মঙ্গলবার, ১৭ই জুলাই, ২০১৮ ইং ২রা শ্রাবণ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

বিএনপির সঙ্গে অনেক বড় ‘গেম’ খেলছে জামায়াত!

ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে পুঁজি করে রাজনীতিতে অনেক বড় ‘গেম’ খেলতে চায় জামায়াত। এ কারণেই জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিলেটে প্রার্থী দিয়েছে দলটি। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন এবং দলীয় প্রতীক হারালেও ভোটের মাঠে শক্তি দেখাতে চায় তারা। সিলেটে নৌকা-ধানের শীষের বিরুদ্ধে লড়াইকেই সেই শক্তি প্রদর্শনের মোক্ষম প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছে দলটি। আর জোটের শরিকরা তাদের এই উদ্যোগকে বড় ‘গেম’ হিসেবে দেখছে।

জোটের একাধিক শরিক দলের শীর্ষ নেতার মতে, অনেক বড় পলিটিক্যাল ‘গেম’খেলছে জামায়াত— যা তাদের কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। জোটের ভেতরে এক কথা, বাইরে আরেক কথা বলারও অভিযোগ উঠেছে জামায়াতের বিরুদ্ধে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষণগুলো বলছে, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিক্ত অভিজ্ঞতার পরেও রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের অংশ নেওয়ার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিলো নৌকার বিরুদ্ধে ধানের শীষের লড়াইয়ের ‘মহড়া’টা করে নেওয়া। এই লক্ষ্যে একমতও ছিল ২০ দলীয় জোটের সব শরিক। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনে নৌকা-ধানের শীষের দ্বৈরথ দেখে কৌশল ঠিক করতে চেয়েছিল জোট। কিন্তু সিলেট সিটি কর্পোরেশনে জোটের সাথে থেকেও আলাদা প্রার্থী দিয়ে সে লক্ষ্য অর্জনে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করল জামায়াত।

সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুরোধ উপেক্ষা করতেও দ্বিধা করেনি জামায়াত। সিলেটে জামায়াতের প্রার্থিতা ঘোষণা ২০-দলকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে তারা। সিলেট থেকে পাওয়া সবশেষ তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশনে লড়াইয়ের জন্য মাঠে রয়েছেন স্থানীয় জামায়াতের আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

বিষয়টি সুরাহা করতে গত ৪ জুলাই গুলশানে জামায়াতসহ ২০ দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম।

বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে জানান, তিন সিটিতে একক প্রার্থী থাকবে ২০ দলের। জোট মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে সবাই। এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ২০-দল।

আনুষ্ঠানিক এ ঘোষণার ঘণ্টা খানেক পর মাওলানা আব্দুল হালিম গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে সাফ জানিয়ে দেন— এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বৈঠকে। সিলেটে তাদের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের রয়েছেন। জোটের সমন্বয়কের বক্তব্যে তিনি বিস্মিত হয়েছেন বলেও ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করেন মাওলানা হালিম।

এদিকে সূত্র বলছে, নজরুল ইসলাম খান বৈঠকের যে প্রস্তাবনা ও সিদ্ধান্তগুলো লিখিত আকারে গণমাধ্যমকে জানান, সেটা আব্দুল হালিমের উপস্থিতিতেই ড্রাফট করা হয়। এবং জোটের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই সেটা সাংবাদিকদের সামনে পড়ে শোনান নজরুল ইসলাম খান। পাশে বসে তার সপক্ষে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও।

এ প্রসঙ্গে জোটের আরেক শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বলেন, ‘জামায়াত নেতার উপস্থিতিতেই ওই ড্রাফট তৈরি করা হয় এবং সেটি সবার সামনে পড়ে শোনানো হয়। সুতরাং জোটের সমন্বয়ক অসত্য বক্তব্য মিডিয়াতে তুলে ধরেছেন- এমনটি বলা যাবে না।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ রকম একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার পরও জামায়াত নেতার পাল্টা বিবৃতি মোটেই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের বহিঃপ্রকাশ নয়। এটা জামায়াতের হাইকমান্ডের নির্দেশেই হয়েছে এবং এর পেছনে বড় ধরনের ‘পলিটিক্যাল গেম’ রয়েছে জামায়াতের!

হাইকোর্টের নির্দেশে দলের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় গত তিন বছর দলীয় ব্যানার ও প্রতীকে কোনো নির্বাচন করতে পারেনি জামায়াত। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকেই সমর্থন দিয়েছে তারা।

কিন্তু জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এবার নিজেদের সাংগঠনিক অবস্থা এবং ভোটারদের পালস বুঝতে চায় জামায়াত। পাশাপাশি বিএনপিকে একটা বার্তা দিয়ে রাখতে চায়- শীর্ষ নেতাদের সাজা, কারাবাস, আত্মগোপন বা অনুপস্থিতির পরও ভোটের মাঠে দল হিসেবে জামায়াতকে গুরুত্ব দিতে হবে। এখনো ফুরিয়ে যায়নি জামায়াত।

তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বেশিরভাগ দলই মনে করে, নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীকহীন জামায়াত স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচন করে খুব একটা কিছু করতে পারবে না। বরং দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক ‘বন্ধু’ বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, ‘বিএনপি ছাড়া জামায়াতের কী-ই বা আছে? সেদিন জামায়াত নেতা যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে আমরা বিব্রত হয়েছি। যে বিষয়টি টেবিলে বসে সেটেল করা যেত, সেটা নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল?’

বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান বলেন, ‘আব্দুল হালিমের ওই বিবৃতি নিশ্চয়-ই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হয়নি; এটা দলীয় সিদ্ধান্তে হয়েছে। এবং এর পেছনে সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা আছে জামায়াতের।’-সারাবাংলা