রবিবার, ১লা জুলাই, ২০১৮ ইং ১৭ই আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীর মর্যাদা পেতে থানায় অবস্থান লাকীর

ফেনী প্রতিনিধি: স্ত্রীর মর্যাদা পেতে ৩ দিন যাবত সোনাগাজী মডেল থানায় অবস্থান করছে নরসিংদীর লাকী আক্তার। সে নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার কামারচর গ্রামের মৃত কবির আহাম্মদের মেয়ে।

গত ৩ দিন কখনো ডিউটি অফিসারের কক্ষে কখনো থানার অন্য কক্ষে বসে থেকে স্বামী আসার অপেক্ষায় নির্ঘুম রাত পার করছে সে। সোনাগাজী মডেল থানা কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়ে পড়েছে মহা ঝামেলায়। ৩ দিন ধরে পুলিশ তাদের ক্যান্টিনের রান্না করা খাবার তার জন্য সরবরাহ করছে। স্বামী রাসেল কে কৌশলে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে শ্বাশুড়ি ও খালা শ্বাশুড়ি তাকে নির্যাতন শুরু করলে সে গত ২৫ জুন সোমবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যের সহযোগীয় আইনী সহায়তা পেতে সোনাগাজী থানায় আসে। পুলিশ তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে শ্বশুর শাহজাহান ও শ্বাশুড়ি মৌচেনা বেগম কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

থানায় অবস্থানরত লাকি আক্তারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালে নভেম্বর মাসে হাসপাতালের সেবিকার ভিসায় লাকি ওমানে যায়। ওমানের রাজধানী মস্কেট হাসপাতালে কাজ করার সময় পূর্ব থেকে ওমানে অবস্থানরত সোনাগাজীর চরমজলিশপুর ইউপির চরগোপালগাঁ গ্রামের শাহজানের ছেলে রাসেলের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে তাদের সম্পর্ক প্রণয়ে রুপ নেয়।

লাকী দাবি করে ২০১৭ সালের মে মাসে প্রবাসে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশীর উপস্থিতিতে শরিয়া মোতাবেক কলেমা পড়ে তাদের বিয়ে হয়। উভয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাসের একপর্যায়ে সে অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়লে আইনী জটিলতা এড়াতে উভয়ের সম্মতিতে গর্ভে থাকা ৭ মাসের সন্তান নষ্ট করতে বাধ্য হয়। ওই সময় তার জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে বলে জানায় সে।

দেশে নতুন করে সংসার গড়ার আশায় গত ১৩, ১৪ রমজানে লাকি ও রাসেল ওমানের ভিসা বাতিল করে দেশে ফিরে আসে। দেশে ফিরে এসে তারা আত্মীয় স্বজনের বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করতে থাকে। গত ০৩ জুন লাকী স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে তাকে বাড়ীতে তুলে নেওয়ার জন্য রাসেল কে অনুরোধ করলে সে বাড়ীতে নিতে রাজী হয়। তার কথামতে লাকি ২৪ জুন নরসিংদীর বাড়ী থেকে রওয়ানা হয়ে রাতে রাসেলের বাড়ীতে উঠে। লাকীর দাবি মতে রাসেল বাড়ীতে তাকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের কে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী স্ত্রীর মর্যাদা দিতে তার পিতা মাতাকে অনুরোধ জানায়। কিন্তু তার পিতা মাতা কৌশলে রাসেল কে বাড়ী থেকে বের করে দিয়ে তারা নির্যাতন করে তাকে গভীর রাতে বাড়ী থেকে বের করে দেয়।

আরও : ২৫ বছরে যেসব টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হয়েছে আর্জেন্টিনা

বিয়ের প্রমাণ হিসেবে লাকী প্রতিবেদককে তার হেফাজতে থাকা ছবি, অডিও, ভিডিও প্রদর্শন করে। রাসেলও তাদের বিয়ের কথা প্রতিবেদকের নিকট স্বীকার করেছে। বিয়ে হলে কেন তাকে স্ত্রী মর্যদা না দিয়ে পালিয়ে রয়েছেন প্রশ্নের জবাবে এড়িয়ে গিয়ে সে দ্রুত চলে যায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলায়েত হোসেন জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে সে রাতে ওই বাড়ীতে যাওয়ার সময় বাড়ীর সামনের রাস্তায় লাকীকে একা বৃষ্টির মধ্যে কান্নারত অবস্থায় দেখতে পেয়ে রাসেলের পিতা মাতাকে মেয়েটাকে ঘরে আশ্রয় দেয়ার অনুরোধ জানালেও তারা রাজী না হওয়াতে তাকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে যায়। সকালে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহায়তায় মেয়েটাকে থানায় পৌঁছে দেয়া হয়।

প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত লাকীর পরিবারের লোকজন ফেনীতে পৌঁছলেও রাসেল থানায় যায়নি। এমনকি তার ব্যবহ্নত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে সরকার দলীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি রাসেলের পক্ষ হয়ে মেয়েটাকে খারাপ আখ্যা দিয়ে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে। সর্বশেষ বিকাল সাড়ে ৪টার সময় লাকীর সাথে কথা হলে সে জানায়, রাসেল যদি তাকে স্ত্রীর মর্যদা দিয়ে ঘরে তুলে না নেয় সে থানায় আত্মহত্যা করবে।

মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন পূর্বপশ্চিমকে জানিয়েছে, মানবিক দিক বিবেচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। মেয়েটির পরিবার কে ফোনে বৃহস্পতিবার বিকালে সোনাগাজী থানায় আসতে বলা হয়েছে এবং রাসেলকেও থানায় থাকতে বলা হয়েছে। উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে। যদি সমাধান না হয় তবে আইন অনুযায়ী পরবর্তী প্রদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email