনাদের ওখানে বসে অপকর্ম করবে, আর আপনারা দেখবেন না, এটা হয় না। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিন। আর সে যেহেতু ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি তাই তাকে এভাবে বিচরণ করতে দিয়ে আপনারা আপনাদের দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছেন। আপনাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। তাকে আমাদের সরকারের কাছে হস্তান্তর করুন। এই অপকর্ম থেকে আপনারও রেহাই পান।

খালেদা জিয়ার রায়ের পর লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, তারেকের নিদের্শে কিছু সন্ত্রাসী লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে হামলা করে ভাংচুর করে, এমনকি বঙ্গবন্ধুর ছবি পর্যন্ত সেখানে ভাংচুর করে। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানে স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু না হলে এই স্বাধীন দেশের নাগরিক হতে পারতাম না। সেই বঙ্গবন্ধুরে কারা আক্রমণ করতে পারে? আক্রমণ করতে পারে পাকিস্তানি এজেন্ট স্বাধীনতা বিরোধী ’৭১ ও ’৭৫ এর পরাজিত শক্তিদের এজেন্টরাই।

শেখ সেলিম বলেন, হাওয়া ভবনে বসেই এই তারেক জিয়া জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নিঃশ্বেষ করে দিতেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। হামলার পর খুনিদের বিদেশে পালানোর সুযোগ দিয়ে প্রমাণ হয়েছে এই গ্রেনেড হামলার সঙ্গে খালেদা জিয়াও জড়িত ছিলেন। এজন্য সরকারকে অনুরোধ করবো যদি সুযোগ থাকে খালেদা জিয়াকে এক নম্বর আসামি করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার তরান্বিত করতে। তিনি বলেন, তারেক রহমান আগের এক মামলা ৭ বছর সাজা হয়েছে, এবার হয়েছে ১০ বছর। আর সেই তারেকের নির্দেশে লন্ডনে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সৌদি আরব সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। সেখানেও পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিপুল অংকের টাকা পাচারের যে তদন্ত শুরু করেছে, তাতে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার নাম উঠে এসেছে। সেখানে ১২শ’ কোটি ডলার ধরা পড়েছে। সৌদি সরকার তাদের বিপুল পরিমাণ পাচারকৃত টাকাও বাজেয়াপ্ত করেছে। বেলজিয়াম, কাতার, মালয়েশিয়া ও দুবাইতেও জিয়া পরিবারের বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। শুধু দেশেই নয়, সারা বিশ্বেই খালেদা জিয়ার পরিবার দুর্নীতিবাজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, এরা দেশে গণতন্ত্র থাকুক তা চায় না। পদ্মা সেতু নিয়েও তারা ষড়যন্ত্র করেছিল, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হেয় করতে। সকল ষড়যন্ত্র সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থায়নেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করছেন। দেশবাসী জানতে চায় সুশীল সমাজের নামে এরা কারা? এদের টাকার উৎস কী তা তদন্ত করে বের করা উচিত। বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, খুনি-দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে কীসের সংলাপ? যারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে কীসের আলোচনা? বরং উচিত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা করে বিচার করা। বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও সেভাবে হবে। দেশে সংবিধানবিরোধী কোন স্বপ্নের সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না বলেও জানান তিনি।